এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : সময়ের প্রয়োজনেই বদলে গিয়েছে আমাদের নাগরিক জীবনধারা। কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে যৌথ্য পারিবারিক ব্যাবস্থা। গড়ে উঠেছ আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ফ্লাট কালচার। সুউচ্চ ভবনের ঝকঝকে ফ্লাট। লিফট জেনারেটর, এয়ার কুলারের শীতল বাতাস। আলিশান গাড়ি। কৃত্তিম আলোয় উদ্ভাসিত এই নাগরিক জীবন দেখে ভাবতে পারেন আহা কি সুখ!কিন্তু আসলেই কি সুখি, ফ্লাটে বসবাস করা আধুনিক মানুষ গুলো?
কিছুদিন আগে মায়ের পরকিয়ার কারনে জীবন দিতে হয় সন্তানকে। নিজের মা খুন করে সন্তান কে! আবার বছর খানেক আগে স্বামীর পরকিয়া করে আশ্রীত বোনের সংঙ্গে নতুন ঘর করার কারনে, এক নারী তার দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মহত্যা করেন!
নগর জুড়ে এমন অনেক ঘটনা অহরহ ঘটছে, যা সামাজিক অবক্ষয়ের উদাহরণ। সুখ যেন ক্রমশ অধরা হয়ে যাচ্ছে। বাড়ি, গাড়ি, ফ্লাট, আসবাবপত্র, সহ দামী গহনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে নগরের মানুষ গুলো। বাড়ছে চাহিদা। বাড়ছে জীবন ধারনের খরচ। তাই বাড়ছে আয় করার জন্য চাপ?
পরিবারের কর্তা এখন ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা শ্রম দিচ্ছে টাকার জন্য। ফলাফলে পরিবার গুলোতে একা হয়ে পড়ছে স্বামী স্ত্রী সন্তাররা।
একাক্বিত্ত হতে বাচার জন্য নারীরা বেছে নিচ্ছে টেলিভিশন। ইন্ডিয়ান হিন্দি সিরিয়াল। যার প্রধান উপজিব্য বিষয় হলো পরকিয়া অথবা বিবাহ বহিভূত যৌন্য সর্ম্পক। এসব দেখেই বখে যাচ্ছে নারীরা। শুধু কি পরকিয়া? কোথাও কোথাও টাকার বিনিময়ে গৃহবধু, কলেজ ইউনুভার্সিটির নারীরা ঝুঁকছে পতীতাবৃত্তির মত পেশায়!
আগে যৌথ্য পরিবার গুলিতে পারিবারিক বিভিন্ন সম্যসায় ঘরের বয়োজোষ্ঠ্য সদস্য এগিয়ে আসতেন। শাসন ছিলো শৃংঙ্খলা ছিলো। সুখে দুঃখে এক অন্যকে সহযোগীতা করার মন মানুসিকতা ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ফ্লাট কালচার এতটাই যান্ত্রিক হয়ে গিয়েছে যে পাশের ঘরে মাুনষের মৃত্যু হলেও দরজা খুলতে চায় না প্রতিবেশী নামধারী মানুষ গুলো!
যৌথ পরিবারে সন্তান জন্ম নেবার পর সকলের আদর ভালোবাসা শাসন শৃংঙ্খলার মধ্যো দিয়ে বড় হতো। সকালে ঘুম থেকে উঠে একত্রে লেখা পড়া খেলাধুলা, আর সন্ধার আগেই ঘরে ফেরার রীতি ছিলো। পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য আলাদা আইন ছিলো। কিন্তু এসবই এখন স্মৃতি!
ফ্লাটের বাবা মায়েরা অনেক বেশি ব্যস্ত। তারা সন্তানদের খোজ খবর রাখেন না। সন্তান একাকীত্বে ভোগে। তাদের অলস মস্তিকে বাসা বাধে অপরাধ প্রবণতা। সব কিছু থাকার পরও ফ্লাটে একা থাকা সন্তান গুলো বড় হয় মানুসিক যন্ত্রনা নিয়ে। বাবা মায়ের দামী গিফট তাদের হৃদয়ের শূন্যতা পূরণ করতে পারেনা। তখন অনেক সময় বিপদগামী বন্ধুদের প্ররোচনায় পড়ে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মদ,গাজা, সিগেরেট, ইয়াবা এবং টিডিজেসিক ইনজেকশনে আসক্ত হয়ে পড়ে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, তাদের মা বাবা নিজেদের ব্যস্ততার কারণে সন্তানদের খোঁজ টুকুও নিতে পারেন না। যার ফলে বখে যাচ্ছে অনেক ভালো পরিবারের সন্তান। বর্তমানের তরুন তরুনীদের হাতে বাবা মায়েরা দিচ্ছে অঢেল টাকা। সেই টাকা দিয়ে তারা কি করছে এই খোজ নিতে সময় পাচ্ছেনা অভিভাবক। বন্ধুবেসি তরনের কাছে এক সময় আসে ছদ্মবেশী মাদক ব্যবসায়ি। তার প্ররোচনায় আসক্ত হচ্ছে মাদকে। ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও ইনজেকশন নেয় শরীরে।
ইয়াবার জন্য তাদের গন্তব্য হয়ে পড়ে ক্লাব হোটেল, মোটেল ও মাদক আস্তানা। তারা ফ্যাশনেবল গাড়িও ব্যবহার করে। বিশ্বের দামি ব্রান্ডের গাড়ি তাদের আভিজাত্য। লেটেস্ট গাড়ি কেনা নিয়ে চলে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। এসব গাড়িতে উচ্চ শব্দের হর্ণ কিংবা সাউন্ড সিস্টেম লাগিয়ে বেপরোয়া গতিতে তারা গাড়িও চালায়। আকাশ সংস্কৃতির যুগে এসব তরুণ তরুনী পুরোটাই বিদেশি সংস্কৃতি চর্চা করে। পাশ্চাত্যের গান, বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক, নতুন মডেলের মোটর সাইকেল ও গাড়ি ব্যবহার করে তারা।
ইয়াবা খেয়ে ইন্টারনেটে ন্যুড ছবি দেখে ও চ্যাট করেই তাদের সময় কাটে। বাবা সারাদিন ব্যস্ত থাকেন ব্যবসা আর মিটিং নিয়ে, মা ব্যস্ত থাকেন পার্টি নিয়ে। সন্তানদের প্রতি কোন নজরদারী নেই। কী করছে কী ভাবে তাদের সময় কাটছে তারা তা জানার চেষ্টা করেন না। বাড়িতে দারোয়ান, আয়া, বাবুর্চি ও খানসামা থাকলেও দিনের পর দিন বাড়িতে মা বাবার অনুপস্থিতিতে তারা একাকিত্বে ভোগে। এই হতাশায় বন্ধু বান্ধবী নিয়ে আড্ডা দিতে গিয়ে এক সময় তারা ইয়াবার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। মা বাবা যখন বুঝতে পারেন তখন আর তাদের করার কিছু থাকে না।
গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডি, ডিওএইচএসসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকার অসংখ্য ছেলেমেয়ে ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করছে, বিক্রি করছে এমন কি পাইকারি ব্যবসায়ও নেমেছে। এরা কোটিপতি, শিল্পপতি, রাজনীতিক, সাবেক মন্ত্রী, আমলা এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেমেয়ে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কিশোর-তরুণ তরুণীদের সংখ্যাই বেশি। পিছিয়ে নেই মধ্যেবৃত্ত ঘরের সন্তানরাও।
ভয়াবহ হয়ে উঠছে সমাজের অলি গলি। ঐশী নামের মেয়েটি কথাও ভুলে গেলে চলবে না। পুলিশ অফিসার বাবার সন্তান হয়েও মাদক থেকে সে রেহাই পায়নি। আর মাদকাসক্ত এই কিশোরী নিজ হাতে খুন করেছে জন্মদাতা পিতা মাতাকে!
প্রশ্ন উঠতেই পারে ক্যান্সারে আক্রান্ত এই ফ্লাটকালচার সমাজের ভবিতষ্যত কি?
বন্ধনহীন বেড়ে উঠা নাগরিক সমাজের মানুষ গুলোর ভবিতষ্যত নিয়ে আসলেই ভেবে দেখা দরকার। ফ্লাটে বসবাস করা নারীর ক্রমশ হিংস হয়ে উঠছে। আদুরীর মত অনেক গৃহকর্মীই পাশবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আধুনিকতার খোলসে যে অসভ্য সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তার পতন তো অনিবার্য্য।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/