ইকবাল খন্দকার: আমার এক বন্ধুর ফোনে ঘুম ভাঙল। আমি ঘুমঘুম গলায় জিজ্ঞেস করলাম, কীরে, এত সকালে ফোন দিলি যে? কোনো সমস্যা না তো? বন্ধু বলল, না, সমস্যা না। আবার সমস্যাও। আচ্ছা, তোর জানামতে ভালো ছড়ার বই আছে? আমি বললাম, ভালো ছড়ার বই আবার কোনটা। কিছু দিন আগে আমার সঙ্গে দোকানে গিয়ে যে বইটা কিনেছিলি, সেটা তো বেশ ভালো ছিল। বইটা কি ছিঁড়ে ফেলেছে? বন্ধু বলল, ছিঁড়ে ফেলেনি। তবে আমি চাইছি না এই বইটা থেকে আমার বাচ্চা ছড়া মুখস্থ করুক। যদিও বইয়ের শুধুমাত্র একটা ছড়া নিয়েই আমার আপত্তি। অন্যগুলো অবশ্য ঠিক আছে। তবু আমি চাই এই বইটা বাড়িতে না থাক। কারণ বলা তো যায় না, যে ছড়াটা নিয়ে আমার আপত্তি, সেটাই কখন আবার আমার বাচ্চা মুখস্থ করে ফেলে। আমি বললাম, কোন ছড়াটা নিয়ে তোর আপত্তি একটু বল তো! বন্ধু বলল ওই যে বৃষ্টির ছড়াটা নিয়ে। ‘আয় বৃষ্টি ঝেপে, ধান দেবো মেপে’। এই ছড়াটা যদি আমার বাচ্চা মুখস্থ করে ফেলে আর যখন তখন যদি বলে আয় বৃষ্টি ঝেপে, তাহলে তো বৃষ্টি চলে আসতে পারে বজ্রপাতসহ। তখন? আমি আর কথা বাড়ালাম না। চালাকি করে লাইন কেটে দিয়ে মোবাইলটা বালিশের পাশে রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘণ্টা দেড়েক পর ঘুম থেকে উঠে তো মাথাখারাপ অবস্থা। যথাস্থানে মোবাইল নেই। দামি মোবাইল, নতুন মোবাইল। এই মোবাইল চুরি হয়ে গেলে কান্নাকাটি ছাড়া উপায় আছে? শুরু করলাম কান্নাকাটি। আমার কান্নাকাটিতে যখন পুরো বাসা মাথায় ওঠে ওঠে অবস্থা, ঠিক তখনই একজন এসে বলল, আমার ফোন নাকি বারান্দার চেয়ারে রাখা আছে। আমি বালিশের পাশ থেকে মোবাইল বারান্দায় যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানলাম, মোবাইলে যেহেতু ধাতব পদার্থ আছে, তাই এটা বজ্রপাতকে আকর্ষণ করতে পারে। এই জন্য মাথার কাছ থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। চুরি হয়ে যাওয়ার ভয় না থাকলে নাকি বাসার পাশের মাঠে রেখে আসা হতো। আমার এক বড় ভাই বললেন, বুঝলি ছোট ভাই, যা দিনকাল পড়ছে, সবার হাতে একটা করে হ্যান্ডমাইক রাখতে হবে।
আমি বললাম, হ্যান্ডমাইক রাখতে হবে কেন? বড় ভাই বললেন, হ্যান্ডমাইক রাখতে হবে এই জন্য, নরমাল টোনে কথা বললে কেউ শুনতে পাবে না। কিন্তু সব কথা তো আর চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলা সম্ভব নয়। এত চিল্লাতে গেলে গলার রগ ছিঁড়ে যাবে। হ্যান্ডমাইক দিয়ে কথা বললে যে বলবে তারও সুবিধা, যে শুনবে তারও সুবিধা। আমি বললাম, সব বুঝলাম। কিন্তু নরমাল টোনে কথা বললে মানুষ কেন শুনবে না, সেটা তো বুঝতে পারলাম না। বড় ভাই বললেন এই যে বৃষ্টি শুরু হলেই ঠাসঠাস করে বাজ পড়া শুরু হয়, কানের কাছে এত জোরে বাজ পড়লে কানের পর্দা আস্ত থাকবে ভেবেছিস? পর্দাই যদি আস্ত না থাকে, তাহলে মানুষ কানে শুনবে কী দিয়ে? -বিডি প্রতিদিন
১৬ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ