সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬, ০৫:৫০:১৭

মাথা খারাপ হওয়া অবস্থা, আফিফের চাকরির প্রথম বেতন ১,১০,০০,০০০!

মাথা খারাপ হওয়া অবস্থা, আফিফের চাকরির প্রথম বেতন ১,১০,০০,০০০!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : এমন সৌভাগ্যবান ছেলে ক’জন আছে, যারা কি-না আলোকিত করে বাবা-মায়ের ঘর।
উজ্জ্বল করে দেশের ভবিষ্যৎ।  আর দশটা ছেলের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকে তার পথ চলা।  সত্যিই সোনার ঘরে সোনার ছেলে!

সেই ছেলের আপাতত আর কোথাও ইন্টারভিউয়ের জন্য তৈরি হওয়ার দরকার নেই।  তোমাকে ভালো জায়গাই দেব! কথাগুলো অবাক করে দিয়েছিল আফিফ আহমেদকে৷

কারণ যে সংস্থা তাকে এ আশারবাণী শোনাচ্ছে, তার নাম গুগল৷ তবে বিস্মিত হননি তিনি৷ কারণ ওই আশ্বাসের আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের এই ছাত্র গুগলের থেকে চাকরির অফারও পেয়েছেন৷

জীবনের প্রথম চাকরি হিসেবে বেতনের অঙ্কটা অভাবনীয়৷ ১,১০,০০,০০০ ! হ্যাঁ, এক কোটি দশ লাখ৷

এ খবর দিয়েছে এই সময়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাত্‍‌সরিক এই আর্থিক চুক্তিতেই যাদবপুরের চলতি বছরের ক্যাম্পাস ইন্টারভিউয়ের সেরা চাকরিটা ছিনিয়ে নেন কৃষ্ণনগরের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আফিফ৷

তার হাত ধরেই বহুদিন বাদে আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক প্লেসমেন্ট মানচিত্রে নিজেদের জায়গা করে নিল৷ শেষ কবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ প্লেসমেন্ট সিজনে এত বড় বেতনের চাকরি পেয়েছেন, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের প্লেসমেন্টের বাজারেও সেরা প্যাকেজ৷ প্রথম চাকরিতে বেতনের পরিমাণে আফিফের পরই যে শিক্ষার্থী, তার প্রাপ্য হবে বার্ষিক ৩০ লাখ৷ আফিফের থেকে ৮০ লাখ কম!

ভারতে তার উপযুক্ত কোনো 'পোস্ট ' খালি নেই, তাই সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুরে গুগলের অফিসে কাজে যোগ দেবেন আফিফ৷

এ রাজ্যে শিক্ষা, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় সংখ্যালঘুদের পিছিয়ে থাকা নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছে অনেক৷ এই বঙ্গ সন্তানের সাফল্য যেন সেই মরুভূমিতেই এক সফল উৎক্ষেপণ৷

কৃষ্ণনগর থেকে কলকাতায় প্রতিদিন যাতায়াত করতে পারবেন না বলে খানিকটা বাধ্য হয়েই হোস্টেলে অ্যাডমিশন নিয়েছিলেন আফিফ৷ সেটা বছর চারেক আগের কথা৷

চোখে তখন রঙিন স্বপ্ন৷ বুকে ছোট শহর থেকে তিলোত্তমায় আসার দুরুদুরু ভয়৷ কবে যে সেই লাজুক, কম কথা বলা ছেলেটাকে যাদবপুরের মাটি একাত্ম করে নিল এখন আর ভালো করে মনে করতে পারেন না৷

মন শুধু ছিল পড়াশোনার দিকে৷ তাল কাটার সুযোগ ছিল বিস্তর, কিন্ত্ত কাটতে দেননি এই ২৪ বছরের যুবক৷ কাটতে দেননি বলেই হয়তো আজ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা চাকরির শিরোপা তার মুকুটে৷

যাদবপুর সূত্রে খবর, ওই ছাত্রকে এ দেশের কোনো অফিসের জন্যই ইন্টারভিউ করেছিল গুগল৷ কিন্ত্ত আফিফের ইন্টারভিউ পর্ব শেষ হতে হতে দেখা যায়, ভারতে কোথাওই আর শূন্যপদ নেই৷

সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় চাকরি আর পাওয়া যায় না৷ কিন্ত্ত আফিফ এত ভালো ইন্টারভিউ দিতে পেরেছিলেন যে, গুগলের কর্তারা তাকে হাতছাড়া করতে চাননি৷ তাই ইন্টারভিউ দেয়ার চার মাস বাদে সিঙ্গাপুরের অফিসে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয় ওই সংস্থা৷

কোটির ক্লাবে আফিফের মাঝে যাতে আফিফ আর কোথাও চাকরিতে জয়েন না- করে যান, সে ব্যাপারেও গুগলের এক কর্তা খোঁজ-খবর রাখছিলেন৷

আফিফের কথায়, আমি যখন প্রথম জানতে পারলাম যে চাকরিটা হয়েছে আর এত টাকা বেতন তখন আমি হোস্টেলের ঘরে৷ ই-মেলটা দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷ ভুল হচ্ছে কি না বুঝতে রুমমেটকে ই-মেলটা দেখাই৷

তার পর মাকে ফোন করি৷ গোটা হোস্টেল সেদিন আমার জন্য হইহই করেছিল৷ সবাই আলাদা করে শুভেচ্ছা জানিয়ে গিয়েছিল৷  

নিজের সাফল্যের নেপথ্যে যাদবপুরের অধ্যাপকদের সহায়তার পাশাপাশি মা-বাবার নিঃশর্ত পাশে থাকাকেই কৃতিত্ব দিয়েছেন আফিফ৷

আফিফের বাবা আসরাফউদ্দিন আহমেদ কৃষ্ণনগর আদালতে ওকালতি করেন৷ মা আম্বারিন আহমেদ গৃহবধূ৷ বাড়িতে আর আছে ছোট একটা ভাই৷ সে এখন স্কুলে পড়াশোনা করছে৷

মা আম্বারিনের কথায়, প্রথম যখন আফিফ কলকাতায় গিয়ে হোস্টেলে উঠল, সেই সময়টা কত ভয় পেয়েছি৷ হোস্টেল জীবনে তলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে৷ বারবার খোঁজ নিতাম৷ কিন্ত্ত ধীরে ধীরে বুঝেছি, ও তলিয়ে যাওয়ার ছেলে নয়৷ ও কম কথা বলে।  তবে নিজের লক্ষ্যে আফিফ স্থির এবং অবিচল৷ আমি জানতাম একদিন ও সফল হবেই৷

আফিফের এ সাফল্য যে শুধু যাদবপুরের চৌহদ্দির মধ্যেই আটকে নয় এ কথা মানছেন বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের সাবেক সভাপতি তথা অ্যান্ড্রূ উইলের সদ্য প্রাক্তন চেয়ারম্যান কল্লোল দত্ত৷

তার প্রতিক্রিয়া, যাদবপুর মানে মাওবাদীদের আখড়া নয়, অনেকে আগেও তা প্রমাণ করেছেন৷ আফিফের এ সাফল্য শুধু যাদবপুরের নয়, বৃহত্তর সমাজের কাছেও সদর্থক বার্তা নিয়ে যাবে৷

প্রতিভা এবং সুযোগ থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিতে আফিফ হয়ে ওঠা সম্ভব৷ তবে এই কৃতীর কাছে এটা প্রথম সাফল্য হিসেবেই থাকুক, শেষ যেন না হয়৷
১৩ জুন,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে