বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬, ০১:৫৩:০১

পৃথিবী সেরা পাঁচ ধনী দেশ

পৃথিবী সেরা পাঁচ ধনী দেশ

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। জাতীয় উৎপাদনের ভিত্তিতে তৈরিকৃত ওই পরিসংখ্যানে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে দেশগুলোর মানুষের ক্রয়সক্ষমতার বিষয়টিও। তাহলে আসুন আইএমএফের র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনী দেশগুলো কোনটি? জেনে নিই।

চীন : রাজধানী : বেইজিং, ভৌগোলিক অবস্থান : পূর্ব এশিয়া, আয়তন : ৯৬ লাখ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা : ১৩০ কোটি, প্রধান ভাষা : মান্দারিন, মুদ্রা : রেনমিনবি, শাসনব্যবস্থা: একদলীয় (১৯৪৯ সাল থেকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায়), আইনসভা : ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস, প্রদেশ : ২২টি, বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল : হংকং, ম্যাকাও, তাইওয়ান। জাতীয়তা : জনসংখ্যার শতকরা ৯০ শতাংশ চৈনিক হান জাতি, অবিশষ্টদের মধ্যে রয়েছে আরো ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী, প্রধান ধর্ম : প্রধানত বৌদ্ধ, মুসলমান জনসংখ্যা : দুই কোটি ৩৫ লাখ প্রায়।

এ দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী। দীর্ঘ দিনের একক মার্কিন আধিপত্যকে পেছনে ফেলে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো তালিকার শীর্ষে ওঠে এসছে এ দেশটি। চলতি বছরেও বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীন। বিগত অর্থবছরে চীনের জিডিপির পরিমাণ ১৯ লাখ ৫১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৭ দশমিক নয় শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র : রাজধানী : ওয়াশিংটন ডিসি, ভৌগোলিক অবস্থান : উত্তর আমেরিকা, আয়তন : ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ৩০৬ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা ৩০ কোটি ৯ লাখ, রাষ্ট্রভাষা : ইংরেজি, মুদ্রা : মার্কিন ডলার, শাসনব্যবস্থা : প্রজাতান্ত্রিক, আইনসভা : দুই কক্ষবিশিষ্ট (উচ্চকক্ষ-সিনেট ও নিম্নকক্ষ-হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস), ধর্ম : প্রধানত খ্রিষ্টান, মুসলমান জনসংখ্যা : ২৮ লাখ।

তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানুষের কাছে স্বপ্নের দেশ হিসেবে পরিচিত এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এটি। ১৮৭২ সাল থেকে টানা প্রায় দেড় শ’ বছর শীর্ষ ধনী দেশের স্থানটি ছিল তাদের দখলে। ২০১৪ সালে প্রথমবার চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে, ২০১৫ সালেও যা অব্যাহত থাকে। এ বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জাতীয় উৎপাদন ছিল ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে তিন দশমিক ছয় শতাংশ বেশি।

৫০টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে গঠিত ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রের সমাজব্যবস্থা। বহু সংস্কৃতির মিশেল রয়েছে এর জনজীবনে।

ভারত :  রাজধানী : নয়াদিল্লি, ভৌগোলিক অবস্থান : দক্ষিণ এশিয়া, আয়তন : ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ৪১৪ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা : ১২৫ কোটি প্রায়, মুদ্রা : ভারতীয় রুপি, প্রধান ভাষা : হিন্দি, শাসনব্যবস্থা : বহুদলীয় গণতন্ত্র, আইনসভা : দ্বিকক্ষবিশিষ্ট (উচ্চকক্ষ- লোকসভা, নিম্নকক্ষ-বিধান সভা), ধর্ম : প্রধানত হিন্দু, মুসলমান জনসংখ্যা : ১৮ কোটি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী ২০১৫ সালে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এ বছর ভারতের মোট জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ ৮ লাখ ২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে শতকরা ৮ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আয়তনে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর সপ্তম। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে চীনের পরই ভারতের অবস্থান।

অতি প্রাচীনকাল থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ, ব্যবসায় বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ভরপুর ভারতীয় ভূখণ্ড। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেও এই দেশটি এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এ কারণেই ষোড়শ শতক থেকেই এখানে ব্রিটিশ, পর্তুগিজ, ডাচ, ফরাসিসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় বণিকেরা আসতে শুরু করে।

সে সময় প্রবল পরাক্রমশালী মুঘল সম্রাটরা ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করছিল। তবে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকেরা ধীরে ধীরে এখানে তাদের অবস্থান শক্ত করতে থাকে। দেশীয় শাসকদের কোন্দলের সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেশের অনেক এলাকা তাদের দখলে নেয়। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষ পুরোপুরি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়।

জাপান :  রাজধানী : টোকিও, ভৌগোলিক অবস্থান : পূর্ব এশিয়া, আয়তন : ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৪ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা : ১২ কোটি ৭০ লাখ, শাসনব্যবস্থা : সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, পার্লামেন্ট : দুই কক্ষবিশিষ্ট (উচ্চকক্ষ হাউজ অব কাউন্সিলরস, নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস)। মুদ্রা : ইয়েন, প্রধান ভাষা : জাপানিজ, ভাষা : মুসলিম, জনসংখ্যা : ২ লাখ।

বিশ্বের ধনী দেশের তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে এ দেশটি। শিল্পসমৃদ্ধ দেশটির এ বছরে মোট জাতীয় উৎপাদন চার লাখ ৮৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরে চেয়ে এক দশমিক ছয় শতাংশ বেশি।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র জাপান। চারটি বৃহৎ দ্বীপসহ প্রায় ছয় হাজার ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত জাপান। হোনশু, হোক্কাইদো, কুশু ও শিকোকু দ্বীপগুলোতেই জাপানের মূল ভুখণ্ড। ১২ শ’ শতাব্দী থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত শোগুন নামক একক শাসকেরা জাপানকে শাসন করতেন।

১৮৬৮ সালে দীর্ঘ দিনের গৃহযুদ্ধের পর মেইজি সম্রাট ক্ষমতায় এলে জাপান সাম্রাজ্য পনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। দিনে দিনে সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে জাপান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তারা জয়ী হয় তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দেশটির হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে মার্কিন পারমাণবিক বোমা আঘাত হানার পর পাল্টে যায় জাপানের রাজনৈতিক দৃশ্যপট। ১৯৪৭ সালে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র গৃহীত হয় জাপানে।

জার্মানি : সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী জার্মানি, রাজধানী : বার্লিন, অবস্থান : পশ্চিম ইউরোপ, আয়তন : ৩ লাখ ৫৭ হাজার ১৬৮ বর্গকিলোমিটার, শাসনব্যবস্থা : প্রজাতান্ত্রিক, পার্লামেন্ট : দুই কক্ষবিশিষ্ট (উচ্চকক্ষ-বুন্দেসরাট, নিম্নকক্ষ-বুন্দেসতাগ), অঙ্গরাজ্য : ১৬টি, মুদ্রা : ইউরো, প্রধান ভাষা : জার্মান, ধর্ম : প্রধানত খ্রিষ্টান, মোট জনসংখ্যা : ৮ কোটি ১০ লাখ, মুসলিম জনসংখ্যা : ৪৪ লাখ প্রায়।

সেরা পাঁচ ধনী দেশের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে পশ্চিম ইউরোপের এ দেশটি। এ বছর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী জার্মানির মোট জাতীয় উৎপাদন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ বেশি।

জাতি হিসেবে জার্মানির রয়েছে সুপ্রাচীন ইতিহাস। ঐতিহাসিক রোমান সাম্রাজ্যসহ বেশ কিছু প্রাচীন সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল জার্মানি। তবে সে সময় বিভিন্ন অংশে বিভক্ত ছিল দেশটি। ১৮১৫ সালে প্রথম জার্মানির রাজ্যগুলোকে নিয়ে একটি কনফেডারেশন গঠিত হয়। এরপর দেশটি শিল্প ও সামরিক খাতে ব্যাপক উন্নত হয়। তবে সমগ্র ইউরোপ আধিপত্য বিস্তার শুরু করলে ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। সেই যুদ্ধে পরাজয়ের পর আবার বিশৃঙ্খলা শুরু হয় দেশটিতে।

৩০-এর দশকে এডলফ হিটলারের নেতৃত্বে উগ্র জাতীয়তাবাদী নাৎসি পার্টি ক্ষমতায় আসে জার্মানিতে। একনায়ক হিটলারের অধীনে আবার শুরু হয় জার্মানির আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা। তবে সে চেষ্টাও সফল হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আবার পরাজিত হয় তারা। এরপর মিত্রশক্তি জার্মানিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে নেয়।

ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত রাশিয়া একেকটি অঞ্চলের দায়িত্ব পায়। সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে পশ্চিমাদের বিরোধের জের ধরে চল্লিশের দশকের শেষ দিকে তাদের নিয়ন্ত্রিত অংশটি পূর্ব জার্মানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আর অন্য তিনটি অংশ নিয়ে জন্ম নেয় পশ্চিম জার্মানি নামক দেশ। রাজধানী বার্লিনকে দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়।
২৭ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে