বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:০৮:৫৬

অভিমানে ৪০ বছর ভবঘুরে

অভিমানে ৪০ বছর ভবঘুরে

বরগুনা : ভাবীর সাথে সামান্য কথা কাটাকাটি করে রাগে-অভিমানে ভরদুপুরে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন ২০ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তার সিকদার। সুদীর্ঘ ৪০ বছর নিখোঁজ থাকার পর আরেক ভরদুপুরে তিনি বাড়ি ফিরেছেন।

আবদুস সত্তার বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের অযোধ্যা গ্রামের সিকদার বাড়ির মৃত সবেদ আলী সিকদারের ছোট ছেলে। গত চারদিন আগে বাড়ি ফিরে আসেন। গ্রামের মানুষ আঃ সত্তারকে এক নজর দেখতে ভিড় করছে অযোধ্যার সিকদারবাড়িতে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মৃত সবেদ আলী সিকদারের চার ছেলে। মেজ ও সেঝ ছেলে মারা গেছেন। কেবল বেঁচে আছেন বড় ছেলে আব্দুল হামিদ সিকদার। আর ফিরে আসা আব্দুস সত্তার সবার ছোট।

আব্দুস সত্তার টানা ৪০ বছর নিরুদ্দেশ থাকায় স্বজনরা তার অপেক্ষায় ছেড়ে দিয়েছিল। তারা ধরে নিয়েছিল সত্তার হয়ত এখন আর বেঁচে নেই।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার দুপুরে ষাটোর্ধ একজন মানুষ অযোধ্যো গ্রামে এসে সিকদার বাড়ির লোকজনদের খোঁজ-খবর জানতে চান। আঃ সত্তার দাবি করেন, সবেদ আলী সিকদারের ছোট ছেলে তিনি। যে ২০ বছর বয়সে ৪০ বছর আগে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হন।

এত বছরে কেউ তার চেহারা মনে করতে পারছিলেন না। এরপর নাছোরবান্দা সত্তারকে নিয়ে যাওয়া হয় তার ৯৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা বোন হাজেরা বেগমের কাছে। তিনি শেষ অবধি সত্তারকে শনাক্ত করে বলে ওঠেন এডা দেহি মোগো সত্তার। পরে এ খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী সত্তারকে এক নজর দেখতে বাড়িতে ভিড় জমায়।

হাজেরা বেগম জানান, ছোট বেলায় সত্তারের ডান পায়ের উড়–তে গরম ভাতের মাড় পড়ে পুড়ে গিয়েছিল। এটা তার মনে আছে। ওই দাগ দেখেই সে তার ছোটভাই সত্তারকে চিনতে পেরেছেন। এত দিন পর রক্তের ভাইকে পেয়ে তিনি ভীষণ খুশি।

স্বজনদের মাঝে ফিরে আসা আঃ সত্তার জানান, বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে অভিমান করে একদিন দুপুরে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। এরপর মাঠে-ঘাটে আর মসজিদ-মাজারে কাটে তার দিন। তারপর একসময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন টানা ২০ বছর।

এসময় বাড়ি ঘরের কোন স্মৃতিই মনে পড়েনি তার। আজ থেকে ১০ বছর আগে ভারতের আজমীর শরীফে চলে যান তিনি। সেখানে মাজারের প্রাত্যহিক পরিচর্যার কাজ শুরু করেন। অতি সম্প্রতি একদিন নামাজ আদায়ের পর তিনি স্মরণ শক্তি ফিরে পান।

৪০ বছর আগে ফেলে আসা ঘর আর স্বজনদের কথা মনে পড়ে তার। স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান তিনি। সেই থেকে বাড়ি ফেরার টান। সেই টানে বহু কষ্টে গত বুধবার দুপুরে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি।

সত্তার জানান, সামান্য অভিমানে ৪০ বছর জীবন থেকে ঝড়ে গেছে। আমি এখন পরিবারের স্বজনদের নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চাই।

সত্তারের বড়ভাই অশীতিপর আব্দুল হামিদ সিকদার ভাই ফিরে আসার পর থেকেই অবিরত কাঁদছেন। এই কান্না সুখের কান্না। হারানো স্বজন ফিরে আসলে এমন কান্না হয় উল্লেখ করে ভাই আব্দুল হামিদ বলেন, আল্লাহর অসীম দয়ায় ভাইকে ফেরত পেয়েছি। জীবনের শেষ বেলায় এসে বড় সুখ লাগছে আমার ও পবিারের।

গ্রামের কাঠমিস্ত্রী শুকুর সিকদার বলেন, সত্তার চাচারে যখন দেখেছি তখন আমি খুব ছোট। সে খুব ভাল ফুটবল খেলত।

এ ব্যাপারে রামনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জমাদ্দার বলেন, সত্তার ৪০ বছর নিরুদ্দেশ ছিলেন। এত বছর পর একটা মানুষ ফিরে আসায় শুধু তার পরিবারই নয়, স্থানীয়রাও এখন আনন্দিত।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে