বিশ্বের সর্বনিম্ন পাতাল রেল
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র রাশিয়া। আর এই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেইন্ট পিটার্সবার্গ। বাল্টিক সাগরের তীরে অবস্থিত পিটার্সবার্গ একটিগুরুত্বপূর্ণ সমূদ্র বন্দর। ১৭০৩ সালের ২৭ মে শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন রাশিয়ার জার সম্রাট পিটার দি গ্রেট।
১৯১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকার মস্কোতে রাজধানী সরিয়ে নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত পিটার্সবার্গই ছিল বিশাল রুশ সাম্রাজ্যের রাজধানী। এই শহরটি উত্তর-পূর্ব ইউরোপের বৃহত্তম শহর। এর আয়তন ১৪৩৯ বর্গ কিলোমিটার। এখানে বসবাস করে প্রায় ৫৫ লাখ লোক। বিশাল এ জনসংখ্যার যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে মেট্রো। ত্রামবাই (ছোট ট্রেন), বাস, মারসুদ-কাসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম এখানে জনপ্রিয় হলেও তুলনামূলক সহজ যাতায়াতের জন্য নাগরিকরা মেট্রোর উপরই নির্ভরশীল।
১৯৫৫ সালের ১৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় সেইন্ট পিটার্সবার্গ মেট্রোর। প্রথমে এর নাম হয় লেনিনগ্রাদ মেট্রো। সেইন্ট পিটার্সবার্গ এর পূর্ব নাম ছিল লেনিনগ্রাদ। ১৯৯১ সালে শহরের নাম পরিবর্তন করা হয়। শহরের নাম পরিবর্তনের সাথে সাথে এর নামও পরিবর্তন করে রাখা হয় সেইন্ট পিটার্সবার্গ মেট্রো।
বিশ্বেরর নামকরা প্রায় সকল শহরেই মেট্রো ট্রেন সার্ভিস চালু আছে। কিন্তু পিটার্সবার্গের মেট্রো সিস্টেম একটু ব্যতিক্রম। প্রতিটি স্টেশনের অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলি, দৃষ্টিনন্দন কারু-কাজ, নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা চোখে পড়ার মতোই।
রাশিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি ফুটে উঠেছে এখানকার স্টেশনগুলোকে। এগুলো তৈরি করা হয়েছিলো সোভিয়েত আমলে। এই শিল্প-কর্মগুলি প্রতিস্থাপন করায় স্টেশনসমূহের সৌন্দর্য বহুগুনে বেড়ে গেছে।
পিটার্সবার্গ মেট্রো পৃথিবীর সর্ব গভীরে অবস্থিত মেট্রো রেল। এর গড় গভীরতা ৮৬ মিটার। আর সবচেয়ে গভীরে অবস্থিত স্টেশনের নাম এডমিরালতিস্কায়া। যেটি মাটির উপরি ভাগ থেকে ১০৫ মিটার নিচে।
সেইন্ট পিটার্সবার্গ মেট্রো সার্ভিসে এখন ৫টি লাইন চালু আছে। এর দৈর্ঘ্য ১১৩.২ কিলোমিটার আর স্টেশন সংখ্যা ৬৭টি। এখানেই শেষ নয়, এটা সম্প্রসারণ করে নতুন আরো ৪টি লাইন এবং ৫৯ টি স্টেশন নির্মাণের মেগা-প্রজেক্ট যোগ হচ্ছে।
বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লক্ষ লোক যাতায়াত করে এই পিটার্সবার্গ মেট্রোতে। অপেক্ষাকৃত কম খরচে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অনায়াসে চলে যাওয়া যায় অতি অল্প সময়ে। এই ট্রেনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার। প্রতি দেড় মিনিট পর পর একটি করে ট্রেন স্টেশন অতিক্রম করে। যাত্রী উঠা-নামার জন্য ট্রেনটি থামে মাত্র ৪০ সেকেন্ডের জন্য।
এছাড়াও ট্রেনটিতে রয়েছে সার্বিক নিরাপত্তার। প্রতিটি মেট্রো স্টেশনের সাথে আছে একটি করে পুলিশ বক্স। রয়েছে অত্যাধুনিক স্ক্যানার মেশিন আর অসংখ্য সিসি ক্যামেরা। যার মাধ্যমে যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
মেট্রো ওপর পিটার্সবার্গ’র মানুষের নির্ভরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেট্রো রেল ছাড়া এখানে নগর জীবন যেন কল্পনাই করা যায় না।
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আল-আমিন/এএস