বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:১২:৪৫

হোটেল ফোর টোয়েন্টি!

হোটেল ফোর টোয়েন্টি!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : রাজধানীতে বিভিন্ন নামে বহু হোটেল-রেস্টুরেন্ট রয়েছে। নামের আমি, নামের তুমি, নাম দিয়ে যায় চেনা, নাম যে বড় ফালতু জিনিস যায় না তারে কেনা। কিন্তু পুরান ঢাকায় এমন একটি হোটেলের সন্ধান পাওয়া গেছে যার নাম ফোর টোয়েন্টি (৪২০)। একেবারেই বিচিত্র একটি নাম।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, হোটেলের নামও যেমন কামও তেমন। এর পাশে একই মালিকের আরেকটি হোটেল রয়েছে। নাম তার উনিশ বিশ। পুলিশের দাবি, হোটেল দুটির নাম পাল্টানোর ব্যাপারে অনেকবার বলেও কাজ হয়নি। পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানা মোড়ে এ দুটি হোটেলের অবস্থান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আবদুল হান্নান নামে এক ব্যক্তি গত ১৫ বছর ধরে সেখানে হোটেল ব্যবসা করে আসছেন। এখন তিনি তিনটি হোটেলের মালিক। একটি ফোর টোয়েন্টি, একটি উনিশ বিশ এবং অন্যটির নাম রহমানিয়া হোটেল। তিনটিতেই তিনজন ম্যানেজার রেখেছেন। কর্মচারী আছে হাতেগোনা কয়েকজন। কিš‘ তাদের বেতন তেমন একটা দেয়া হয় না। হোটেলগুলোর পরিবেশও উন্নত নয়। অথচ খাবারের দাম মতিঝিলের চেয়েও বেশি।

এ প্রসঙ্গে হোটেল ফোর টোয়েন্টি এর কর্মচারী এমদাদ বলেন, ‘এটি মূলত বিরিয়ানির হোটেল। প্রতি প্যাকেট কা”িচ ও চিকেন বিরিয়ানির মূল্য ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। এই হোটেলে বসে খুব কম লোকই খায়। সবাই প্যাকেট করে নিয়ে যায় বাসা-বাড়িতে। বিক্রি হয় বেশ ভালোই। তবে দুজন মিলে কাজ করি ৬ জনের। সেই হিসেবে বেতন পায় না।’

একই মালিকের ১৯/২০ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, বহু লোক দুপুরের লাঞ্চ করছেন। আবার কেউ দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় আছেন। কিš‘ হোটেল বয় পর্যাপ্ত সংখ্যক না থাকায় হিমশিম খা”েছন তারা। বারবার মালিককে বলেও নাকি কোনো কাজ হয়নি। হোটেলের পেছনে গিয়ে দেখা যায়, স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে রান্নাবান্না এবং ধোয়া মোছার কাজ চলছে। ওই পরিবেশের ছবি তুলতে চাইলে কর্মচারীরা বাধা দেন।

এ হোটেলের কর্মচারী জয়নাল শেখ বলেন, ‘আপনি কি সাংবাদিক।’ পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, ‘আগে এটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ছিল। এই এলাকায় চাইনিজ রেস্টুরেন্টে তেমন একটা লাভ না হওয়ায় তা বাদ দিয়ে এ ব্যবসা শুর“ করেছেন মালিক।’

হোটেল কেমন চলে এ প্রশ্নের উত্তরে জয়নাল বলেন, ‘তিনটি হোটেলই খুব ভালো চলে। না চললে মালিকের মেয়ে চীনে ডাক্তারি পড়ে কিভাবে? আরো দুই ছেলেমেয়ে কলেজে পড়ছে। আর আমাগো বেতন-ভাতার সময় যত অজুহাত।’

পাশেই রহমানিয়া হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, এটি একটি নিম্নমানের হোটেল। চেয়ার-টেবিলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। মেঝের অব¯’া একেবারেই যা”েছতাই। ম্যানেজার হালিম জানান, ‘এখানে রিকশা-ভ্যান ওয়ালারা বেশি খায়। একটু কম দামে পায় তাই তারা এখানে আসে।’ কিš‘ এক কাস্টমার তৎক্ষণাৎ জানান, খাবারের মান নিম্নমানের হতে পারে, তবে দাম নিম্ন নয়।

পাশের মুদি দোকানদার ইমতিয়াজ বলেন, ‘মালিকটাই তো ফোর টোয়েন্টি। কানে কানে একটা গোপন কথা বলি, মরা মুরগি সরবরাহ করা হয় এখানে। আর খাসির মাংস বলে ভেড়ার মাংস চালিয়ে দেয়া হয়। পাশে থানা থাকলেও কিছু হয় না। থানায় নিয়মিত খাবার সাপ্লাই করা হয় এখান থেকে। তাছাড়া মালিক হান্নান যুবলীগের একজন ¯’ানীয় নেতা। যে কারণে কেউ কিছু বলার সাহস পান না।’

এ বিষয়ে হোটেল মালিক আব্দুল হান্নানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ভিন্ন কথা। তার মতে, ‘আজ থেকে ১০ বছর আগে দেশের মানুষ অনেক ভালো ছিল। এখন লোকজন অনেক খারাপ। আমি ব্যবসা করি। আমি তো খারাপ মানুষদের ভালো পথে আনতে পারব না। কিংবা তাদের ভালো করতে কোনো প্রচারণাও চালাতে পারি না। তাই অভিনব কায়দায় মানুষের খারাপ চরিত্রকে এভাবে ফুটিয়ে তুলেছি সাইনবোর্ডের মাধ্যমে। যাতে মানুষ ভালো হতে পারে।’

সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আগে আমি যুবলীগ করলেও এখন কোনো রাজনীতি করি না। তিন হোটেল দেখাশোনা করে কোনোরকম দিনাতিপাত করছি। খাবারের দামও বেশি না। এখান থেকে যা আয় হয় কর্মচারীদের দেই এবং নিজের কিছু থাকে।’ ইনকাম ট্যাক্স দেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ইনকাম ট্যাক্স হয় না। ছেলে-মেয়েদের পড়ার খরচ ও সংসার চালানোর পর আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তাই কর দেয়া হয় না।’

এ প্রসঙ্গে সূত্রাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খলিলুর রহমান জানান, অনেক বলেও কাজ হয়নি। এখন আর বলা হয় না তেমন একটা। কারো অভিযোগ নেই। তাই কিছু বলা হয় না। আর এ সব হোটেল থেকে পুলিশের ফ্রি খাওয়ার বিষয়ে তিনি প্রথমে এড়িয়ে গেলেও পরে বলেন, ওরা আবার টাকা দেয় নাকি? ওরা টাকা পাবে কোথায়?Ñযায়যায়দিন।
২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে