বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:১৬:১১

২০ বছরে ৪৩০ গাড়ি, অতঃপর দেউলিয়া!

২০ বছরে ৪৩০ গাড়ি, অতঃপর দেউলিয়া!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : স্পোর্টস কার নিয়ে 'ফ্যাশন' রয়েছে? প্রায় রাস্তার সাথে মেশানো ঝা চকচকে গাড়ি। গতি লজ্জা দেয় ১৮০ কি.মি বেগে আসড়ে পড়া 'হুদহুদ'-কেও। দামের আঁচে অনেকের কাছে ধরাছোঁয়ার বাইরে হলে কি হবে, দৃশ্যসুখে ক্ষতি কী! তাই অত্যাধুনিক মডেলের স্পোর্টস কারের পোস্টার শোভা পায় অনেকের ঘরেই। তা ছাড়া বুদ্ধ সার্কিট তৈরির পর থেকে ভারতে ফর্মুলা ওয়ান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন যেমন একাধিক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা স্পোর্টস কার বাজারে এনেছে, একটা সময় অবস্থাটা এরকম ছিল না।

বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে স্পোর্টস কার-এর দুনিয়ায় একছত্র সাম্রাজ্য ছিল বুগাত্তি নামে এক সংস্থার। একটা দীর্ঘ সময় স্পোর্টস কার বললে ফ্রান্সের সংস্থা বুগাত্তির নামই মুখে আসত। বুগাত্তির সেই সময়কার স্পোর্টস কার এখন ভিন্টেজ হয়ে গিয়েছে। ভাবছেন, রবিবারের অলস রাতে হঠাত্‍ বুগাত্তি স্পোর্টস কার নিয়ে এত গৌড়চন্দ্রিকা কেন? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আপনাকে একবার চাক্ষুষ করতেই হবে ফ্রান্সের প্রাদেশিক শহর মালহাউসের একটি গাড়ি মিউজিয়াম। ওই মিউজিয়ামটির জন্য শহরের নামই হয়ে গিয়েছে 'সিটি অফ কার'।

খামোখা মালহাউসের গাড়ি সংগ্রহশালা নিয়ে মাতামাতি কেন?

মালহাউসের ওই কার মিউজিয়ামের পিছনে রয়েছে একটা দীর্ঘ ইতিহাস। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিক। ফ্রান্সে তখন ধন কুবেরদের তালিকায় প্রথম স্থানেই ছিল স্লাম্ফ ভাতৃদ্বয়ের নাম। ফ্রিত্‍জ স্লাম্ফ ও হ্যান্স স্লাম্ফ। কাপড়ের ব্যবসা করে তখন তাদের সম্পত্তি আকাশ ছুঁয়েছে। প্রবাদে আছে, পয়সা থাকলে, ভুতের বাপের শ্রাদ্ধ হয়! জীবনের মধ্যবয়সে এসে দুই ভাইয়ের খানিকটা সেই রকমই হয়েছিল। হঠাত্‍ তারা পরিবার ছেড়ে স্পোর্টস কার-এর প্রেমে পড়লেন। তা ধনীর সাধ! যেমন ভাবা, তেমনি কাজ। ফ্রিত্‍জ কিনতে শুরু করলেন বুগাত্তি। ধনকুবেরদের বাড়িতে একাধিক গাড়ি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু স্লাম্ফ ভাইয়েরা প্রত্যেক বছর পাগলের মতো বুগাত্তি কিনতে শুরু করেন। এবং ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১২২টি বুগাত্তি স্পোর্টস কার কিনে ফেলেন।

শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে চলতে থাকে অন্যান্য অভিজাত সংস্থার তৈরি দামি স্পোর্টস কার কেনাও। সব মিলিয়ে ২০ বছরে তারা ৪৩০টি গাড়ি কিনে ফেলেন। আশ্চর্যের বিষয়, গাড়িগুলি কিন্তু চড়তেন না স্লাম্ফ ভাইয়েরা।। স্রেফ মোটা অঙ্কে কিনে কাপড়ের কারখানার একটি অংশে রেখে দিতেন। কাউকে কিছু বলতেনও না। একেবারে নিঃশব্দে। কিন্তু ৪৩০টি ভিন্টেজ গাড়ির সংগ্রহ কী আর বেশি দিন চাপা থাকে! তাই ক্রমেই তা বাইরের জগতের নজরে আসে।

এ দিকে দামি স্পোর্টস কার-এর প্রেমে শেষমেশ সর্বস্ব খুইয়ে ফেলেন স্লাম্ফ ভাইয়েরা। পরিবারের অজস্র বার নিষেধ অগ্রাহ্য করে নেশাগ্রস্তের মতো একের পর এক গাড়ি কিনতে কিনতে শেষ পর্যন্ত প্রবল দেনার দায়ে ডুবে যান দু'জনেই। পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচতে দেউলিয়া হয়ে দু'জনেই পালিয়ে যান সুইজারল্যান্ড। পড়ে থাকে তাদের স্পোর্টস কার-এর বিপুল সংগ্রহশালা। পরবর্তীকালে ফ্রান্স সরকার গাড়িগুলি অধিগ্রহণ করে। এবং গাড়িগুলি নিয়ে জন সাধারণের জন্য মিউজি য়াম তৈরি করে।

বর্তমানে বিশ্বের সব থেকে বেশি বুগাত্তি ভিন্টেজ গাড়ির সংগ্রহ রয়েছে ফ্রান্সের মালহাউসের স্লাম্ফ মিউজিয়ামে। দেশ-বিদেশের প্রচুর মানুষ ভিড় জমান ওই সংগ্রহশালায়। বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেন, কুড়ি বছরে ৪৩০টি গাড়ির কিনেছিলেন দুই ভাই। আশ্চর্য শখ!
২৩ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আল-আমিন/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে