এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : নোয়াখালীতে জিনের মসজিদ! হ্যাঁ, নোয়াখালীর রায়পুর শহরসংলগ্ন দেনায়েতপুর গ্রামে এই জিনের মসজিদটি অবস্থিত। এর অন্য নাম মসজিদ-ই জামে আবদুল্লাহ।
মসজিদটির শিলালিপিতে ১৮৮৮ সালে স্থাপিত লেখা থাকলেও প্রকৃত অর্থে মসজিদটি কখন স্থাপন করা হয় তা সুনির্দষ্ট ভাবে জানা যায়নি। ধারনা করা হয় দিল্লির নিকটবর্তী আল্লামা মাওলানা রশীদ আহম্মদ গঙ্গহিরের গোপন ইবাদতখানার অনুকরণে তৈরি এই জিনের মসজিদ। এ মসজিদ দেখতে প্রতি বছর কয়েক হাজার পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন।
প্রথম ভিতপাথর স্থাপন করেন দেনায়েতপুরের আল্লামা মাওলানা আবদুল্লাহ। তিনি দিল্লির জামে মসজিদের অনুকরণে মসজিদটির নির্মাণ কাজের সূচনা করেন। সেই থেকেই মসজিদটির নামকরণ করা হয় মসজিদ-ই জামে আবদুল্লাহ বা আল্লামা মাওলানা আবদুল্লাহ জামে মসজিদ।
প্রায় ৮৩ হাত দৈর্ঘ্য ৪৯ হাত প্রস্থ আর ৫০ হাত উঁচু ১৬ গম্বুজের পরিকল্পনায় (বর্তমানে ৩ গম্বুজ সমাপ্ত) চুন-সুরকি আর ইট-পাথরে নির্মাণাধীন মসজিদটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, প্রথম গম্বুজের নিচের অংশে মাটির তলদেশে ৪টি বিশাল পিলার চুন-সুরকি দ্বারা তৈরি ইবাদতখানা, যা দিল্লির নিকটবর্তী আল্লামা মাওলানা রশীদ আহম্মদ গঙ্গহিরের গোপন ইবাদতখানার অনুকরণে তৈরি।
এছাড়া বাইরে একেকটি পিলারের বেড় ২৪ ফুট প্রায়। সামনের বারান্দা ভিতরের ডিজাইন সবই দিল্লর জামে মসজিদের অনুকরণে নির্মিত।
মসজিদ নির্মাণ কাজের দ্রুততা ও প্রচুর অর্থ ব্যয়ের খাত চিন্তা করে সাধারণ মানুষের ধারণা, এ ব্যয়ভার বহন ও এতো দ্রুত নির্মাণ কাজ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই মসজিদ নির্মাণে টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় মাওলানা আবদুল্লাহ সাহেব একটু রহস্য করে বলেছিলেন জিনের দেয়া। তাছাড়া সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে জিনদের গোপন কক্ষে নামাজ আদায় করতেও দেখেছেন অনেকে। এমতাবস্থায় লোকমুখের বলাবলিতে মসজিদের নাম হয়ে যায় জিনের মসজিদ। জৌনপুরের পীর সাহেবও নাকি জিনদের সে সময় দেখেছেন কাজ করতে। কিন্তু জিনদের অবৈধ অর্থ মসজিদে ব্যয় হচ্ছে জেনে বাধা দেয়ায় জিনেরা মসজিদের কাজ ফেলে চলে যায়।
১৬ গম্বুজবিশিষ্ট দিল্লির জামে মসজিদের হুবহু অনুকরণে তৈরি মসজিদের ভিটির ওপরে ৩ ফুট পর্যন্ত কাজ করিয়েছেন মাওলানা আবদুল্লাহ। বাকি অংশ স্থানীয় মুসল্লি ও জনগণের টাকা এবং সহযোগিতায় সমাপ্ত হয়। এরপর তিনি মারা গেলে তার পুত্র আল্লামা মাওলানা মোহাম্মদ উল্যা দেওবন্দ মাদরাসা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরার পর তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব অনুসারে তিনি মসজিদের তিন গম্বুজের কাজ সমাপ্ত করেন।
তারপর তার ছোট ভাই মাওলানা ছালামত উল্যা ৩ গম্বুজের কার্নিশ সিঁড়ি দানবাক্স নির্মাণ করেন। পুকুরের ঘাটলা ২টা ও ৫টা বাথরুম মাওলানা আবদুল্লাহ করে গেছেন। বর্তমানে মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
উল্লেখ্য, এই মসজিদ পরিদর্শনে মহাত্মা গান্ধী ও ইন্ধিরা গান্ধী ১৯৪৬-এর হিন্দু মুসলিম সামপ্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধের পর এবং ১৯৪০ সালে ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার এসেছিলেন।
এছাড়াও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ হুসেইন আহম্মদ মাদানী, সুলতান আল মাদানী, নওয়াব ছলিমুল্লাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা বরাত বলাকী, মদিনা থেকে হাফেজ তোয়াহা আবদুল্যাহ সাহেবের মেয়ের জামাতা হাজী শরীয়ত উল্যাহর বংশধর পীর বাদশা মিয়া এসেছিলেন এ মসজিদ পরিদর্শনে। এখনও জিনের মসজিদ দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী এখানে আসেন।