এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : একজন সংসদ সদস্য মানেই বিশাল ব্যাপার। তার শান-শওকত অন্য আট-দশজনের চেয়েও আলাদা হবে, এটাই স্বাভাবিক। অর্থ-বিত্ত, যশ-খ্যাতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি কিংবা প্রাচুর্যের কি আর কোন ঘাটতি থাকে তাদের?
কথায় আছে, ‘হাতি মরলেও লাখ টাকা, বাঁচলেও লাখ টাকা’। একজন সংসদ সদস্যের অবস্থাও অনেকটা তেমন। কেননা, একজন সংসদ সদস্যের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি কিন্তু রীতিমতো এলিটদের কাতারেই থেকে যান। কম-বেশি প্রভাবও থাকে তাদের।
তবে এতো কিছুর পরও ব্যতিক্রম আজও আছে। আছে নির্লোভ সাংসদও। অবশ্য আছেন না, ছিলেন। যিনি নিঃস্বার্থভাবে নিজ নির্বাচনী এলাকার কাজই করে গেছেন। কখনো নিজের আখের গোছাননি। যার ফলে নিজের সম্বল বলতে কিছুই নেই। বর্তমানে বৃদ্ধ বয়সে এসেও অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে তার পেট চালাতে হয়। কোদাল হাতে এ বয়সে এসেও করতে হচ্ছে কঠিন পরিশ্রম।
এখন হয় তো ভাবছেন, এমন আবার হয় নাকি কখনো! সিনেমা বা গল্পে দেখা গেলেও বাস্তবে এমন মানুষ পাওয়া সত্যি ভার। যদি এমনটা ভেবে থাকেন, তবে উরুগুয়ের প্রেসিডেন্টের কথা কি মনে আছে? যিনি একটি দেশের প্রেসিডেন্ট থেকেও অর্থ ও প্রাচুর্যহীন। নিজে চলছেন নিজের জমিতে কৃষি কাজ করে।
হ্যাঁ, উরুগুয়ের প্রেসিডেন্টের মতোই ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য বাকিলা টুকরপ্পা। পার্থক্য শুধু উরুগুয়ের প্রেসিডেন্টের নিজস্ব জমি ছিল। নিজের জমিতে কৃষি কাজ করেন। আর বাকিলা টুকরপ্পার নিজের জমি বলতে কিছু-ই নেই। দু’ বেলা খাবার জুটাতে তাকে দিনমজুর খাটতে হয় অন্যের জমিতে।
বাকিলা টুকরপ্পা ভারতের কর্নাটকের দক্ষিণ কন্নড় বিধানসভার একসময়ের সাংসদ ছিলেন। দৈনিক মাত্র ৪০ টাকা উপার্জনের জন্য কোদাল হাতে মাঠে নামেন তিনি। রীতিমতো পরিশ্রম করেন দু’মুঠো খাওয়ার জন্য।
১৯৮৩ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন। দক্ষিণ কন্নড়ের সুলিয়া তালুক বিধানসভা থেকে বিজেপির হয়ে লড়ে কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাজিত করেন তিনি। মাত্র ১৮ মাস সাংসদ পদে ছিলেন কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। ২টি কলেজ, ৫টি হাইস্কুল, ৪টি হস্টেল, সেতু ও ৩ টি রাস্তা বানিয়েছিলেন তিনি। পরে তিনি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানও হন। কিন্তু আচমকাই ছেড়ে দেন রাজনীতি। শুরু করেন ছাপোষা জীবন।
এমপি ছিলেন বাকিলা টুকরপ্পা। কিন্তু তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ তার জায়গায় যিনি এমপি হয়েছিলেন তার সম্পত্তির পরিমাণ শুনলে তাক লেগে যাবে। সেই এমপির রয়েছে নিজস্ব বাংলো, ৪০ একর জমি ও স্ত্রীর নামে একটি পেট্রল পাম্প।
অন্যদিকে নিজের বাড়ি পর্যন্ত নেই বাকিলা টুকরপ্পার। বিগত ২১ বছর ধরে তার ঠিকানা স্ত্রীর বাপের বাড়ি। শুধু তাই নয়, আজও পেট চালানোর জন্য ৪০ টাকা উপার্জনের আশায় বাড়ি থেকে বেরোতে হয় তাকে। তবে ব্যক্তি জীবনে সৎ ও ভদ্রলোক বলে এলাকায় আজও সবার প্রিয় তিনি।
১২ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন