বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:৪৫:২৬

ভুমিকম্প সম্পর্কে পশু-পাখির পূর্বাভাস

ভুমিকম্প সম্পর্কে পশু-পাখির পূর্বাভাস

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : প্রকৃতির অন্যতম ভয়ঙ্কর এক রহস্যের নাম ভূমিকম্প। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারলেও এখনো সঠিকভাবে কেউ ভুমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পেরেছে বলে সঠিক কোন প্রমাণ নেই। তবে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, পৃথিবীতে এমন অনেক পশুপাখি আছে যারা অনেক আগে থেকেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বুঝতে পারে।

আসলে কি একথার ভিত্তি আছে? অনেকে বিজ্ঞানীদের অভিমত, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। আমরা জানি যে, এমন অনেক পাখি আছে যারা ঝড় আসার অনেক আগেই বুঝতে পারে ঝড় আসছে। কমন সুইফট্ পাখিরা ঝড় আসার আগে থেকেই কয়েকশ’ মাইল দূরে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। কয়েকদিন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পর ঝড় শেষ হওয়ার পরই সে তার আগের আবাসে ফিরে যায়। কাজেই পশুপাখিরা যদি আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে পারে তাহলে ওদের পক্ষে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানাও বিচিত্র কিছু নয়।

সাধারণত পশুপাখিরও মানুষের মতো পাঁচটি ইন্দ্রিয় রয়েছে। ওরা দেখতে পায়, শুনতে পায়, গন্ধ শোঁকে, অনুভব করতে পারে এবং স্বাদ নিতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পশুপাখির ইন্দ্রিয় মানুষের চেয়েও প্রখর হয়। আমরা যার গন্ধ পাই না কুকুর তার গন্ধও বুঝতে পারে। আমরা যেসব শব্দ শুনতে পাই না বাদুড় তা সহজেই শুনতে পায়। ঘুটঘুটে অন্ধকারেও পেঁচা দেখতে পায়। কবুতর এমন কম্পন টের পায় যা আমরা মোটেও পাই না। এ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানীই নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি যে, পশুপাখিরা ভূমিকম্পের আগে পৃথিবী ও আবহমণ্ডলে বিপদের আভাস পায়; কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বোঝা যায়, পশুপাখির সে ক্ষমতা আছে।

বিজ্ঞানীদের অভিমত, ভূমিকম্প হওয়ার আগে পৃথিবী ও এর আবহমণ্ডলে ছোট ছোট অনেক পরিবর্তন সংঘটিত হয়। যেমন বাতাস, শব্দতরঙ্গ, ভূমির বাঁক, ভূ-গর্ভের জলের তল ও উষ্ণতার পরিবর্তন; কিন্তু এ পরিবর্তনগুলো সবসময় একইভাবে ঘটে না। কোনো কোনো পরিবর্তন হয়তো মোটেও ঘটে না। কোনো পরিবর্তনের ফলে বিরাট অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সত্যি হলো- ‘পশুপাখিরা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানতে পারে’ এ ধারণাটি কিন্তু বেশ পুরনো। আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানরা জলাশয়ে ক্যাটফিশদের দেখে ওদের মাধ্যমে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানতে চেষ্টা করত। টেংরা, শিঙ্গি, মাগুর ইত্যাদি মাছ ক্যাটফিশ জাতীয়। ক্যাটফিশরা জলাশয়ে খুব হুটোপুটি করলে কিংবা জল থেকে বিরামহীনভাবে লাফালাফি করলে মনে করা হতো যে নিশ্চয়ই কোন ভূমিকম্প হবে। ৩০০০ বছর আগে চীনারা লক্ষ্য করেছিল, পশুপাখিরা অদ্ভুত আচরণ করার কিছুদিন পরই ভূমিকম্প ঘটে।

ক্যালিফোর্নিয়াতে একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা শিম্পাঞ্জি নিয়ে কাজ করছিলেন। প্রায়ই ভূমিকম্প হয় এমন একটা জায়গায় শিম্পাঞ্জিগুলো বিরাট একটা খাঁচার মধ্যে থাকতো। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করলেন, দুটি মৃদু ভূমিকম্পের বেশ আগে থেকেই শিম্পাঞ্জিগুলো বেশ উত্তেজিত হয়ে গেল। খাঁচার যে অংশে ওরা অধিকাংশ সময় কাটাতো সে জায়গা ছেড়ে হামাগুড়ি দিয়ে যে অংশে সচরাচর যাওয়া হয় না সেখানে চলে গেল। বিজ্ঞানীরা বুঝলেন, শিম্পাঞ্জিগুলো ভূমিকম্প হওয়ার আট ঘণ্টা আগেই কোনোভাবে এর পূর্বাভাস পেয়ে গেছে। কি দেখে ওরা এ পূর্বাভাস পেল তা বলা মুশকিল।

চীনা বিজ্ঞানীরা দেখলেন যে কবুতরও একই উপায়ে ভূমিকম্পের আভাস পায়। কবুতরের পা কম্পনের প্রতি খুবই সংবেদনশীল। ওরা এতো কম কম্পন ও বুঝতে পারে যা অত্যন্ত সংবেদনশীল ও জটিল যন্ত্রও পরিমাপ করতে পারে না। একটি পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা যেসব কবুতর ব্যবহার করছিলেন সেসব একটি ভূমিকম্পের আগে পাগলের মতো উড়তে লাগলো। মনে হচ্ছিল ওরা যেন আগে থেকেই ভূমিকম্পের খবরটা জানে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে