বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬, ০৫:০৬:০৮

‘বর্তমান যুগের আধুনিক মেয়েরা রোমান্স বোঝে না’

‘বর্তমান যুগের আধুনিক মেয়েরা রোমান্স বোঝে না’

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ১০০ বছর বয়স হতে রবিন ডাল্টনের বাকি আছে আর মাত্র ৫ বছর। এক সময়ের চটপটে, বুদ্ধিমতি ও সুন্দরী এই নারীর স্বাস্থ্যের খবর নিচ্ছেন তারই শুভাকাঙ্ক্ষী ডায়ানা অ্যাথিল।

ডায়ানা জিজ্ঞাসা করলেন, রাতে ঘুম হয় তো? না, ভালো ঘুম হয় না, বললেন রবিন। হাসতে হাসতে বললেন, তার চেয়ে ভালো লাগে যাদের সঙ্গে বিছানায় শুয়েছিলাম তাদের কথা চিন্তা করতে।  শুনে হাসলেন ডায়ানাও। খবর টেলিগ্রাফের।

ফেলে আসা অতীতের কথা ভাবতে থাকলেন ৯৫ বছর বয়সী রবিন। সে কি দিন ছিল! তিনি সেই নারীদের একজন যারা বিভিন্ন যুদ্ধ দেখেছেন এবং তাতে অংশ নিয়েছে। জীবনে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা তাদের জীবনের স্থায়ী রোমাঞ্চ। তিনি কাজ করতেন ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চে। গুপ্তচরবৃত্তি যার পেশা ছিল, তার জীবন রোমাঞ্চে ঠাসা।

তিনটি বিয়ে করেছেন, বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন অসংখ্য। তবে একটা বড় পার্থক্য স্পষ্ট বুঝছেন। আধুনিক যুগের মেয়েরা রোমান্স কাকে বলে তা জানে না। তার সময় প্রথমে রোমান্স। সেখান থেকে ভালোবাসা এবং তার পরই কেবল মিলিত হতেন। তাই নারী-পুরুষের মিলন বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া সম্ভব ছিল না। আর এখন, কোথায় রোমান্স!

প্রথমে গুপ্তচর হিসাবে কাজ করলেও পরবর্তীতে সাহিত্য ও নাটকের জগতের একজন এজেন্ট হিসাবে কাজ শুরু করেন। এ সুবাদে বহু সাহিত্যিকের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। জন অসবর্ন, আর্থার মিলার, জর্জ অরওয়েল, এডনা ও'ব্রিয়েন, আইরিশ মারডক, মার্গারেট ড্র্যাবল এবং লরেনর্স অলিভারসহ বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার। এ পেশায় সফল হয়ে ওঠা চিন্তাধারায় খুব বেশি কাজ করে না, জানালেন রবিন। লিটারারি এজেন্টদের প্রচুর প্রাণশক্তি থাকতে হয়। ক্লায়েন্টদের প্রচুর সময় দিতে হয়।

রবিন ইয়াকিন তার পূর্ব নাম। বড় হয়েছেন সিডনির বোহেমিয়ান কিংস ক্রসে। তার বাবা ছিলেন চিকিৎসক। তাকে সবাই 'গান ডক' বলা হতো। কারণ আন্ডারওয়ার্ল্ডের যত অপারাধী ছিল তার রোগী। ছোটকাল থেকেই লেখালেখির প্রতি আগ্রহ ছিল তার। মাত্র ৮ বছর বয়সে লেখা একটি ফিকশন এখনো যত্নে রেখে দিয়েছেন।

স্কুলে থাকা অবস্থায় যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। সুসানের স্কুলে তবুও যেতে হতো তার। কিন্তু যুদ্ধের আবহাওয়ার তাকে রোমাঞ্চিত করতো। ১৮ বছর বয়সে ব্যারিস্টার জন স্পেন্সারের সঙ্গে বিয়েটা ছিল এক দুর্ঘটনা। পাঁচ মাস পরই তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। তার সেই স্বামী ছিলেন মদ্যপ এবং অত্যাচারী।
 
কিন্তু তখন অস্ট্রেলিয়ান সমাজে ডিভোর্স ছিল লজ্জার বিষয়। সংবাদপত্রের বিলবোর্ডে 'সোসাইট ডিভোর্স' বিষয়ে কিছু লেখা থাকতো। কিন্তু আমার পরিবার বিষয়গুলো বুঝতেন। খুব সুন্দরভাবে তার অস্বস্তিকর বিবাহিত জীবনের ইতি ঘটিয়েছিল পরিবার।

এরপর সাউথ-ওয়েস্ট প্যাসিফিক এরিয়ার অর্ডন্যান্স ডিপার্টমেন্টের কমান্ডিং অফিসার হিসাবে কাজ শুরু করেন। এক ব্রিটিশ নাভাল অফিসারের প্রেমে পড়েন। তার নাম ডেভিড মিলফোর্ড হাভেন। তিনি ছিলেন গ্রিসের প্রিন্স ফিলিপের কাজিন ও বন্ধু। প্রিন্স ফিলিপের তখন প্রিন্সেস এলিজাবেথকে বিয়ে করার কথা। কিন্তু এই অসম বিয়ে শেষ পর্যন্ত হলো না। পরে অস্ট্রেলিয়া থেকে বেরোনোর জন্যে তিনি এক স্কটিশ প্যারাট্রুপারের সঙ্গে উড়াল দেন।

একটি বোমারু বিমানে চেপে ১৯৪৬ সালের এপ্রিলে ইংল্যান্ডে পৌঁছান তিনি। স্বামীর পরিবার তাকে বুকে জড়িয়ে নিতে অপেক্ষায় ছিলেন। দুই সপ্তাহ পর তিনি তার ডেভিড হাভেনের প্রেমে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বামীকে বলেন এবং তার কাছেই চলে যান।

ডেভিডের সঙ্গে ৫টি সুন্দর বসন্ত কাটিয়েছিলেন রবিন। তারা আজীবনের বন্ধু বনে যান। রানি ভিক্টোরিয়ার কোনো বংশধর একজন ডিভোর্সপ্রাপ্তকে বিয়ে করতে পারেন না। হয়তো ডেভিড নিয়মটি নাও মানতে পারবেন। কিন্তু যাইহোক, তিনি সেভাবে বড় হননি।

যুদ্ধের পরে রবিন প্রবেশ করলেন লন্ডনের সাহিত্যিক, শিল্পী ও শিল্পানুরাগীদের অভিজাত সমাজে। তার প্রতিটা দিন অসম্ভব আনন্দে কাটতে লাগলো। তখন তিনি কোনো সংবাদপত্রের সম্ভাবনাময় সাংবাদিক হিসাবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারতেন।

সেই সময়কার অভিজাত সমাজের পোশাক এখনো তার দেহ শোভা পায়। হাঁটু অবদি পড়ে থাকা ধূসর স্কার্ট এবং একই রংয়ের সিল্কের ব্লাউজ, যাতে ভি নেকের কালো লেস একটু স্পষ্ট হয়।

এক ককটেল পার্টিতে তার চেয়ে কম বয়সী এমেন ডাল্টন নামের এক চিকিৎসকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। এই ভদ্রলোককে বিয়ে করেন রবিন। একটা সময় থাইল্যান্ডের প্রিন্স চুলার সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে তিনি থাই সরকারের গুপ্তচর হয়ে কাজ শুরু করেন। সিনেমা বা বইয়ের গুপ্তচরদের যেভাবে আমরা দেখি, ঠিক তেমনভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাকে।

এমেট মারা যান মাত্র ৩৩ বছর বয়সে। হৃদযন্ত্রে অস্ত্রপচারের পর দুই দিন টিকে ছিলেন। তাদের ঘরে তখন দুই সন্তান। একজন লিসা, চিত্রশিল্পী যার বয়স ৬১। আরেকজন ৫৯ বছর বয়সী সিমাস। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত চিকিৎসক।

এমটকে তিনি ভুলতে পারেন না। বলেন, তাকে ছাড়া আজকের আমি হয় অন্যরকম মানুষ হতাম। তার সঙ্গে বিয়ে এবং এই সন্তানরাই আমার জীবন।     

তার তৃতীয় বিয়েটা হয় সাহিত্যিক, নাটক রচয়িতা এবং পরিচালক উইলিয়াম ফেয়ারচাইল্ডের সঙ্গে। তারা একসঙ্গে ২৯ বছর সময় কাটিয়েছেন। তৃতীয় স্বামী মারা যান ২০০২ সালে।

বর্তমানটাই তার কাছে যেন মৃত্যু। একে সহজে গ্রহণ করতে চান। ছোটকালে বহু মৃত আত্মীয়ের ছবি পাশে নিয়ে সময় কাটাচ্ছেন তিনি। এখন তাদের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায়। শেষ দিনগুলোকে মেনে নিয়েছেন রবিন। এখন মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
১৮ মে ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে