১০ হাজার বছরের পুরান গাছ এটি, বেড়ে উঠার গল্প শুনলে চমকে যাবেন!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ধারনা করা হচ্ছে এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীনতম গাছ। বহু যুগাবতারের আসা-যাওয়া দেখেছে এই গাছটি। দেখেছে বহু যুগের পত্তন-বিনাশ। দেখেছে বহু ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, তুষারপাত। এমনকী, তুষারযুগের শেষটাও তার দেখা।

এর বয়স আপাতত প্রায় ১০ হাজার বছর। সঠিক গাণিতিক হিসাবে ৯,৫৫৮ বছর। প্রায় ১০ হাজার বছর ধরে এই গাছ বহাল তবিয়তেই বেঁচে রয়েছে সুইডেনের টালার্না প্রদেশের ফুলু পর্বতের পাদদেশে। মূলত একটি স্প্রুস গাছ। যাকে বৃক্ষও বলা যায়। গত শতাব্দীর ৪০-এর দশকে বিষাক্ত মাটি থেকে প্রাণের রসদ তেমন না পেয়ে গাছটি বুক চিতিয়ে বেড়েও উঠতে শুরু করেছে আকাশের দিকে। যেন এটা তার অস্তিত্বের সদম্ভ ঘোষণা। আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা যায়।

২০০৮ সালে সুইডেনের ওমেয়াঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক লিফ কুলমান প্রথম এই গাছটির সন্ধান পান। ফ্লোরিডার মিয়ামিতে তার গবেষণাগারে কুলমান এর পর কার্বন পরমাণুর একটি আইসোটোপ (সি-১৪) দিয়ে এর বয়স মেপেছিলেন। তাতে দেখা গিয়েছে, ওই গাছটির বয়স ৯,৫৫৮ বছর। এর চেয়ে দীর্ঘায়ু গাছ এখনো পর্যন্ত মেলেনি পৃথিবীতে। এর আগে যে প্রাচীনতম গাছটির হদিশ মিলেছিল উত্তর আমেরিকায় সেটি একটি পাইন গাছ। তার বয়স বড়জোর ৪ হাজার কিংবা ৫ হাজার বছর হবে।

অধ্যাপক কুলমানের দাবিটি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ভাবে সমর্থিত ও স্বীকৃত হয়েছে। সেই প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছে ‘জার্নাল ইভলিউশন’-এর জুন সংখ্যায়। এ ব্যাপারে লখনউ-এর ন্যাশনাল বটানিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এনবিআরআই)-এর প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনমি ও এথনো বটানি বিভাগের অধ্যাপক গীতাঞ্জলী সিংহ বলছেন, ‘এই ধরনের স্প্রুস গাছ সুইডেনের বিস্তৃর্ণ এলাকায় আরো প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। সুইডেনের উত্তরে লাপল্যান্ড থেকে দক্ষিণে টালার্না পর্যন্ত এলাকা জুড়ে মোট ২০টি প্রজাতির স্প্রুস গাছ পাওয়া গিয়েছে যে গাছগুলো বয়স ৮ হাজার বছর বা তার বেশি হবে।’

কিন্তু এত দিন ধরে এই গাছগুলো বেঁচে থাকে কী করে? লখনউয়ের এনবিআরআই-এর প্লান্ট অ্যানথ্রোপলজির অধ্যাপক ভাগ্যশ্রী ভট্টাচার্য বলছেন, ‘এদের একটা কাণ্ড মরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নতুন কাণ্ডের জন্ম হয়। তা ছাড়া এদের শিকড় মাটি ফুঁড়ে গভীরে চলে যেতে পারে খুব দ্রুত। গত ১০০ বছরে পরিবেশ দূষণের ফলে সুইডেনের ওই এলাকায় মাটির তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেড়েছে। তার ফলে মাটি থেকে বাঁচার রসদ জোগাড় করতে এই গাছটির অসুবিধা হওয়ায় গত শতকের চারের দশক থেকেই এরা একটু একটু করে বুক চিতিয়ে আকাশের দিকে মাথা তুলতে দেখা যাচ্ছে।

মনে করা হচ্ছে এই গাছটি তুষারযুগের সময় স্ক্যানডেনেভিয়ায় ছিল। ছিল নরওয়ের পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিমে। পরে কোনো ভাবে পাখিদের মাধ্যমে বা বাতাসে উড়ে এসে ওই গাছগুলির বীজ পড়েছিল সুইডেনের ওই এলাকায়। ওই এলাকায় ৩৭৫, ৫৬৬০, ৯০০০ এবং ৯৫৫০ বছর আয়ুর আরো বিভিন্ন প্রজাতির স্প্রুস গাছের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।’
১৫ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই