এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : মাটি থেকে প্রায় ৬০০ ফুট ওপরে দু'টি টাওয়ারের মাঝে বাঁধা একটি তার (tightrope)। আর সেই তারের ওপর দিয়েই চোখে কালো কাপড় বেঁধে হেঁটে চলেছেন এক ব্যক্তি। এই দৃশ্য কল্পনা করলেই হাড়ে কাঁপুনি ধরবে সক্কলের। এই সাহস থুড়ি দুঃসাহস দেখানোর কথা ভাববেনও না কেউ। কিন্তু ব্যতিক্রমও আছে। তাই তো এমনই রক্ত জল/পানি করা দৃশ্য দেখল বিশ্ব। একটি নয়, বরং একই দিনে ২টি স্কাইওয়াকের সাক্ষী থাকলেন বিশ্ববাসী।
কে এই ডেয়ারডেভিল?
ইনি শিকাগোর বাসিন্দা নিক ওয়ালেন্ডা। 'আকাশপথ'-এ হাঁটা তার 'পারিবারিক ব্যবসা' বলা যেতে পারে। কারণ তার প্রপিতামহও স্কাইওয়াক করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। বলে রাখি, এই টাইটরোপ স্কাইওয়াকের জন্য নিজের নিরাপত্তার খাতিরে কোনো ব্যবস্থাই নেননি নিক।
রবিবারের রাত। ৩৫ বছরের নিকের এই কাণ্ড দেখতে শিকাগোয় মেরিনা সিটি ওয়েস্ট টাওয়ারের নীচে জড়ো হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। সবার চোখ আকাশের দিকে। কারণ, আকাশ চিরে এক টাওয়ার থেকে অন্য টাওয়ারে যাবেন নিক। নিকের এই দুঃসাহসিক কাণ্ড লাইভ টেলিকাস্ট করেছিল ডিসকভারি।
প্রথমে মেরিনা টাওয়ার ওয়েস্ট (উচ্চতা ৫৮৮ ফুট) থেকে লিও বারনেট টাওয়ার (৬৭১ ফুট)-এর মাঝে বাঁধা তারে হেঁটে যান নিক। সে সময় চোখ খোলা ছিল তার। সাড়ে ৬ মিনিটে যাত্রা শেষ করেন তিনি। এই দুই টাওয়ারের মাঝের ফারাক ৪৫৪ ফুট (১৩৮ মিটার)। আর মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে নদী। যাত্রা শেষ করে নিক জানালেন, 'অসাধারণ অনুভূতি হচ্ছিল'। এ-ও বলেন, তীব্র হাওয়া এবং প্রত্যাশিত অ্যাঙ্গেলে টাইটরোপটি থাকায় তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছন। নিক ১৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে প্র্যাক্টিস করেছিলেন, কিন্তু ওই তারটি আসলে ১৯ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ছিল।
এই কেল্লা ফতে করার পর, দ্বিতীয় স্টান্ট দেখালেন নিক। মেরিনা সিটি ইস্ট এবং ওয়েস্টের মাঝে বাঁধা তারে হাঁটলেন। তবে এবার কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা ছিল তার। আগেরটির মতো এ ক্ষেত্রেও হারনেসের সাহায্যে নিজেকে সুরক্ষিত করেননি। হেঁটে ৯৪ ফুট (২৮ মিটার) রাস্তা পার করলেন তিনি। এ ক্ষেত্রে যাত্রা শেষ করতে নিকের এক মিনিট বেশি সময় লাগে।
সেই রাতে তার কীর্তি দেখে গলা ফাটাচ্ছিলেন অনেকে। সকলের আওয়াজই পৌঁছেছিল তার কানে। তার ভাষায়, 'সে কী অসাধারণ চিৎকার'। নিক এ-ও বলেন, 'আমি শিকাগোকে ভালোবাসি এবং অবশ্যই শিকাগোও আমাকে ভালোবাসে।'
১০ সেকেন্ড দেরিতে নিকের এই স্টান্ট ব্রডকাস্ট করেছিল ডিসকভারি। কোনো অঘটন ঘটলে, তা যাতে বাদ দেওয়া যায়, তাই এই ব্যবস্থা। আবার মেরিনা সিটির বাসিন্দাদের আগেভাগেই সতর্ক করা হয়েছিল, স্টান্টের সময় কেউ যেন তার দিকে লেজার পয়েন্টার, ক্যামেরা ফ্ল্যাশ বা ড্রোন না-ছাড়েন।
এর আগে তার ২টি টাইটরোপ স্টান্ট টেলিকাস্ট করা হয়েছিল। ২০১২-এ নায়াগ্রা জলপ্রপাতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে গিয়েছিলেন। আবার ২০১৩ সালে লিটল কলোরাডোর জর্জ নদী পার করেছিলেন। সাঁতরে নয়, বরং এ ভাবেই তারের ওপর দিয়ে হেঁটে। এই দুটি পারফরম্যান্সের প্রত্যেকটি ১৩ মিলিয়ন দর্শক দেখেছিলেন। আর ২০১৪ সালে মেরিনা সিটিতে নিজের স্টান্ট দেখালনে নিক।
স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, এর পর কী? নিক জানিয়েছেন, তিনি ১২০০ ফুট লম্বা টাইটরোপ ওয়াক করতে চান। এই টাইটরোপ ওয়াকেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন তার প্রপিতামহ। জর্জিয়ায় সেই স্টান্টে দু'টি হেডস্ট্যান্ডও করেছিলেন নিকের প্রপিতামহ কার্ল ওয়ালেন্ডা।
নিক জানিয়েছেন, 'আমি তারে হেডস্ট্যান্ড করার সামান্য প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কিন্তু সর্বসমক্ষে কখনো করিনি। কারণ আমার ইচ্ছা, প্রপিতামহের সঙ্গে আমি এই স্টান্ট করব।'
কিন্তু তা কী ভাবে সম্ভব? কারণ নিকের জন্মের এক বছর আগে পুয়র্ত রিকোয় একটি টাইটরোপ স্টান্ট দেখাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন তার প্রপিতামহ কার্ল ওয়ালেন্ডা। সে সময় কার্লের বয়স ছিল ৭৩ বছর।
নিক জানিয়েছেন, তিনি কার্ল ওয়ালেন্ডার ভিনটেজ ফিল্ম ব্যবহার করে একটি ইলিউশন সৃষ্টি করবেন, যাতে মনে হবে তারা দু'জনে (নিক এবং তার প্রপিতামহ) তারের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।
'প্রপিতামহের সঙ্গে তারের ওপর হাঁটাই আমার স্বপ্ন', জানান এই স্কাইওয়াকার ডেয়ারডেভিল।
ভিডিও লিংক দু’টি...