বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৪৩:০৭

সমুদ্রগর্ভে ঘুম ভেঙেছে 'নিখোঁজ' শহরের!

সমুদ্রগর্ভে ঘুম ভেঙেছে 'নিখোঁজ' শহরের!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: সমুদ্রগর্ভে বিলীণ হওয়া সেই শহরের খোঁজ মিলল। ভুমধ্যসাগরের তলদেশে পাওয়া গেল গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস কথিত বন্দর নগরী হেরাক্লিয়ন-এর ধ্বংসাবশেষ। সৌজন্যে ফরাসি পুরাতত্ত্ববিদ ফ্র্যাঙ্ক গড্ডিও।

২০০০ সালে ভুমধ্যসাগরের গভীরে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাচীন সভ্যতার কিছু নিদর্শন প্রথম নজরে আসে ডক্টর গড্ডিওর নেতৃত্বে ফ্রান্সের এক পুরাতাত্ত্বিক দলের প্রতিনিধিদের। আলেকজান্দ্রিয়ার অদূরে আবুকির উপসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩০ ফিট গভীরে পাওয়া যায় বেশ কিছু অতীত সভ্যতার চিহ্ন।

এরপর ওই এলাকায় বিস্তারিত ভূপ্রাকৃতিক অনুসন্ধান চালানোর পর বিশেষজ্ঞরা গ্রিক ও মিশরীয় পুরাণ বর্ণিত হেরাক্লিয়ন শহরের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হয়েছেন। সাড়া জাগানো এই আবিষ্কারের জেরে সাগরের অতল থেকে উঠে এসেছে বহু প্রাচীন দেব-দেবীর মূর্তি, মুদ্রা ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত নানা সামগ্রীর নমুনা। জানা গিয়েছে প্রাক মিশরীয় ও গ্রিক সভ্যতার সময়কার এযাবত না-জানা বিবিধ তথ্য।

এতকাল অসংখ্য প্রাচীন পুঁথি ও শিলালিপিতে উল্লেখ থাকলেও কিংবদন্তী ও ইতিহাসের গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাওয়া হেরাক্লিয়ন নগরীর অস্তিত্ব নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে নানা সংশয় ছিল। ইতিহাস বলে, ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর পত্তনের বহু আগে গ্রিস থেকে মিশরে ঢোকার পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাগর-বন্দর হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠে এই শহর। শুধু তাই নয়, প্রাচীন মিশরীয় দেবতা আমুন-এর মন্দিরের জন্যও বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছিল হেরাক্লিয়নের।

ঐতিহাসিকদের মতে, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্বাব্দ অষ্টম শতকের আশেপাশে ভূমধ্যসাগরের তীরে এই বন্দর নগরী গড়ে ওঠে। মিশরীয়রা এই শহরকে চিনতেন 'থনিস' নামে। খ্রিস্টপূর্বাব্দ পঞ্চম শতকে তার উল্লেখ পাওয়া যায় গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের লেখনীতে।

তার বয়ান থেকে জানা যায়, এখানেই প্রথম মিশর রাজ্যে পা রাখেন গ্রিক পৌরাণিক বীর হেরাক্লেস। সাগরপারে আমুন-এর সুবিশাল মন্দিরের বর্ণনাও মেলে হেরোডোটাসের লেখায়। জানা যায়, ট্রয়ের যুদ্ধের আগে প্রেমিক প্যারিসের সঙ্গে এই শহরে এসেছিলেন স্বয়ং ট্রোজান সাম্রাজ্ঞী হেলেন।

ভূমধ্যসাগরের নীচে ঘুমন্ত হেরাক্লিয়নের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন এখানে

সমুদ্রের তলদেশ থেকে পাওয়া নিদর্শন পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, খ্রিস্টপূর্বাব্দ ষষ্ঠ থেকে দ্বিতীয় শতকে হেরাক্লিয়নের প্রাচূর্য তুঙ্গে ওঠে। ওই সময়কার বেশ কিছু মুদ্রা ও চিনেমাটির জিনিসপত্র বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা।

জানা গিয়েছে, মিশরে প্রবেশের পথে হেরাক্লিয়ন বন্দরে অসংখ্য জাহাজ ভিড়ত। অভিযানে উদ্ধার হয়েছে সাতশোর বেশি প্রাচীন নোঙর এবং অন্তত ৬০টি ঝঞ্ঝা-বিধ্বস্ত জাহাজের ধ্বংসাবশেষ।

ফ্র্যাঙ্ক গড্ডিওর হাত ধরে অবশেষে নিজ অস্তিত্ব প্রমাণ করল একদা সমৃদ্ধির শীর্ষে থাকা বাণিজ্য নগরী থনিস-হেরাক্লিয়ন।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে