এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : আপনাকে কি টানা বসে কাজ করতে হয়? ন'-দশ ঘণ্টার অফিস আওয়ার্সে বার দুয়েকের বেশি থেকে চেয়ার ছেড়ে ওঠার জো নেই? লাঞ্চও সারেন চেয়ারে বসে?
তা হলে আর সময় নষ্ট করবেন না৷ শরীরকে রোগভোগ মুক্ত রাখতে এখনই ঘাম ঝরাতে শুরু করে দিন৷ আর এমন খাবার বাছুন ও পরিমাণে ততটাই খান, যাতে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে বা কমাতে সাহায্য করে৷ না-হলে এ বার ডায়বেটিসের পরবর্তী শিকার হয়তো আপনি৷ যেমনটা ক'দিন আগেই আপনার কোনও না কোনও বন্ধু-সহকর্মী হয়েছেন৷
এমন পরামর্শ দিচ্ছেন দেশের তাবত্ এন্ডোক্রিন বিশেষজ্ঞ আর ডায়াবেটোলজিস্টরা৷ কারণ, বিশেষজ্ঞদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করছে মধুমেহ বা ডায়বেটিস৷ এক দশক আগের কথা, বিশ্বের সেরা এন্ডোক্রিন বিশেষজ্ঞরা হিসেব কষে বলেছিলেন, ২০২৫-এর শেষ নাগাদ বিশ্বের ৩০ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হবেন৷ কিন্তু সেই হিসেব ছাড়িয়ে এখনই ৩০ কোটির বেশি (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী) মানুষের শরীরে বাসা বেধেছে এই রোগ৷ পিছিয়ে নেই ভারত৷ প্রায় ৬৮ লক্ষ মধুমেহ আক্রান্ত নাগরিককে নিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত এখন বিশ্বে দ্বিতীয়৷ বাংলাদেশ কী আর পিছিয়ে থাকে!
ইন্টিগ্রেটেড ডায়াবিটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিন অ্যাকাডেমির সভাপতি বিশিষ্ট এন্ডোক্রিন বিশেষজ্ঞ দেবাশিস মাজির কথায়, 'অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ডায়াবিটিসের হার অত্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ এখন বাচ্চারাও টাইপ টু ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হচ্ছে৷'
কেন ডায়বেটিস বাড়ছে? এন্ডোক্রিন বিশেষজ্ঞ অভিজিত্ চন্দের কথায়, 'এর পিছনে রয়েছে জীবনশৈলি৷ আজকাল একটা বাসস্টপ পেরোতেও লোকে বাসে ওঠেন৷ বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের দেখুন, হাঁটতে বড্ড অনীহা৷ ১ কিলোমিটার যেতেও অটোয় চাপছে৷ দোতলায় উঠতেও লিফট চাপছে৷ আর খাবার? হাতে-গড়া রুটির স্বাদ ভুলে গিয়েছেন৷ পিত্জা-বার্গার কোল্ড-ড্রিঙ্ক ছাড়া কিছু বোঝেন না৷' এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা৷ ধূমপান, মদ্যপানের নেশা থাকলে স্থলতার কারণে সহজেই বাসা বাধছে ডায়বেটিস৷
ওবেসিটির সঙ্গে সঙ্গেই শরীরে বাসা বাঁধছে ডায়বেটিস৷ আর ডায়বেটিস মানেই আরও পাঁচটা রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়া৷ যে তালিকায় রয়েছে কিডনি, হার্টের মতো অসুখ৷ কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ মনোতোষ পাঁজার কথায়, 'একজন মধুমেহ আক্রান্তের হার্ট অ্যাটাক ও তাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা সাধারণের চেয়ে ৮-১০ গুণ বেশি৷ শুধু তাই নয়, যত রোগী রেনাল ফেলিওর হয়ে মারা যান, তাদের একটা বড় অংশ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত৷'
শুধু এটুকুই নয়৷ ডায়বেটিসের অন্যতম বিপদ হল ফুট আলসার ও গ্যাঙ্গরিন৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর যত মানুষের পা কেটে বাদ দিতে হয় (আঘাত ও ঘা জনিত কারণে) তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের পা বাদ যাওয়ার কারণ ডায়বেটিস৷ অভিজিতবাবুর কথায়, 'ডায়বেটিসের কারণে রোগীরা অনেক সময়েই নিউরোপ্যাথিতে (হাত পায়ের সার চলে যাওয়া) আক্রান্ত হন৷ কারণ, পেরিফেরাল নার্ভের ওপর আঘাত করে এই রোগ৷' ডেকে আনে অন্ধত্বও৷ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি দত্তর কথায়, 'দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত মধুমেহ রোগে আক্রান্ত থাকলে ডায়বেটিস রেটিনোপ্যাথি রোগ হয়৷ ঠিক সময়ে চিকিত্সা না-হলে এই রোগে অন্ধত্ব নেমে আসাও অসম্ভব নয়৷'
টাইপ-টু ডায়বেটিস (৯০ শতাংশ মানুষ এই প্রকার ডায়াবিটিসেই আক্রান্ত হন) উপসর্গ বিহীন৷ তা হলে কীভাবে ঠেকানো যাবে এই রোগ? চিকিত্সকেরা বলছেন, তিনটি জিনিস মাথায় রাখতে৷ এক, ভারসাম্যযুক্ত খাবার খেতে হবে৷ নজর রাখতে হবে মেদ যেন বাসা না বাঁধে শরীরে৷ দুই, নিয়মিত যোগব্যায়াম করতে হবে৷ তিন, ২৫ বছরের পর থেকেই নিয়মিত মেডিক্যাল চেক-আপ করাতে হবে৷-ইন্ডিয়াটাইমস
তাই জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনের সূত্র ধরে বলা যেতেই পারে, লিফট ছাড়ুন সিঁড়ি ধরুন৷