শুক্রবার, ০৩ জুন, ২০১৬, ০৯:৪২:৫৯

দুর্গম জঙ্গলে কীভাবে বেঁচেছিল বাবা-মা’র ফেলে দেয়া সেই শিশুটি?

দুর্গম জঙ্গলে কীভাবে বেঁচেছিল বাবা-মা’র ফেলে দেয়া সেই শিশুটি?

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : এক সপ্তাহ পর জঙ্গল থেকে অক্ষত শরীরে উদ্ধার করা হয়েছে শাস্তি পাওয়া ইয়ামাতো তানুকাকে।

সাত বছরের ইয়ামাতো তানুকাকে উত্তর হোক্কাইডোর প্রত্যন্ত জঙ্গল এলাকায় এক সেনা ছাউনিতে খুঁজে পাওয়া গেছে।  তার বাবা-মা তাকে যেখানে ছেড়ে এসেছিল, ওই সেনা ছাউনিটি সেখান থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে।

তার বাবা-মা প্রথমে বলেছিলেন, সব্জি তুলতে গিয়ে তাদের ছেলে হারিয়ে গেছে।  পরে শেষ পর্যন্ত তারা স্বীকার করেন যে, বেড়াতে গিয়ে তাদের ছেলে পাথর ছুঁড়ছিল।  তাই দুষ্টুমি করার জন্য শাস্তি দিতে তারা ছেলেকে জঙ্গলে ছেড়ে এসেছিলেন।

ইয়ামাতো তানুকার বাবা ছেলের কাছে এবং উদ্ধারকারীদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমরা বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম।’

উদ্ধার করার পর শিশুটিকে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই হাসপাতালের বাইরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিশুটির বাবা তাকাউকি তানুকা আবেগপূর্ণ এক বক্তব্যে বলেন, ‘আমার কড়া শাসনের জন্য আমার ছেলে খুবই কষ্ট পেয়েছে।  আমি খুবই দুঃখিত’।

তিনি বলেন, ‘ছেলেকে আমি আমার ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে বড় করছি।  কিন্তু এখন থেকে তাকে আমি আরো ভালোবাসব।  তাকে আরো সময় দেব- তাকে রক্ষা করার জন্য যা করার তা করব।’

কতটা ভয়ঙ্কর ছিল ওই দুর্গম জঙ্গল?

প্রত্যন্ত ওই এলাকায় ওক আর বার্চ গাছের নিবিড় জঙ্গল।  সেখানে বাঁশঝাড় জাতীয় গাছেরও ঘন জঙ্গল- সে জঙ্গল এতই ঘন যে, সেখান দিয়ে হাঁটাচলা করা দুঃসাধ্য।  অন্য দেশের জঙ্গলের থেকে এই বন একেবারে আলাদা।  এ কথা বলেন ওই এলাকায় একটি অ্যাডভেঞ্চার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা রস ফিন্ডলে।
Image copyright AP Image caption ইয়ামাতোকে খুঁজতে সন্ধান চালাচ্ছিল ১৮০ জনের সন্ধানী দল।

ওই দুর্ভেদ্য জঙ্গলে বহু মানুষ পথ হারিয়ে ফেলে। পথের নিশানা না জানলে সেখান থেকে বেরনো কঠিন।  আর ছোট শিশুর জন্য ওই ঘন বনে পথ খুঁজে বেরনো একেবারেই দুরূহ।

এছাড়াও ওই বনে রয়েছে প্রচুর ভাল্লুক।
কী খেয়ে এক সপ্তাহ বেঁচেছিল ক্ষুদে ইয়ামাতো তানুকা?

ইয়ামাতো তানুকা ভাগ্যবান আর ছোট হলেও সে ছিল বুদ্ধিমান।  তাকে খুঁজে পাওয়া যায় একটি সেনা ছাউনির ভেতরে। যেখানে তাকে তার বাবা-মা ফেলে গিয়েছিল সেখানে থেকে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে।

১৮০ সদস্যের একটি উদ্ধারদল সন্ধানী কুকুর নিয়ে ওই এলাকায় সোমবার তল্লাশি চালিয়েও ইয়ামাতো তানুকাকে খুঁজে পায়নি।

শিশুটি পুলিশকে বলেছে, বাবা-মা চলে যাবার পর সে নিজেই পাহাড়ি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে ওই সেনা ছাউনিতে গেছে।

কোথাও কোনো খাবার ছিল না- আমি শুধু পানি খেয়েছি- জানিয়েছে তানুকা। ওই সেনাছাউনির কুঁড়েতে গদির ওপর ঘুমিয়েছে ইয়ামাতো তানুকা।

স্থানীয় একটি অভিযাত্রী সংস্থার প্রধান বলেছেন, বছরের এই সময় জঙ্গলে কোনো ফলমূল হয় না।
বসন্ত সবে এসেছে।  ফলমূল এখনও ধরে নি।  তাছাড়া কোন্ ফল খাওয়া নিরাপদ সেটাও জানা দরকার।  জঙ্গলে অনেক বিষাক্ত গাছগাছড়া আছে। বুনো ফল ওই জঙ্গলে খুব একটা পাওয়া যায় না।

জাপানে নদীর জল খাওয়া সাধারণত নিরাপদ, কিন্তু হোক্কাইডোর অনেক নদীর জলে পরজীবী পোকামাকড় আছে।  কাজেই জল না ফুটিয়ে খাওয়া বিপজ্জনক।

বুদ্ধিমান ইয়ামাতো কোনো ঝুঁকি নেয়নি। সেনাছাউনিতে যে কল ছিল সেই কলের জল খেয়ে সে পুরো ছয়দিন কাটিয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ইয়ামাতো সুস্থই আছে। সামান্য কিছু কাটাছড়া ছাড়া তার শরীরে অন্য কোনো সমস্যা তারা পাননি।

হোক্কাইডোর জঙ্গলে রয়েছে প্রচুর বাদামী ভালুক- তাদের উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুট পর্যন্ত হয়।  আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ মানুষ দেখলে তাদের আত্মরক্ষায় আক্রমণ করার নজিরও আছে।

তাই চিকিৎসকরা বলছেন, ওরকম গভীর অরণ্যে একা পুরো ছয়দিন অভুক্ত কাটিয়ে প্রায় অক্ষত শরীরে একটা শিশুর জন্য ফিরে আসা বিস্ময়কর একটা ঘটনা।  সূত্র : বিবিসি
৩ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে