এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ২০তম বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হলো সাম্বার দেশ ব্রাজিলে। ৩২টি দেশের অংশগ্রহণে এ বিশ্বকাপ জন্ম দিয়েছে ছোট বড় অসংখ্য ঘটনার। তার মধ্যে যেসব ঘটনা স্মরণীয় হয়ে থাকবে এমন কিছু ঘটনা এবার জেনে নিন-
১. ব্রাজিলের লজ্জা : ১৯৭৫ সালের পর দেশের মাটিতে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এটিই ব্রাজিলের প্রথম পরাজয়। সেবার কোপা আমেরিকায় পেরুর কাছে এই বেলো হরিজন্তেতেই ৩-১ গোলে হেরেছিল ব্রাজিল। এখানেই জার্মানির কাছে ৭-১ গোলের লজ্জায় ডুবলো। যা এবারের বিশকাপে আলোচিত বিষয়।
২. ফাইনালের তারকা : জার্মানির জার্সিতে হতাশার এক টুর্নামেন্ট কাটাচ্ছিলেন, এমনকি বাদ পড়েছিলেন একাদশ থেকেও। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনালে তিনি নামলেন ৮৮তম মিনিটে। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ম্যাচটি অতিরিক্ত সময়ে গড়ানোর পর সেই গোটসেই হয়ে ওঠেন নায়ক। বাঁ দিক থেকে আন্দ্রে শুরলের ক্রস বুক দিয়ে যখন দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নেন, তখন তাঁর দুই পা-ই শূন্যে। এরপর বলটি শূন্যে থাকতে থাকতে আরো দারুণভাবে শরীর ঘুরিয়ে মারেন বাঁ পায়ের ভলি। আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক সের্হিয়ো রোমেরোকে হতভম্ব করে বল ঢুকে যায় জালে। এখন এই বালক নিজ দেশে রীতিমতো হিরো।
৩. হামেস রদ্রিগেজ : রদ্রিগেজ কলম্বিয়ার তথা এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার। প্রথমবারের মতো কলম্বিয়াকে শুধু কোয়ার্টার ফাইনালেই তোলেননি, ছয় গোল করে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপেই দখলে নিয়েছেন গোল্ডেন বুট।
৪. সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড : ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার রোনালদোর দীর্ঘদিনের ধরে রাখা ১৫ গোলের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন মিরোস্লাভ ক্লোসা। রোনালদো ১৫ গোল করে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে জায়গা ধরে রেখেছিলেন রোনালদো। এবারের বিশ্বকাপে ১৬ গোল করে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন ক্লোসা।
৫. গোলকিপারদের জয়জয়কার : ব্রাজিলকে যেদিন টাইব্রেকারে জয় এনে দিলেন সিজার সেদিন ব্রাজিলের হিরো হয়ে যান তিনি। শুধু বলে লাথি মেরে গোল করাই ফুটবল না। দুই হাতের কারুকার্যেও থাকতে পারে দারুণ ফুটবলীয় সৌন্দর্য, তা প্রমাণ করেছেন এবারের গোলকিপাররা। গোলকিপারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এই বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখবে।
৬. নতুন প্রযুক্তি : ব্রাজিল বিশ্বকাপেই প্রথম গোললাইন প্রযুক্তি ও কুলিং ব্রেক দেখেছে বিশ্ব। দেখেছে ম্যাজিক স্প্রের ব্যবহার। ফুটবলের আধুনিকায়নের মাইলফলক হয়ে থাকবে এই বিশ্বকাপ।
৭. প্রার্থনা : বিশ্বকাপ গোলের জন্য আলজেরিয়ার অপেক্ষা ছিল ২৮ বছরের। বেলজিয়ামের বিপক্ষে মুফিয়ান ফেঘুইলি পেনাল্টি থেকে যখন সেই অপেক্ষার অবসান ঘটান, আরব দেশটির আনন্দ দেখে কে! দল বেঁধে সেজদার ভঙ্গিতে প্রার্থনা করে গোলটি উদযাপন করেন আরব দেশের খেলোয়াড়রা। জার্মানির কাছে দ্বিতীয় রাউন্ডে হেরে বিদায় নেয় তারা।
৮. আসমান থেকে জমিন : টুর্নামেন্টের আগে ফেবারিটদের তালিকায় শীর্ষস্থানটি দখল করে রেখেছিল গতবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। আর এবারই কিনা প্রথম রাউন্ডেই বিদায়। হল্যান্ডের কাছে হারলো পাঁচ গোল খেয়ে। স্পেনের এই দশা সত্যি বিস্ময়কর।
৯. আহত নেইমার : কোয়ার্টার-ফাইনালের শেষ দিকের ঘটনা এটি। কান্নার জলে ভিজে মাঠ থেকে বেরিয়ে যান ব্রাজিলের পোস্টার বয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দিলেন সেই বিপর্যয়ের খবর। চার গোলের সঙ্গে জাদুকরী ফুটবলের মেলবন্ধনে ব্রাজিলকে অত দূর নিয়ে এসেছিলেন যে নেইমার, তিনি না থাকায় তাসের ঘরের মাঠে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সেলেসাও। জার্মানির কাছে সেমিতে ১-৭ গোলের হারে আরেক দফা কান্না উপলক্ষ পেয়ে যান নেইমার।
১০. খেলার মাঠে কামড় : ঠিক আগের ম্যাচে ফিরেছিলেন চোট থেকে। ফিরেই জোড়া গোল করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে উরুগুয়েকে জিতিয়ে নায়কের আসনে লুই সুয়ারেস। কিন্তু এরপর খলনায়ক হতেও বেশি সময় নেননি। পরের ম্যাচে ইতালির জর্জো কিয়েল্লিনিকে কামড়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শাস্তি পান এই ফরোয়ার্ড। এটা এবারের বিশ্বকাপে বহুল আলোচিত একটা বিষয়।
১১ : মেসি ফ্যাক্টর : আর্জেন্টাইন আরেক জীবন্ত কিংবদন্তির নাম লিওনেল মেসি। তার পায়ের জাদু দেখে বিশ্ব মুগ্ধ। সারাবিশ্বের সব দলের সমর্থকরাও চেয়েছিলেন অন্তত মেসির হাতে বিশ্বকাপ শিরোপা আসুক। দলকে চূড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু না ভাগ্য সহায় ছিল না। অধরাই রয়ে গেল শিরোপা, রয়ে গেল অপূর্ণতা।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই/