শুক্রবার, ০১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:১৯:৩৬

১১ একর জমি জুড়ে মাত্র একটি বটগাছ, দেখলে চমকে যাবেন!

১১ একর জমি জুড়ে মাত্র একটি বটগাছ, দেখলে চমকে যাবেন!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বটগাছটি বাংলাদেশের কোথায়, বলতে পারেন? অনেকের হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও আবার অনেকের হয়তো জানা নেই।  বাংলাদেশের কোন জেলার কোথায় সেই বটগাছটি জানতে চাইলে প্রতিবেদনটিতে চোখ রাখুন। 

এশিয়ার বৃহত্তম ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বটগাছটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সুইতলা মল্লিকপুরে।  বটগাছের সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।  অনেক ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বাক্ষর রেখেছে বটগাছটি।  

বিশাল জায়গা নিয়ে এ গাছ ডালপালা বিস্তৃত করে।  কিন্তু এই জায়গা যদি দুই একর নিয়ে হয় তাহলে সেই গাছ কত বড় হতে পারে! হ্যাঁ, এমনই একটি বটগাছের অবস্থান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুইতলা মল্লিকপুরে।

ঝিনাদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে চিকন পিচের রাস্তা মল্লিকপুর ছুঁয়েছে।  ১২ কিলোমিটার এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে সবুজের পাহাড়। যে সবুজের শেষ নেই। এটি সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছ।  ৮নং মালিয়াট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় বর্তমানে ১১ একর জমি জুড়ে রয়েছে এর অস্তিত্ব।

এর উচ্চতা আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট।  বর্তমানে বটগাছটি ৫২টি বটগাছে রূপ নিয়েছে।  বিবিসির জরিপে ১৯৮৪ সালে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম খ্যাত এ বটগাছের অবস্থান ও নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা। কারো কাছে সুইতলার বটগাছ, কারো কাছে সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছ আবার কারো কাছে বেথুলীর বটগাছ বলে এটি পরিচিত।

বিবিসির জরিপে একে এশিয়ার সবচেয়ে বড় বটগাছ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।  ২০০৯ সাল থেকে সামাজিক বন বিভাগ যশোর এ বটগাছটির ব্যবস্থাপনা করে আসছে।  গাছটির উত্পত্তি সম্পর্কে স্থানীয়রা কোনো সুনিদির্ষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।

তবে প্রায় দুশ’ থেকে তিনশ’ বছর পুরনো বলে ধারণা করা হয়।  গাছটি কে বা কারা লাগিয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য কেউ না দিতে পারলেও জানা যায়, এখানে আগে কুমারদের বসতি ছিল।  কুমার পরিবারের কোনো একটি কুয়োর মধ্যে আজকের বটগাছটির জন্ম।

স্থানীয়দের মুখে গাছটি সম্পর্কে কথিত আছে, ক’বছর আগে কুদরতউল্লা নামে একজন গাছের ডাল কাটলে অসুস্থ হয়ে পড়ে।  শুরু হয় রক্তবমি।  কুদরতের স্ত্রী বটগাছ আগলে ধরে কান্নাকাটি করে।  স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চায়।  অবশেষে তার স্বামী সুস্থ হয়ে ওঠে।  এ রকম অনেক গল্প মল্লিকপুরবাসীদের কাছে শোনা যায়।

বটগাছটি কেন্দ্র করে পাশেই বাংলা ১৩৬০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেথুলী বা মল্লিকপুরের বাজার।  এই বাজারের প্রথম দোকানদার ছিলেন মল্লিকপুর গ্রামের বেলায়েত আলী, বেথুলী গ্রামের স্বরজিত কুমার সাহা, মমতাজ ডাক্তার, মল্লিকপুরের মুনছুর বিশ্বাস ও মথুরাপুর গ্রামের হামিদুল।

বটতলায় কালীপূজার জন্য একটি স্থায়ী পিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে।  চাপরাইল গ্রামের গৌর পদ অধিকারী এবং হাজারী লাল অধিকারীর আর্থিক সহায়তায় এটি নির্মিত হয়।  এলাকাবাসী জানান, অযত্ন-অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে ঐতিহ্যবাহী এ বটগাছের অস্তিত্ব আজ নষ্ট হতে চলেছে।

মল্লিকপুর গ্রামের বেলায়েত মিয়া বেঁচে থাকা পর্যন্ত তিনি এসব দেখাশোনা করতেন।  তিনি নিজ সন্তানের মতো ভালোবাসতেন এ বটবৃক্ষকে।  যে কারণে এ বটগাছের কাছে সর্বপ্রথম দোকান দেন তিনি এবং বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৮২ সালের পূর্ব পর্যন্ত এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম বটগাছ বলে পরিচিতি ছিল কলকাতার বোটানিকেল গার্ডেনের একটি গাছ। পরবর্তীতে বিবিসির এক তথ্যানুষ্ঠানে প্রচার হয়-‘মল্লিকপুরের বটগাছই এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম।  

১৯৯৮ সালের দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার তত্কালীন নির্বাহী কর্মকর্তা সুশেন চন্দ্র রায়ের সহযোগিতায় সেখানে একটি ফুলের বাগান তৈরি করা হয়। বটগাছের চারপাশ ঘিরে প্রাচীর নির্মাণের ব্যবস্থাও করেন তিনি।  এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর বটগাছের ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে অনেক স্থান থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা আসেন।  

গাছটির গুরুত্ব বিবেচনা করেই ১৯৯০ সালেই বটগাছের পাশেই প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়।  মল্লিকপুর গ্রামের প্রবীণদের একজন জানান, এ বটগাছটির বয়স কত তা আশপাশের গ্রামের লোকজনও বলতে পারে না।  তিনি মুরব্বিদের কাছে শুনেছেন ৩শ’ বছরের বেশি হবে।  বটগাছের আশপাশে কুমার সম্প্রদায়ের বাস ছিল।

তিনি জানান, সেনদের জায়গায় একটি পাতকুয়া ছিল।  কোনো পাখি হয়তো কুয়োর ওপর বটের বীজ এনে ফেলে।  সে বীজ থেকেই চারা গজায়।  জায়গাটি ছিল জঙ্গলে ভরপুর।  আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে বিস্তৃর্ণ জায়গা জুড়ে।  বাড়তে বাড়তে এক সময় প্রায় দুই একর জায়গা দখল করে নেয় বটগাছটি।

পরিচিতি পায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ বটগাছ হিসবে।  হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ গাছের গোড়াতে পূজা-অর্চনা শুরু করে।  এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এ বটগাছটির ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থী আসেন এখানে।  

গুরুত্ব বিবেচনা করে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ বটবৃক্ষটির পাশে একটি রেস্ট হাউস নির্মাণ করেন ১৯৯০ সালে।  বিস্তৃত বটগাছটির দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাখির কলরব, ছায়াঘেরা শীতল পরিবেশ মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের।

১ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের সুইতলা মল্লিকপুরে বৃহত্তম বটগাছ তলায় প্রাচীন বটবৃক্ষ সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটি আয়োজিত জনসচেতনামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকি।

তার সাথে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রফেসর ড. ম ইমদাদুল হক, প্রফেসর ড. আবুল বাশার।  যোগ দেন বন সংরক্ষক অসিত রঞ্জন পাল, কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।  তারা বটগাছটি ঘুরে-ফিরে দেখেন এবং এটাকে রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য পরামর্শ দেন।
১ এপ্রিল,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে