আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসাধারণ কিছু ক্ষমতাসম্পন্ন পোকা। এ লেখায় পাচ্ছেন এ ধরনের কয়েকটি পোকার বিস্তারিত। ওয়ার্ল্ড ট্রুথ এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে।
বোম্বার্ডিয়ার গুবরে পোকা : নিজেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে বোম্বার্ডিয়ার গুবরে পোকার দক্ষতার কোনো তুলনা হয় না। শত্রুকে আঘাত করার জন্য এ প্রাণীটির রয়েছে একটি রাসায়নিক তৈরির ক্ষমতা। এটি ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত হতে পারে।
আরও আশ্চর্যজনক বিষয় যে, এ গুবরে পোকাটি উত্তপ্ত করার জন্য ব্যবহার করে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও হাইড্রোকুইননের মিশ্রণ। এ দুটি উপাদানই বিপজ্জনক। যদি উভয় রাসায়নিক পৃথকভাবে ঠিকঠাক সংরক্ষণ করা না হয়, তাহলে তা থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে।
ভুডু বোলতা : এ প্রজাতির বোলতা এক অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে তাদের শত্রুকে ‘বশ’ করতে পারার। অনেকের পক্ষেই বিষয়টি সায়েন্স ফিকশন সিনেমার মতো মনে হলেও এটাই বাস্তবতা। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে, এ প্রজাতির বোলতা অন্য কিছু পোকাদের বশ করে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এ প্রজাতির বোলতা তাদের ডিম তরুণ শুয়োপোকার দেহের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সেখান থেকে জন্ম নেওয়া ভ্রুণ শুয়োপোকার দেহের রস খেয়ে বড় হয়। এরপর সে পোকাটি যখন শুয়োপোকার দেহ ভেদ করে বের হয় তখন তা নিজেকে আবৃত্ত করে একটি গুটি ও পাতার মাধ্যমে। যদিও এর পরেও শুয়োপোকাটি গুটি ত্যাগ করে না।
তার বদলে সে গুটিটি পাহারা দিতে থাকে। তবে যেসব শুয়োপোকা এ বোলতা দ্বারা সংক্রমিত হয় না, তারা স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করে। কোনো গুটির কাছে আসে না।
পিঁপড়ে : পিঁপড়েদের নিজেদের পথে ফিরে যাওয়ার অস্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। এমনকি খাদ্য খুঁজতে অনেক দূরে চলে গেলেও তারা আবার সেই পথে ফিরে আসতে পারে।
অনেকেই মনে করতেন, পিপড়ে তাদের আবাস থেকে কোনো পথে গেলে যাত্রাপথের নানা বিষয় দেখে রাখে এবং পরে সে পথে ফিরে আসে। কিন্তু দেখা গেছে, মরুভূমির মতো জায়গায়, যেখানে দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টে যায়, সেখানেও পিপড়ে তাদের আবাসে ফিরে আসতে পারে।
ফড়িং : মানুষের কোনো একটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা আছে। প্রাণীজগতে এটি বিরল ঘটনা। কারণ আরও বহু বিষয় প্রাণীদের মনযোগ আকর্ষণ করে। কিন্তু তা থেকে ভিন্ন একটি প্রাণী ফড়িং। এ প্রাণীটির কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
গুবরে পোকা : এ পোকাটি প্রাণীর মলকে বেশ চমৎকার উপায়ে ব্যবহার করে এবং পরিবেশ পরিষ্কার করে। এরা মল নিয়ে গোলাকার বল তৈরি করে। এরপর সেই বলটিকে তারা বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করে, এর ভেতর ডিম পাড়ে, কিংবা ক্ষুধার্ত থাকলে তা খেয়েই ক্ষুধা মেটায়।
ফ্লি : প্রাণী কিংবা মানুষের দেহে ছোট এক ধরনের পোকা হয়, যা ফ্লি নামে পরিচিত। এগুলো যথেষ্ট ক্ষতিকর। তার পরেও এদের একটি ক্ষমতা মুগ্ধ হওয়ার মতো। আর তা হলো এর লাফানোর ক্ষমতা। এ প্রাণীটি নিজের উচ্চতার তুলনায় ১৫০ গুণ লাফ দিতে পারে। মানুষের দিক দিয়ে চিন্তা করলে বিষয়টি আশ্চর্যজনক নয় কি!
জোনাকি : অন্ধকারে জোনাকি পোকার আলো অতীতে গ্রাম বাংলার সব স্থানেই দেখা যেত। এ পোকাটির নিজের দেহের ভেতর আলো জ্বালানোর অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। আর এ প্রাণীটির রয়েছে খুবই কার্যকরভাবে শক্তিকে আলো হিসেবে রূপান্তরের ক্ষমতা।
পঙ্গপাল : এরা প্রাণীজগতের মধ্যে অন্যতম মিতব্যয়ী ভ্রমণকারী। খুব কম এনার্জি ব্যয় করে এরা বহু দূরে উড়ে যেতে পারে। ওড়ার অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট দেহ থাকার পরেও একদিনে বিশ্রাম ছাড়া ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে এরা।
মৌমাছি : মৌমাছি প্রাণিজগতের অন্যতম বুদ্ধিমান পোকা। তাদের নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। আর তাদের ঠিকানা চিনে নেওয়ার ক্ষমতাও অসাধারণ। মৌমাছির চোখ দুর্বল হওয়ার পরেও তারা নিজের মৌচাক সহজেই চিনে নিতে পারে।
তেলাপোকা : তেলাপোকা বহু মানুষের কাছেই খুবই অপ্রিয় একটি প্রাণী। কিন্তু এ তেলাপোকা পৃথিবীতে টিকে আছে বহু লাখ বছর ধরে। তেলাপোকার রয়েছে রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য খুবই শক্তিশালী ব্যবস্থা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তেলাপোকার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অসাধারণ। আর এর কারণ, তাদের দেহে থাকা শক্তিশালী ৯টি প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক।