সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:১৪:১৬

‘কয়ডা ট্যাহা দেন’

‘কয়ডা ট্যাহা দেন’

তামান্না মোমিন খান :  মানিক মিয়া এভিনিউ সামনের রাস্তা। সিগন্যালে গাড়ি থামতেই ময়লা জামা পরা প্লাস্টিকের বাটি হাতে হাজির ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। গাড়ির জানালায় এসে বলে, ‘কয়টা ট্যাহা দেন, সাড়া দিন খাই নাই, খুব ক্ষিদা লাগছে।’ সিগন্যালকে ঘিরে এমন ছোট ছোট শিশু ভিক্ষার ঝুলি হাতে ছুটে গাড়ির পেছনে। চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড়ে এরা রাস্তার এপার থেকে ওপারে যায়।

এখানে দুই বছর ধরে ভিক্ষা করছে পাঁচ বছর বয়সী জনি। সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত এখানে ভিক্ষা করে সে। ঝড়, বৃষ্টি রোদ যা-ই থাকুক না কেন জনির ভিক্ষা করা কোনো দিন বাদ যায় না। এত বড় রাস্তা এত গাড়ির মাঝে ভিক্ষা করতে ভয় লাগে না ? জনি বলে, ‘আমার সঙ্গে আমার মা আছে।’ কোথায় তোমার মা? ‘ওই যে ফুটপাথে লাল জামা পইরা বইসা আছে’। জনি আপনার কি হয়? ‘আমার ছেলে।’ নিজে ফুটপাতে বসে থেকে বাচ্চা ছেলেকে দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছেন কেন জানতে চাইলে জনির মা বলেন, ‘ভিক্ষা না করলে খামু কি? বাচ্চা দেখলে মানুষ মায়া কইরা ভিক্ষা বেশি দেয়। আমার মত জোয়ান মানুষ দেখলে ভিক্ষা দিতে চায় না।’ প্রতিদিন দুশো থেকে তিনশো টাকা আয় করে জনি।

ফার্মগেটের ওভারব্রিজের ওপর চার বছর ধরে ভিক্ষা করে মোহম্মদ আলী। ছোটবেলায় তার একটা পা কেটে ফেলা হয়। আট বছর বয়সী আলী জানে না কেন তার পা কেটে ফেলা হয়েছিল। এক খালার সঙ্গে ছোটবেলায় সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছিল সে। এখন ওভারব্রিজের ওপরেই থাকে। রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক এবং ওভারব্রিজগুলোর ওপরে শিশু ভিক্ষকদের বেশি দেখা যায়। অথচ রাজধানীসহ দেশের সব স্থানে শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে আদালতের নির্দেশ রয়েছে।

২০১০ সালের ৩০শে জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন দৈনিকে শিশুর অঙ্গহানি করে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট এলিনা খান বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। আদালত ২০১১ সালের ২রা জানুয়ারি শিশু ভিক্ষাবৃত্তিসহ সব ধরনের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। এই রুলের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের একই বেঞ্চ রাজধানীসহ দেশের সকল স্থানে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে পুলিশের আইজি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে একটি কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশের পর ওই বছরের ১৪ই জানুয়ারি ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বন্ধ হয়নি শিশু ভিক্ষাবৃত্তি।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, যতদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র এসব শিশুর দায়িত্ব না নেবে ততদিন পর্যন্ত শিশু ভিক্ষা বৃত্তি বন্ধ করা যাবে না। সরকারের শিশু ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে খুব বেশি আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। কারণ আমাদের দেশের সরকারগুলো রাজনৈতিক বিষয়গুলোতেই আগ্রহ দেখায় সামাজিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করে না। আমাদের দেশের  একটা সমস্যা হলো এখানে  নারী ও শিশুরা হচ্ছে সবচেয়ে অবহেলিত । এদের দেখিয়ে দেখিয়ে বিদেশ থেকে ফান্ড আনা হয় । কিন্তু  তাদের মূল্যায়ন করা হয় না। তিনি বলেন, শিশু ভিক্ষাবৃত্তি অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। এতে শিশুদের সৃষ্টিশীল জীবনধারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার কিছু অসাধু চক্র ছোট শিশুদের অঙ্গহানী করে তাদের দিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে। সরকারকে অবশ্যই এসব শিশুদের দায়িত্ব নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন অ্যাডভোকেট এলিনা খান।-এমজমিন   
১৮এপ্রিল২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে