মঙ্গলবার, ০৫ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:১৯:২২

ছবি ও একটি শিশুর করুণ বিদায়, কাঁদবেন আপনিও

ছবি ও একটি শিশুর করুণ বিদায়, কাঁদবেন আপনিও

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : প্রিয়জনকে বিদায় জানানোর যন্ত্রণা কমবেশি প্রত্যেকেই পান। আর প্রিয় মানুষটি যদি অসময়ে চলে যান, তাহলে সেই যন্ত্রণার জন্য কোনও সমবেদনাই যথেষ্ট নয়। প্রিয়জনের আগাম চলে যাওয়ার দুঃসংবাদ আগাম পেয়ে গেলে, আগে থেকেই দুঃখ, শোকে পাথর হয়ে যান অনেকে। কিন্তু নিয়তিকে বদলানো যায় না। এমনই কঠিন সময়ে একটু অন্যভাবে ভাবলেন অস্ট্রেলিয়ার এক নবদম্পতি।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও সিডনির ন্যান্সি এবং চার্লি ম্যাকলিনের জীবনটা জোড়া আনন্দে পরিপূর্ণ ছিল। প্রথমত, জানুয়ারিতেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এই দম্পতি। আর যখন বিয়ে হয়, তার সাত সপ্তাহ পরেই তাঁদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা ছিল ন্যান্সির। কিন্তু, এত আনন্দ উপভোগ করার সৌভাগ্য বেশি দিন হয়নি তাঁদের। সর্বশক্তিমান বোধহয় অন্যরকম কিছু ভেবেছিলেন। তাই মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নিজেদের প্রথম সন্তান এডিসনের জন্মের পরেই চিকিৎসকেরা ওই দম্পতিকে জানান, মেটাবলিক ডিসঅর্ডারের জন্যই প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারছে না ছোট্ট এডিন। যা একটি দুরারোগ্য ব্যাধিও বটে। ফলে এডিসনের জন্মের তিন দিনের মাথাতেই জবাব দিয়ে দেন চিকিৎসকেরা।

স্বভাবতই ন্যান্সি এবং চার্লির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। প্রথম সন্তানকে হারানোর যন্ত্রণা বুকে নিয়েও দম্পতি ঠিক করেন, এডিসনের ছোট্ট জীবনটাকেও স্মরণীয় করে রাখবেন তাঁরা। তাই মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানকে যিনি ক্যামেরবন্দি করেছিলেন, সেই ফটোগ্রাফার জেমস ডে-কে হাসপাতালে ডেকে নেন ওই দম্পতি।

এমন ডাকের জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না জেমস। পেশাদার ফটোগ্রাফার হিসেবে কত ছবিই তো তুলেছেন। তার উপরে, মাত্র দু’মাস আগে ন্যান্সি-চার্লির বিয়ের দিনটিও তাঁর মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। কারণ, যে এডিসনের চিরবিদায়ের আগের মুহূর্তগুলি তাঁকে ক্যামেরবন্দি করতে হয়েছে, ওই দম্পতির বিয়ের সময়ে সেই এডিসনই তো ন্যান্সির গর্ভে ছিল। যা দু’জনের বিয়ের অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা যোগ করেছিল। বিয়ের দিনে ভালবাসার সেই মুহূর্তগুলিই পরম পেশাদারি যত্নে ক্যামেরবন্দি করেছিলেন জেমস। বিয়ের ছবিগুলিতে ন্যান্সি, চার্লির সঙ্গে মায়ের গর্ভে থাকা এডিসনের উপস্থিতিও যে সেদিন জেমসের লেন্সে ধরা পড়েছিল। পরে নিজের ব্লগে সেকথা উল্লেখও করেছিলেন জেমস।

কাজটা ভীষণ কঠিন হলেও ওই নবদম্পতিকে না-বলতে পারেননি জেমস। হাসপাতালে গিয়ে একটা গোটা দিন ন্যান্সি এবং চার্লির সঙ্গে ছোট্ট এডিসনের শেষ কিছু মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেন তিনি। প্রতিটি ছবিতেই প্রথম সন্তানকে হারানোর যন্ত্রণা প্রকট হয়ে উঠেছে। ছবিগুলিতে দেখা যাচ্ছে, এডিসনকে জড়িয়ে ধরে সমানে চুমু খাচ্ছেন এই দম্পতি। কখনও পরম আদরে সন্তানের মাথায়, বুকে হাত বুলিয়ে দিয়েছেন দু’জনে। যতটা আদরে ভরিয়ে দেওয়া যায় ছোট্ট এডিসনকে। ছবি ছাড়াও বেশ কিছু ভিডিও তোলেন জেমস। নিঃশব্দেই যেন প্রথম সন্তানকে কত কিছু বললেন ন্যান্সি এবং চার্লি, আরও অনেক কথাই হয়ত তাঁদের বলা হল না ছোট্ট এডিসনকে। শোনা না গেলেও, সেই ভিডিওয় ন্যান্সি এবং চার্লির বুকফাটা কান্না এবং এডিশনের শেষ কিছু নিশ্বাস ভীষণভাবে কানে বাজে। জেমস যেদিন ছবিগুলি তোলেন, তার দু’দিন পরেই চিরবিদায় নেয় ছোট্ট এডিসন। ইতিমধ্যেই অনলাইনে প্রায় দেড় লক্ষবার এই মন ভারী করে দেওয়া এই ভিডিওটি দেখেছেন অসংখ্য মানুষ।

মর্মান্তিক এই ছবিগুলি তুলতে গিয়ে আবেগে হয়ত জেমসেরও হাত কেঁপে গিয়েছে। তিনি যে বেশ কয়েকবার ক্যামেরার পিছনে কেঁদেও ফেলেছিলেন, তা-ও জানিয়েছেন জেমস। নিজেই বলেছেন, কাজটা একেবারেই সহজ ছিল না।

আর কী বলছেন ন্যান্সি এবং চার্লি? সদ্য সন্তান হারানো এই দম্পতি লিখিত বিবৃতিতে জানান, ‘‘আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। কিন্তু এই কঠিন সময়ে, যে, যেভাবেই আমাদের সমবেদনা জানিয়েছেন, তাঁদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।’’

এডিসনের স্মৃতিকে সম্বল করেই নতুন করে বাঁচার লড়াই শুরু করতে হবে ন্যান্সি এবং চার্লিকে। অন্তত যতদিন না আবার কোনও এডিসন তাঁদের কোল আলো করে আসছে। এবেলা
৫ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে