মানুষের মুখে ৮ পা-ওয়ালা কীটপতঙ্গের বাস

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : অবাক হচ্ছে হওয়াটাই স্বাাভাবিক। সকালে ঘুম থেকে ওঠে ওয়াশরুমে গিয়ে যে আধ-আধ ঘুমান্ত মুখশ্রীটা দেখেন, সেটি আপনারই মুখ। আপনার মুখেই আপনার ঘুমিয়ে পড়ার পর মুখটা নিয়ে খেলেছে কীটপতঙ্গ।

মানুষের মুখের প্রতিটি লোমকূপের মধ্যে বাস করছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আট পা-ওয়ালা কীটপতঙ্গ। এ যেন পোকামাকড়ের ঘরবসতি। মাকড়সার মতো এই পরজীবীগুলো দেখতে আইসক্রিমের মতো। ডেমোডেক্স নামে এই পরজীবীগুলো খালি চোখে দেখার উপায় নেই।

সম্প্রতি গবেষকরা এই ক্ষুদ্র পরজীবীগুলোর সন্ধান পেয়েছেন। তারা বলছেন, পরজীবীগুলো দেখতে সুন্দর আর মানুষের জন্য উপকারী। যুক্তরাষ্ট্রেরগবেষকরা জানান, ডেমোডেক্স সব মানুষের মধ্যেই রয়েছে। মানুষের ত্বকে দুই প্রজাতির ডেমোডেক্স পরজীবী বাস করে। একটি হচ্ছে ডেমোডেক্স ফলিকুলোরাম, আরেকটি ডেমোডেক্স ব্রেভিস।

গবেষকরা বলছেন, ডেমোডেক্স মানুষের চুল বা লোমকূপের গোড়ায় বাস করে। সেখানে লুকানো তেল খায়। চুলের প্রধানত দুটি অংশ। ‘হেয়ার শ্যাফট’ বা বাইরে দৃশ্যমান চুল এবং ‘হেয়ার ফলিকল’ বা ছোট থলির মতো অংশ, যা ত্বকের ভেতরে থেকে গাছের শিকড়ের মতো চুলকে ধরে রাখে।

ফলিকলে থাকা ডেমোডেক্স ব্রেভিস গোলাকার ও আকারে বেঁটে। এটি ফলিকল সেবাম গ্গ্ন্যান্ড বা তৈল গ্রন্থিতে জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দেয়। ডেমোডেক্স ফলিকুলোরাম অবশ্য এতটা তেলনির্ভর নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক মেগান টয়েমস সংবাদমাধ্যম এনপিআরকে বলেন, ডেমোডেক্সে পরজীবীগুলো অস্বস্তির কিছু নেই; বরং এর অর্থ হলো আপনার সঙ্গে সব সময় অনেক বন্ধু রয়েছে।

তিনি মনে করেন, এই পরজীবীগুলো দেখে নাক সিটকানোর কোনো কারণ নেই। আসলে এগুলো অনেক সুন্দর। পরজীবীগুলোর আট পা দিয়ে নড়াচড়া দেখলে মনে হবে এরা তেলের মধ্যে সাঁতার কাটছে।

গবেষক টয়েমস বলেন, ‘সবার মধ্যেই এই পরজীবী বাস করছে। আর এগুলো কোনো সমস্যা তৈরি করছে না বিধায় তা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক।’

গবেষকরা ২৯ ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাই ডেমোডেক্স পরজীবীর ডিএনএ বহন করছেন বলে তারা প্রমাণ পেয়েছেন। পিএলওএস ওয়ান সাময়িকীতে তাদের গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। টয়েমসের দাবি, গবেষকরা পরে আরও অধিকসংখ্যক মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়েও একই ফলাফল পেয়েছেন।

মানুষের মধ্যে কীভাবে আসে এই কীটগুলো? এই পরজীবী একজন থেকে আরেকজনে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, সে বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা নেই গবেষকদের। তবে তাদের একটি তত্ত্ব অনুযায়ী, মায়ের দুধ পান করার সময় শিশুর মধ্যে এই পরজীবী স্থানান্তরিত হয়। তরুণদের মধ্যে এই পরজীবী বেশি দেখা যায়। রাতের বেলা যখন অন্ধকার থাকে, তখন পরজীবীগুলো মুখের ওপর উঠে আসে।কীভাবে এলো এই পরজীবী?

এ প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া একাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক মিশেল ট্রটউইন বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ডেমোডেক্স মানুষের সঙ্গে বসবাস করছে। আফ্রিকা থেকে আদিম মানুষের ছড়িয়ে পড়া যখন শুরু করেছিল, তখন থেকেই তারা সঙ্গে করে তাদের পরজীবীগুলো এনেছিল। এখন ডেমোডেক্স ডিএনএ পরীক্ষা করে মানুষের বিবর্তনের অজানা ইতিহাসও আমরা জানতে যাচ্ছি। -ডেইলি মেইল