এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : শুনলে হাসি পাওয়ার জোগাড়, কিন্তু ঘটনা একেবারে সত্যি। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ছত্রিশপুর জেলার গ্রাম তেহরিমারিয়া। এ গ্রামের পুরুষরা পড়েছেন মহা সমস্যায়। বিয়ের যোগ্য পাত্রী পাচ্ছেন না তারা। কোনো মেয়ে ওই গ্রামের ছেলেদের বিয়ে করতে রাজি হয় না। ফলে ৩২ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও অবিবাহিত রয়েছেন মোহান যাদব। তবে তিনি একা নন, আছে প্রায় শ'খানেক।
গত পাঁচ বছর ধরে তার জন্য পাত্রী খুঁজে খুঁজে হয়রান তার পরিবার। কিন্তু কোনো নারী তার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে রাজি নয়। তার কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা গ্রামের। পাত্রীপক্ষের এক কথা, ‘ওই গাঁয়ে মেয়ে বিয়ে দেব না। সেখানে বিয়ে হলে আমার মেয়ে পানি টানতে টানতে মরে যাবে।
তেহরিমারিয়া গ্রামে পানি নেই। এখানকার গ্রামের বৌ-ঝিদের পানি সংগ্রহের জন্য কয়েক মাইল দূরে যেতে হয়। এ সমস্যার কারণেই যাদবের মত অন্তত ৬০ যুবক বিয়ে করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে মোহন যাদব বলেন, আমার কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। কারণ আমাদের গ্রামে পানি নেই। বিয়ের পর বউকে কয়েক মাইল হেঁটে পানি আনতে হবে। অত কষ্টের কথা ভেবেই কোনো মেয়ে তাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।
কিন্তু যাদব বিয়ে করার জন্য পাগল। এজন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন। এ এলাকায় সরকার যদি একটা ড্যাম বা বাঁধ তৈরি করে দেয় তবে আর এখানে পানির কষ্ট থাকবে না। তখন তাদের বিয়ে সমস্যাটিরও সমাধান হবে।
ছত্রিশগড় জেলাটি বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলের অংশ। এখানকার মোট ১৩টি জেলা এবং মধ্যপ্রদেশের উত্তর অংশজুড়ে চলছে পানির হাহাকার। গত এক দশক ধরে এ অঞ্চলটিতে খরা চলছে।
তেহরিমারিয়া এলাকায় কমপক্ষে এক ডজন কূপ শুকিয়ে গেছে। ৪শ' ফুট গর্ত খনন করেও আর সেগুলোতে পানি আসছে না। গ্রামের মেয়েদের পানি আনার জন্য কমপক্ষে এক মাইল দূরে যেতে হয়।
চন্দ্র আওয়াস্থি নামের এক নারী বলেন, আমার বাড়ির কাছের কূপটি শুকিয়ে গেছে। এখন আমাকে এক মাইল দূর থেকে পানি আনতে হয়। দিনের মধ্যে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচবার আমাকে পানি আনতে যেতে হয়। সমস্যাটির কারণেই এ গ্রামের পুরুষদের কাছে কেউ বিয়ে দিতে রাজি হচ্ছে না। আমার দেবরও মেয়ে পাচ্ছে না।
পানি সঙ্কটের কারণে এলাকার চাষাবাদ ও সামাজিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। জেলা প্রশাসক এ সমস্যার কথা স্বীকার করলেও এটির সমাধান করতে অনেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে তেহরিমারিয়া গ্রামে একটি ড্যাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে খুব শিগগিরই। তবে পুরো কাজ সম্পন্ন হতে দেড় থেকে দু'বছর সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন সরকারি এক কর্মকর্তা। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সূত্র : এনডিটিভি
৩১ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম