সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০৯:৫৮:১৭

চাঞ্চল্যকর তথ্য! ফেসবুকে প্রতারক চক্রের ফাঁদে ঢাকার গৃহবধূরা

চাঞ্চল্যকর তথ্য! ফেসবুকে প্রতারক চক্রের ফাঁদে ঢাকার গৃহবধূরা

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ভয়ঙ্ক এক প্রতারণার ফাঁদে আটকে যাচ্ছেন ধনাঢ্য পরিবার সুন্দরী গৃহবধূরা। বিদেশি সেজে প্রথমে ফেসবুকে বন্ধুত্ব, পরে প্রেম এরপর তারা হারাচ্ছে নগদ অর্থ ও সম্মান। এমনই লোমহর্ষক ঘটনা এবার প্রকাশ্যে এসেছে এক গৃহবধূ অভিযোগ দায়ের করার পর থেকে।

সম্প্রতি সুলতানা (ছদ্মনাম) নামের এক গৃহবধূ উত্তরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আর এর থেকেই অনেক কিছু বের হয়ে আসে প্রতারক চক্রটি সম্পর্কে। আফ্রিকা ও বাংলাদেশের বিশাল একটি চক্র এই প্রতারণার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

ঘটনার সূত্র থেকে জানা যায়, সুলতানা (ছদ্মনাম)। থাকেন খুলনায়। তিনি স্কট মারি নামে এক যুবককে চেনেন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে। এ পরিচয়ে ফেসবুকে বন্ধুত্বও গড়ে উঠে। বিভিন্ন টেকনিক্যাল ডিভাইস হ্যাকড করে ঢাকায় বসেই লন্ডনে অবস্থানের কথা বলে ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটস অ্যাপসহ ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে কথাও বলতেন স্কট মারি।

একপর্যায়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর দামি গিফট পাঠানোর প্রস্তাব পান সুলতানা। এরপর বিমানবন্দর থেকে সেই গিফট ছাড়িয়ে আনতে গেলেই টের পান তিনি ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদে আটকে গেছেন। কিন্তু এর আগেই সর্বস্বান্ত তিনি। সংসারেরও টলমলে অবস্থা। এছাড়া প্রমা নামে আরেক গৃহবধূকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে তারা হাতিয়ে নিয়েছে ১৬ লাখ টাকা!

আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সুলতানার অভিযোগের পর অভিযান চালিয়ে জানতে পারে ভয়ংকর এ প্রতারণার মূলে আছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। আর বিদেশী এ প্রতারকদের সহযোগিতা করছে এ দেশীয় আরেকটি চক্র। যারা তাদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ টাকা ক্যাশ করে ভাগবাটোয়ারা করছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গত এক সপ্তাহ ধরে পরিচালিত এ অভিযানে বেশ ক’জন ইজেরিয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।

গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে একটি অনলাইন গণমাধ্যম জানিয়েছে, ফেসবুক ব্যবহার করে ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। ধনাঢ্য পরিবারের গৃহবধূ ও তরুণীদের সঙ্গে সম্পর্ক করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে এরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। একজন সুলতানা অভিযোগ করলেও অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে কোনো কথাই বলছেন না। তবে প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

সূত্রটি আরও জানায়, ঢাকায় বসে ইউরোপ-আমেরিকার ঠিকানায় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে এ প্রতারণা করে যাচ্ছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষগুলো। এ বিষয়ে বনানী ও উত্তরা পশ্চিম থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে।

জানা যায়, উত্তরা (পশ্চিম) থানার বাদী সুলতানা। ৫ মার্চ এ মামলাটি করা হয়। বনানী থানায় করা মামলার বাদী এসআই রফিকুল ইসলাম খান।

সুলতানা তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, নাইজেরিয়ার নাগরিক এডউইন ইডোসি নিজেকে ব্রিটিশ নাগরিক দাবি করে স্কট মারি নাম বলে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে। সে নিজেকে একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচয় দেয়। একপর্যায়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলে কিছু উপহারসামগ্রী পাঠানোর প্রস্তাব করে।

এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর দেড়টায় সাইফুল নামে একজন হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস অফিসের কর্মকর্তা পরিচয়ে সুলতানাকে ফোন দেন। তিনি জানান, ‘লন্ডন থেকে আপনার নামে কিছু পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি পরিবহন ও অন্যান্য চার্জ বাবদ ৬০ হাজার টাকা সিটি ব্যাংকের একটি শাখায় পরিশোধ করতে হবে।’

সে মোতাবেক ৬০ হাজার টাকা ওই দিনই ব্যাংকে জমা দেন সুলতানা। কিন্তু এরপরদিনই সাইফুল আবারও ফোন করে বলেন, ‘আপনার পার্সেলে বিদেশী মুদ্রা থাকার কারণে বিমানবন্দর থেকে ছাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।’

এ পর্যায়ে প্রতারক চক্রটি ভয় দেখিয়ে বলে, পার্সেলে বিদেশী মুদ্রা থাকায় আমার সমস্যা হতে পারে। টাকা পরিশোধের জন্য দেয়া হয় ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর। ভয়ে তিনি ৪ ফেব্রুয়ারি ওই অ্যাকাউন্টে এক লাখ টাকা জমা দেন। পরদিন থেকে সাইফুলের নম্বরটি বন্ধ।

গিফট না পেয়ে খুলনা থেকে ঢাকায় চলে আসেন সুলতানা। ৭ ফেব্রুয়ারি রাসেল নামে আরেকজন পার্সেল পেতে আরও দু’দিনের সময় চেয়ে ২ লাখ টাকা জমা দিতে বলেন। কিন্তু সুলতানা সাইফুলের যে কণ্ঠে গত দু’দিন কথা বলেছেন একই কণ্ঠ রাসেল নাম-পরিচয় দেয়ায় তার গোলকধাঁধা কেটে যায়।

তিনি যে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন তার কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন। তিনি সাইফুলের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে সে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়।

পরে তিনি বিমানবন্দর কাস্টমস অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারেন ওই নামে কোনো পার্সেল নেই। এবার প্রতারণার বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে উত্তরায় র‌্যাব-১ কার্যালয়ে গিয়ে বিষয়টি খোলাসা করেন।

এরপরই সাইফুল নামে যে যুবক সুলতানাকে ফোন করে টাকা নিয়েছে মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তাকে আটক করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

পরে জানা যায়, সাইফুল নামে যিনি ফোন করেছেন তার নাম এএসএম সুলতান মাহমুদ। তার সঙ্গে মাসুম মোকাররম নামে আরেকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩ নাইজেরিয়ান ও কেনিয়ার নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় ৩০টি মোবাইল সেট, চারটি ল্যাপটপ, ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকাও জব্দ করা হয়।

বনানী থানায় করা এসআই রফিকুল ইসলামের মামলায় দেয়া হয় আরও ভয়ংকর তথ্য। প্রমা নামে এক গৃহবধূকে ব্ল্যাকমেইল করে নাইজেরিয়ান আরেকটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ ঘটনায় তার সংসার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। মান-সম্মানের ভয়ে প্রমা মামলা করতেও রাজি হননি। পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার নির্দেশে রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন।

মামলায় বলা হয়, অপরাধী চক্রটি বাংলাদেশের শত শত নারীকে একইভাবে প্রতারণার জালে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিক সংঘাত ও আত্মসম্মানের ভয়ে অনেকে এ বিষয়ে অভিযোগ করতে পারছেন না। চক্রটি নারীদের সম্ভ্রম ও সরলতার সুযোগে প্রতারণার ফাঁদে আটকে ফেলছে। এরা দেশী-বিদেশী নারীর ছবি এডিট করে অশ্লীল ছবি বানিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছে।

পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, প্রমা নিজেও এরকম অশ্লীল প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তবে নাইজেরিয়ান নাগরিক আফোলায়ান নামে ওই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে ডিবি জিজ্ঞাসাবাদ করছে। বনানী ও উত্তরা (পশ্চিম) থানায় করা দুটি মামলাই তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭/৬৬ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা দুটি তদন্ত করছেন ডিবির সাইবার ক্রাইম টিমের ইন্সপেক্টর মো. রফিকুল ইসলাম।
১৮ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে