বুধবার, ০৮ জুন, ২০১৬, ০৬:০২:১২

কীভাবে রোজা রাখতে হয় শান্তির ইসলামে এসে শিখলাম : মোহাম্মদ আলি

কীভাবে রোজা রাখতে হয় শান্তির ইসলামে এসে শিখলাম : মোহাম্মদ আলি

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ার নিচে চলে আসেন মোহাম্মদ আলি ক্লে।  ১৯৬৪ সালে তিনি যখন খ্যাতির শীর্ষে, বিশ্ব হ্যাভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্বখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা সনি লিস্টনকে হারিয়ে হুঙ্কার দিলেন, তখন তার সেই হুঙ্কারে কেঁপে উঠলো সারাবিশ্ব।

ওই সময়েই তিনি ঘোষণা দেন, আই অ্যাম গ্রেটেস্ট। আজ থেকে আমি আর ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে নই, আজ থেকে আমি মোহাম্মদ আলি ক্লে।  আজ থেকে মাথা উুঁচু করেই থাকবো।  মোহাম্মদ আলি কখনো মাথা নিচু করতে জানে না।

ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে থেকে মোহাম্মদ আলি- তার নিজের মুখ থেকে ধর্ম পরিবর্তনের কথা শোনার পর সারা বিশ্বের ইসলাম ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মাথায় যেন বাজ পড়ার মত অবস্থা।

সবাই বিস্ময়ে লক্ষ্য করে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিমান মানুষটি ইসলামের ছায়াতলে এসে কেমন বদলে গিয়েছেন, সমাজ বদলে দেয়ার জন্য কীভাবে সারাজীবনটা ব্যয় করেছেন।

দ্য গ্রেটেস্ট, মোহাম্মদ আলি ক্লে প্রায়ই বলতেন, আমার জীবনে সবচেয়ে সুখের মুহূর্তটা হলো যখন নিজেকে ইসলামের মধ্যে বিলীন করে দিতে পারি।

বিশ্ব নাগরিক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মোহাম্মদ আলির জীবন ছিল নানা চড়াই-উতরাইয়ে।  সবচেয়ে সবচেয়ে বড় মাইলফলক ছিল ১৯৬৪ সালে যখন তিনি ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন।  ওই সময়টা ছিলেন তিনি ক্যারিয়ারের একেবারে তুঙ্গে।

ইসলাম গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই অতীত জীবনকে গুডবাই জানিয়ে দেন তিনি।  গ্রহণ করেন ইসলামী জীবন।  ইসলামের সব আইন-কানুন নিজের ব্যক্তিগত জীবনে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করার চেষ্টা করতে শুরু করেন তিনি।  নিজের সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের জন্য অর্থও ব্যয় করা শুরু করেন।

মোহাম্মদ তামাসি একটি বই রচনা করেন, ‘অ্যাকসেপ্টেন্স অফ ইসলাম বাই গ্রেট পারসোনালিটিজ অ্যান্ড থিঙ্কার্স’ নামে।  মোহাম্মদ আলির ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে তিনি সেখানে তার (মোহাম্মদ আলি) নিজেরই বক্তব্য তুলে ধরেন কীভাবে ইসলামে দীক্ষিত হন তিনি।

১৯৬৪ সালে ফ্লোরিডায় সর্বপ্রথম আমি শুনলাম, সৃষ্টিকর্তা একজন।  এটা শোনার পর যারপরনাই অবাক হলাম।  ওই সময়ই আমি জানতে পারি, মোহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বশেষ নবী।

জিসু খ্রিস্টও আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত একজন নবী।  এটা ছিল আমার কাছে একেবারে নতুন।  এটা আমার ওপর বেশ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। ইসলাম গ্রহণ করার পর আমি সত্যিকারের শান্তি এবং সত্য উপলব্ধি করতে পারলাম।

কীভাবে সালাত আদায় করতে হয়, কীভাবে রোজা রাখতে হয় এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয় তা শিখতে শুরু করলাম।

মানুষের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দেয়া নিয়ে মোহাম্মদ আলি বলেন, মুসলমান হওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ইসলামের সুমহান বাণী ছড়িয়ে দিতে শুরু করবো।  

আল্লাহর দয়ায়, আমি ২০ লাখ আমেরিকানকে ইসলামের আলোয় আলোকিত করতে পেরেছি। আমার বাৎসরিক আয় (প্রায় ২০ কোটি ডলার) ইসলামের পথে ব্যয় করতে শুরু করলাম।  আমার স্ত্রী কিংবা সন্তানদের এর উত্তরাধিকারী বানাইনি।

নিজের বাড়িতে মসজিদ বানিয়েছেন মোহাম্মদ আলি।  তিনি বলেন, আমার বাড়িকে একটি বৃহৎ মসজিদ এবং আল কোরআন শিক্ষার সেন্টারে রূপান্তর করি। পাশাপাশি আমি শিকাগোতে আমেরিকার সর্ববৃহৎ মসজিদ তৈরির কাজ শুরু করি।  যেটা হবে আবার ইসলামিক সেন্টার।  সেখান থেকেই আমি আমেরিকান মুসলিমদের মাঝে ফ্রি ইসলামিক বই বিতরণ শুরু করি।

মোহাম্মদ আলি বলেন, একসময় আমি বৃদ্ধ হবো এবং মৃত্যুবরণ করবো।  তার আগে আল্লাহ আমাকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় বানিয়েছেন।  

বিশ্বের অন্যতম সুপরিচিত মানুষে পরিণত করেছেন। আমি যেন আমার এ অসাধারণ জনপ্রিয়তাকে আল্লাহর পথেই ব্যয় করতে পারি।

আমি যেন ইসলামের শিক্ষা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি।  অন্যায়, অনাচার, জুলুম-নির্যাতন, মাদকাশক্তি, ড্রাগস এবং অনৈতিককাজের বিপক্ষে লড়াই করতে পারি।

দ্য গ্রেটেস্ট অ্যাথলেট অন দ্য আর্থ, মোহাম্মদ আলি ক্লে ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।  দিনটা ছিল শুক্রবার।  ওইদিন রাতে অ্যারিজোনায় ফোনিক্স এরেনা হাসাপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

সূত্র : সিয়াসাত ডেইলি

৮ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে