হাতিদের প্রতিশোধ, ছাড়খার পুরো গ্রাম!
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : স্বজন হারানোর তীব্র শোক, তার পর প্রবল প্রতিশোধস্পৃহা৷ এ যেন একদল 'হায়দার'৷ যাদের প্রতিশোধের ঝটকায় লন্ডভন্ড ২৫ বিঘে সজনে বাগান, ৪০ বিঘা জমির পাকা ধান৷ এছাড়া দিনমানের পিলে চমকানো হুমকি-হুঙ্কার তো আছেই! গত ২১ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গেও বানারহাটের আপার কলাবাড়ি বস্তিতে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল একটি দাঁতালের৷ তার পরই ডায়নার জঙ্গল থেকে ৪৫টি বুনো হাতির একটি দল ওই বস্তিতে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়৷ দিনের আলো ফুটলে অন্যরা জঙ্গলে ফিরে গেলেও কিছুতেই গ্রাম ছাড়তে চায়নি কমবয়সী একটি দাঁতাল এবং একটি মাদি হাতি৷ তাদের সঙ্গে রয়েছে মধ্যবয়স্ক এক মাকনাও৷ গ্রামবাসীদের দেখতে পেলেই তেড়ে আসছে তারা৷ কখনও শোনা যাচ্ছে করুণ কান্না৷ কখনও আবার মেরুদণ্ডে ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দেওয়া বৃংহন৷
এক বনকর্মীর ভাষায়, 'এখন ওদের যা মানসিক অবস্থা তাতে কোনো মতেই ওদের কাছে ঘেঁষতে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷ টানা ৫ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালিয়েও ওদের জঙ্গলমুখী করা যায়নি৷ মৃত দাঁতালটির সঙ্গে নিশ্চয়ই ওই তিনটি হাতির কোনো সম্পর্ক ছিল৷ তাই ওরা এতটাই মরিয়া৷' সাধারণত চুপিসারে লোকালয়ে ঢোকে হাতিরা৷ কিন্ত্ত বুধবার গভীর রাতে আগাম জানান দিয়েই এসেছিল ওরা৷ সেই হুঙ্কার শুনেই বাইরে বেরনোর সাহস করেননি কেউ৷ টংঘরে রাত জাগেছিলেন যে গ্রামবাসীরা, তারাও হাতিদের উগ্রমূর্তি দেখে ঘাবড়ে যান৷ এরকমই এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ধানখেতের ঠিক যে স্থানে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল দাঁতালটির, সেখানে দলবদ্ধ হয়ে গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়েছিল হাতির পাল৷ সকলে মিলে মাটিতে বেশ খানিকটা ঝুঁকে আকাশের দিকে শুঁড় উঁচিয়ে প্রায় আধঘণ্টা ধরে বিলাপ করে করুণ সুরে৷ শুঁড় দিয়ে বেশ কয়েক প্রস্থ ধুলো ওড়ায় ওরা৷
এর পর প্রচণ্ড বৃংহন করতে করতে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে হামলা চালায় সজনে বাগানে৷ ধানখেত তছনছ করলেও মুখে দেয়নি পাকা ধান৷ বস্তির বাসিন্দা গণেশ ছেত্রী বলেন, 'তখন অনেক রাত৷ মনে হচ্ছিল যেন বিপর্যয় নেমে এসেছে৷ হাতিদের এতটা উগ্র হতে আগে দেখিনি৷ একটা-দু'টো নয়, ৪৫টা হাতি একসঙ্গে চিৎ্কার করলে তা কতটা ভয়াবহ হয়, ভাষায় বোঝাতে পারব না৷ আর তিনটি হাতি তো গ্রামই ছাড়ছে না৷ তাড়া করলে উল্টো আমাদের দিকে তেড়ে আসছে৷'
উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ শাখার মুখ্য বনপাল বিপনকুমার সুদ বলেন, 'হাতিরা স্বজন হারানোর বেদনায় একদিকে যেমন ভেঙে পড়ে, তেমনই ওদের মধ্যে মারাত্মক প্রতিশোধ প্রবণতা থাকে৷ দলটির ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে৷' বিশিষ্ট হাতি বিশেষজ্ঞ পার্বতী বরুয়া বলেন, 'কিছু ক্ষেত্রে দেখেছি, হাতিরা আত্মীয় বিয়োগের বেদনায় ও আবেগে মানুষকেও ছাড়িয়ে যায়৷ আমি নিশ্চিত ওরা প্রতিশোধ নিতেই বস্তিতে হানাদারি চালিয়েছে৷ আবার ফিরেও আসতে পারে৷ তাই কমপক্ষে এক সপ্তাহ সচেতন থাকতে হবে বনকর্মী ও গ্রামবাসীদের৷
২৩ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস