বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:১০:৫৪

যেখানে গৃহহীন হওয়াই অপরাধ

যেখানে গৃহহীন হওয়াই অপরাধ

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ইতিহাস বলে মানুষ গৃহের জন্য যুদ্ধ-সংগ্রম করেছে যুগে যুগে। এবার এমন একটি দেশ খুঁজে পাওয়া গেছে যে দেশে গৃহহীন হওয়াটাই অপরাধ। একটি দেশের গৃহহীন মানুষের অসহায়ত্ব এবং সে বিষয়ে উদাসীন সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান এক শিল্পী। কিন্তু কীভাবে তা করলেন তিনি। হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে শিল্পী ইয়ানি লেইনোনেনের স্থাপনাশিল্প নিয়ে পড়ুন দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদন।


বুদাপেস্টের অসাধারণ অপেরা হাউসের পেছন দিকে লুইস ভুইটন সড়ক ধরে চলার সময় ‘হাঙ্গার কিং’-কে দেখলে প্রথম দর্শনে নগরের আর দশটা বার্গারের দোকানের মতোই লাগে। কাছে এগোলেই কেবল আপনি বুঝতে পারবেন যে এটা সাধারণ খাবারের দোকান নয়। এটা একটা স্থাপনাশিল্প। বিষয় হাঙ্গেরির যুগল সমস্যা—সম্পদ বৈষম্য ও গৃহহীনতা। শিল্পী ইয়ানি লেইনোনেনের ভাবনা ও নকশায় বানানো হয়েছে এই ‘হাঙ্গার কিং’।

দোকানের প্রবেশমুখে একটা সাইনপোস্ট লাগানো। সেখানে যাঁরা নিজেদের ‘বড়লোক’ মনে করেন তাঁদের লাল গালিচা পাতা পথে এগিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আর যাঁরা নিজেদের ‘গরিব’ মনে করেন, তাঁদের ভবনটির পাশের পথ ধরে ভেতরে যাওয়ার লাইন ধরতে বলা হয়েছে। মুকুট আর বার্গার সমেত ‘বার্গার কিং’ এর জনপ্রিয় লোগোটিকে একটু পাল্টে নিয়ে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে হাঙ্গার কিং। এ নাম স্পষ্টভাবেই হাঙ্গেরিতে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী ৩৭ লাখ মানুষের কথা জানান দেয়।

প্রতিদিন এখানে ৬ ঘণ্টা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে একটা বার্গারের বাক্সের ভেতর ৩,৪০০ ফরিন্টস বা হাঙ্গেরিয়ান মুদ্রা (প্রায় ৯ পাউন্ড) পেতে পারেন ‘গরিব’রা। এই টাকার অঙ্ক দেশটিতে একই পরিমাণ সময় কাজের দৈনিক সর্বনিম্ন মজুরি। আর যাঁরা নিজেদের ‘বড়লোক’ মনে করেন তাঁরা লাইন এড়িয়ে গিয়ে লাল গালিচা পথে হেঁটে কার্ডবোর্ডে ছাপানো একটা বার্গার কিনতে পারবেন ৬০০,০০০ ফরিন্টস (প্রায় ১,৫৬০ পাউন্ড) দিয়ে।

হাঙ্গেরিতে জনপরিসরে গৃহহীনদের ঘুমানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে হাঙ্গেরিয়ান কাউন্সিলের নতুন একটি আইনের প্রতিক্রিয়ায় তিন সপ্তাহব্যাপী এই স্থাপনাশিল্প প্রদর্শনী চালু হয়েছে এই সপ্তাহে। হাঙ্গেরির ফিনিশীয় বংশোদ্ভূত শিল্পী ইয়ানি লেইনোনেন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘রাস্তায় থাকার কারণে জরিমানা হবে এবং জরিমানা দিতে না পারলে কারাগারে পাঠানো হবে: এটা কার্যত গৃহহীন হওয়াকে একটা অপরাধ হিসেবে গণ্য করার শামিল।’

শিল্পী ইয়ানি লেইনোনেন বলেন, ‘এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। সম্প্রতি আমরা দেখলাম গৃহহীনেরা যাতে রাস্তার খোলা জায়গায় ঘুমাতে না পারে সে জন্য লন্ডনের পথে-ঘাটে সারি সারি লোহার কাঁটা বসানো হয়েছে। আর আমার মাথায় এই ভাবনাটা আসে হেলসিংকিতে কাছাকাছি জায়গায় দুই দল মানুষকে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। সেখানে নতুন করে ২০টি দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেছে বার্গার কিং। দুই সপ্তাহ ধরে মানুষজন লাইন ধরে বার্গার কিংয়ে খেতে গিয়েছে। তা নিয়ে গর্বের সঙ্গে ফেইসবুকে, টুইটারে চেক ইন পোস্টা দিয়েছে। এমন একটা দোকানের কাছেই গরিবদের মধ্যে খাবার বিতরণের একটা লাইনেও ভিড় করে অনেক মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম আমি।’

এই প্রদর্শনী উপলক্ষে চালু করা ওয়েবসাইট ‘হাঙ্গার কিং ডটনেট’-এ ঢুকলেও দর্শনার্থীদের ‘বড়লোক’ ও ‘গরিব’ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভেতরের পাতায় যেতে হবে। সেখানে হাঙ্গেরির সরকার ‘বড়লোক’দের জন্য কী কী করেছে এবং ‘গরিব’দের জন্য কী কী করেছে সে বিষয়ে জানা যাবে। ওয়েবসাইটটি থেকে সরকারকে নিজের মতামত জানিয়ে টুইট করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।

এই শিল্পী বলেন, ‘রাজনীতিকরা নিজেদের নীতির ব্যর্থতার দিক থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাঁদের নীতির কারণেই এই গৃহহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।’ হাঙ্গার কিংয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘বড়লোক’দের মেন্যুটি শেষ হয় বুদাপেস্টের ৮ নম্বর প্রশাসনিক এলাকার মেয়র ফিদেস মেইটে কসসিসের একটা সাম্প্রতিক উক্তি দিয়ে। ওই মেয়র সম্প্রতি বলেছেন, ‘আমরা যদি গৃহহীনদের তাড়িয়ে না দিই তাহলে একদিন ওরাই আমাদের তাড়িয়ে দেবে।’

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে