এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন ৭৪ বছর বয়সী মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলি। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার ফোনিক্স এরিনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
যে খেলার জন্য তিনি পেয়েছিলেন জগতজোড়া খ্যতি, সেই মুষ্টিযুদ্ধে তার আগমনের গল্পটি কিন্তু বেশ মজার।
১৯৫৪ সালের একদিন ১২ বছর বয়সী বালক আলির সাইকেল চুরি হয়ে যায়। এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিতে যান আলি।
পুলিশ অফিসার মার্টিনকে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে আলি বলেন, চোরকে ধরতে পারলে পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে ফেলবেন তিনি।
মার্টিন পুলিশ হলেও কেনটাকি রাজ্যের লুইভিল শহরের বক্সিং কোচও ছিলেন। বালক আলির ভবিষ্যৎটা দেখতে ভুল করেননি তিনি।
চোর পেটানোর আগে শিখে আসো কীভাবে লড়তে হয়- এমন খোঁচা মেরে আলিকে তাতিয়ে দেন মার্টিন।
কিশোর আলি আর কিছু ভাবলেন না। পরদিন সকালেই মার্টিনের দরবারে হাজির হন। বক্সিং শিখতে চান তিনি। মার্টিনও তাকে বঞ্চিত করেননি।
ওস্তাদ হিসেবে শিষ্যকে শেখান মৌমাছির মত হুল ফুটানো'র সবচেয়ে কার্যকর কৌশলটি। এভাবেই মুষ্টিযুদ্ধের রিংয়ে এ প্রবেশ করেন আলি।
৬ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতার আলির বিশেষত্ব ছিল- তিনি খেলার সময় সবার মত হাত মুখের সামনে রাখতেন না, শরীরের পাশে রাখতেন। প্রতিপক্ষের মার ঠেকানোর জন্য নির্ভর করতেন সহজাত প্রবৃত্তির ওপর।
১৯৬০ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে রোম অলিম্পিকে লাইট-হেভিওয়েটে সোনা জিতে খ্যাতির তালিকায় না লেখান তিনি।
১৯৬০-১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি টানা ১৯টি লড়াই জেতেন, যার মধ্যে ১৫টি ছিল নকআউট। ১৯৬৩ সালে তিনি ডগ জোন্স এর সাথে ১০ বাউটের এক বিতর্কিত লড়াইয়ে জেতেন।
এরপর ১৯৬৪ সালে ২২ বছর বয়সে তখনকার বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেন।
এরপর বাকিটা ইতিহাস। তিনিই প্রথম মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন। এখন পর্যন্ত তার রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি।
১৯৮১ সালে পেশাদার বক্সিং থেকে অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত ৬১টি লড়াইয়ের মধ্যে ৫৬টিতেই জেতেন আলি।
মৃত্যুর আগের কয়েকটি বছর আলির শারীরিক অবস্থার বেশ অবনতি হয়। ২০১৪ সালে নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। গত বছর মূত্রাশয়ের সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শ্বাসকষ্টে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি।
দুনিয়ার সর্বকালের সেরা বক্সার মোহাম্মদ আলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইসভিলের কেন্টাকিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন খ্রিষ্টান পরিবারে।
তার বাবার নাম ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে সিনিয়র। জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিল ক্যাসিয়াস মারকেলাস ক্লে জুনিয়র।
পরবর্তীতে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম মোহাম্মদ আলি রাখেন। মোহাম্মদ আলির ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পেছনে ছিল একটি ইসলামী সংগঠনের ভূমিকা।
১৯৬৪ সালে ইসলামী সংগঠন নেশন অব ইসলাম-এ যুক্ত হন মোহাম্মদ আলি। এরপর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি।
মোহাম্মদ আলি জানিয়েছিলেন, তার ইসলাম গ্রহণের পেছনে ভূমিকা রাখেন নেশন অফ মুসলিম-এর প্রধান ডাব্লিউ ডি মুহাম্মদ। তার অনুপ্রেরণাতেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
১৯৬৬ সালে মোহাম্মদ আলি ভিয়েতনাম যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করেন। যদিও সে সময় মার্কিন তরুণদের যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। তিনি বলেছিলেন, আল কোরআন যুদ্ধ সমর্থন করে না। আল্লাহ বা নবী (স.)-এর নির্দেশ ছাড়া তিনি যুদ্ধে যাবেন না।
৪ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম