এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ছুটি অথবা একটু অবসর পেলেই সেন্টমার্টিনে বেড়াতে যাওয়ার শখ অনেকের রয়েছে, অনেকেই ইতোমধ্যে গেছেন অথবা অনেকেই যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ভবিষ্যতে। তবে সেন্টমার্টিনে রয়েছে প্রাকৃতিক কিছু মৃত্যুফাঁদ যা প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে সেখানে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের জীবন।
সেন্টমার্টিন মূলত একটি প্রবাল দ্বীপ, বাংলাদেশের এক মাত্র প্রবাল দ্বীপ হচ্ছে সেন্টমার্টিন। ফলে এর অপরূপ প্রাকৃতিক রূপ এবং নীল জলরাশির খেলা দেখতে দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন। বেড়াতে এসে অনেকেই সাগর জ্বলে নামার লোভ সামলাতে পারেন না। ফলে নেমে পড়েন সমুদ্রের তীর ধরে। তবে যেহেতু সেন্টমার্টিন হচ্ছে একটি প্রবাল দ্বীপ এবং এর চার পাশে রয়েছে অসংখ্য কোরাল, যা প্রাকৃতিক ভাবে অনেকটাই মূল্যবান। ফলে এসব কোরার চুরি করে সরানো হচ্ছে নিয়মিত, এতে করে ঐ সব স্থানে পানির নিচে সৃষ্টি হচ্ছে গর্ত। এছাড়াও সেন্টমার্টিনে প্রাকৃতিক ভাবে রয়েছে ভয়ংকর এক মৃত্যুকূপ যা একটু অসাবধানতায় কেড়ে নিবে আপনার প্রান। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত।
সেন্টমার্টিনে ঘুরতে আসা পর্যটকরা প্রথমে জাহাজে করে এসে থামেন সেন্টমার্টিন ফেরি লাইনে, সেখানেই পর্যটকদের নামিয়ে দেয়া হয়। এরপর সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ব্রিজটা পার হয়ে নামতে হয় সেন্টমার্টিনের মূল ভূখণ্ডে। হাতের ডানদিকে যে সৈকত দেখতে পাওয়া যায় তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পর্যটকরা এই বিচ ধরে হাঁটেন এবং ব্রিজের গোড়ার দিক থেকে পানিতে নামেন। তবে দ্বীপটা হাতের বা দিকে কিছুদূর গেলেই বাঁক নেয়। ওই জায়গাকে বলা হয় ‘জিনজিরা উত্তরপাড়া, যাকে স্থানীয়রা বলেন উত্তরবিচ। এখানেই রয়েছে ভয়ংকর এক চোরা স্রত। মূলত দ্বীপের এই অংশে ত্রিকোণাকৃতির বাকের ফলে সমুদ্রের স্রত এখানে সৃষ্টি করে এক ঘূর্ণির। ত্রিমুখী স্রোতের কারণে পানির চাপ খুব বেশি থাকে। এতে সুমুদ্রের স্রোত হঠাৎ মানুষকে নিচের দিকে টেনে নেয়।
আপনি জানতেও পারবেন না পানিতে নামতে নামতে আপনার ঠিক এক গজ সামনে আপনাকে গ্রাস করতে কি ঘূর্ণি খেলা হচ্ছে, নিজের অজান্তেই ঐ চোরা স্রোত আপনাকে টেনে নিবে সাগরের গভীরে। আপনি এসময় হাজার সাঁতার কেটে ভেসে থাকতে চাইলে পারবেন না। কারণ দ্বীপের ঐ ত্রিকোণাকৃতির গঠনের কারণে দ্বীপের ঐ উত্তর দিকে সৃষ্টি হয় সাগরের স্রোতের কারণে রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোত।
রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোত সারা বিশ্বের দ্বীপ দেশ সমূহে বেশ পরিচিত হলেও আমাদের দেশের জনগণ এর সাথে পরিচিত নয়। সাধারণত দ্বীপের আকৃতির কারণেই সাধারণ স্রোতের বাঁধা প্রাপ্তির ফলে এই রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোতের সৃষ্টি হয়। রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোতের ফলে ঐ স্থানের সাগর তলের বালি পার্শ্ববর্তী অংশ থেকে অনেকটাই গভীর হয়ে যায়। ফলে একজন মানুষ হথাৎ কোমর পানি থেকে গভীর জলে ডুবে যেতে পারেন, যা তার ধারনায় থাকেনা। তা ছাড়া সেখানে আগে থেকেই থাকে রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোত, যা তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যায় এবং স্বাভাবিক ভাটার ফলে নিচের দিকে থেকেই গভীর সাগরের দিকে ধাবিত করে ডুবে যাওয়া মানুষকে।
আমাদের দেশে সাগর তীরে পর্যটকদের এসব বিষয়ে কোনও ধারণা দেয়া হয়না সরকারের তরফ থেকে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয়রা সাবধান করে দিলেও পর্যটকরা আবেগে সাগরে নেমে পড়েন এবং তাদের সাবধান করার কেউই থাকেনা। ফলে বিপদে পড়লে সেখানে তেমন কোনও উদ্ধার ব্যবস্থা কিংবা নিরাপত্তা ব্যবস্থাও থাকেনা। এসব কারণেই প্রতিনিয়ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে আমাদের দেশের অনেক তাজা প্রান।
আমরা এমন মৃত্যু চাইনা, আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। বিষয় সমূহ জানা থাকলে বা এসব বিষয়ে ধারণা থাকলে সাবধান থেকেই সমুদ্রের সুন্দর রূপ উপভোগ করা যায়। অতএব এখনই সাবধান হয়ে যান, সমুদ্রের ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদ সম্পর্কে নিজে জানুন পরিচিত সকলকে জানিয়ে দিন। এতে করে অন্তত আগে থেকে সাবধান তো থাকা যাবে।
কক্সবাজার সহ দেশের যেকোনো সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়ার আগে স্রোতের অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিন এখান থেকে।
রিপ কারেন্ট বা উলটো স্রোতের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে ভিজিট করুন
উইকিপিডিয়া।
সেন্টমার্টিনের ‘সেই ভয়ঙ্কর’ মৃত্যুফাঁদ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে
নাজমুল হাসান মেহেদি এর ব্লগ থেকে।
২৩ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/সিধু