এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পড়াশোনার সৌভাগ্য হয়নি মাদেশ্বরনের। তাই রাস্তার ধারে ভুট্টা বিক্রি করেই পার করেছেন জীবনের ৬০ টি বসন্ত৷ আর সেই ভুট্টা বিক্রেতাই নাকি নিজের হাতে তৈরি করলেন ব্যাটারিচালিত একটি লাইট এবং পাখা৷
মাদেশ্বরন থাকেন বেঙ্গালুরুতে৷ বহুদিন ধরে রাস্তার ধারে বিক্রি করছেন ভুট্টা৷ বেঙ্গালুরুর সেই ‘ফুট স্ট্রিট'-এ তিনি বেশ বিখ্যাত৷ তার পোড়ানো ভুট্টায় নাকি অন্য রকম স্বাদ৷ সেজন্যই হয়তো স্কুল ফেরত ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু অফিস ফেরত ভদ্রলোক সকলেই বিকেলের টিফিন সারেন এই ভুট্রা দিয়েই৷ সকালেও এই ‘ভুট্টা দাদু'-র কাছে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো৷ একটি ধাততবপাত্রে কয়লা দিয়ে আঁচ করে তাতে ভুট্টা পোড়ান তিনি৷ আর আগুনের গনগনে আঁচ ধরে রাখার জন্য বাঁ হাত দিয়ে সমানে তাকে চালিয়ে যেতে হয় হাত পাখা৷ তার হাতের বিরাম নেই৷ বয়স হয়েছে তাই আর হাত পাখা ঘোরাতে পারেন না৷
মাদেশ্বরন বলেন, বাড়ি ফিরে একদিন রাতে এই হাতপাখারই বিকল্প বের করার কথা চিন্তা করছিলেন৷ পাশাপাশি সন্ধ্যা নামতেই তার চোখের দৃষ্টিশক্তিও কমে আসে৷ রাস্তার আলো বা মোমবাতির আলোতে কাজ করতে খুবই কষ্ট হয়৷ একটা গোটা দিন ভেবে তিনি খুঁজে বের করলেন বিকল্প রাস্তা৷
বাড়িতে পরে থাকা কিছু পুরনো কাঠের প্লাই তুলে আনলেন বাইরে থেকে৷ স্কেল দিয়ে মেপে তা সঠিক মাপর করে কেটে ফেললেন৷ এইভাবেই বানালেন মাঝারি সাইজের একটি স্ট্যান্ড৷ স্ট্যান্ডটির দুটো দিক করলেন৷ একটি দিকে একটি ফ্যান লাগালেন৷ আর একটি দিকে ছোট্ট দুটি টিউবলাইট৷ তারপর সে দু'টি জুড়ে ফেললেন তার দিয়ে৷ স্ট্যান্ডের পিছনে করলেন একটি ছোট্ট বাক্স৷ সেই বাক্সতে রাখলেন এই পাখা এবং আলো জ্বালাবার উত্স অর্থাত্ একটি ব্যাটারি৷ ব্যাটারির সঙ্গেই সংযোগ করলেন লাইট এবং ফ্যানের তার৷ তার তৈরি নতুন এই আবিষ্কার কার্যকরি হতেই তা পরের দিন নিয়ে গেলেন সেই ঠেলাগাড়িতে৷ যেখানে তিনি ভুট্টা বিক্রি করেন৷
তারপর শুরু হল পাখা চালিয়ে আঁচ ধড়ানো আর লাইট জ্বালিয়ে ভুট্টা সেঁকার কাজ৷ এদিন শুধু তাঁর পোড়ানো ভুট্টার জন্য নয় লাইন পড়েছিল তাঁর অভিনব আবিস্কার দেখার জন্য৷ স্বপ্ণপূরণের হাসি হেসে মাদেশ্বরন বললেন, "বাবার যদি টাকা থাকত তাহলে ইঞ্জিনিয়ার হতে পারতাম৷" পুরনো ক্রেতাদের সেইসঙ্গে শোনালেন তার আলো-পাখা বানানোর বর্ণনা৷