বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬, ১২:৪০:৪৭

আকাশে দুই সূর্য, কখনওই রাত নামে না যে গ্রহে!

আকাশে দুই সূর্য, কখনওই রাত নামে না যে গ্রহে!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : তাঁর দু’দুটো ‘নাথ’!

তিনি সংসার সামলান দুই ‘নাথ’-এর! নির্বিঘ্নে, নির্ঞ্ঝাঝাটে!

এই ভাগ্যবতী ‘নাথবতী’ নিয়মিত প্রদক্ষিণ করে চলেন তাঁর দুই ‘নাথ’কে!

দুই ‘নাথ’ মানে দু’টি সূর্য। একই সঙ্গে দু’দুটি সূর্যকে নিয়মিত প্রদক্ষিণ করে চলে এই গ্রহটি।

এর নাম ‘কেপলার-১৬৪৭-বি’। এই গ্রহটিকে বলা হয় ‘ট্যাটুইন গ্রহ’। কিন্তু তার সঙ্গে ‘ট্যাটু’ বা উল্কির কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে ‘স্টার ওয়র্স’ ছবির নায়ক লিউক স্কাইওয়াকের বাড়ি ছিল ট্যাটুইন-এ। সেখান থেকেই এই নামকরণ।

আশ্চর্য এই ভিন গ্রহটির সন্ধান পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, সম্প্রতি।
এই ভিন গ্রহটি রয়েছে পৃথিবী থেকে ৩,৭০০ আলোকবর্ষ দূরে। এই গ্রহটি তাঁর দু’টি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ১,১০৭ দিন। মানে, তিন বছরের একটু বেশি। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে যে সময় নেয় পৃথিবী, সদ্য আবিষ্কৃত ভিন গ্রহটি তাঁর দু’টি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় তার চেয়ে তিন গুণ বেশি। এই ভিন গ্রহটি যে দু’টি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তার একটি আমাদের সূর্যের চেয়ে সামান্য বড়। অন্যটি সামান্য ছোট। এই ভিন গ্রহটির বয়স ৪৪০ কোটি বছর। মানে, আমাদের পৃথিবীরই প্রায় সমবয়সী।

লেহিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোশুয়া পেপার এই ভিন গ্রহটির আবিষ্কর্তা। এই আবিষ্কারে রয়েছেন চার মহাদেশের ১০ দেশের মোট ৪০ জন বিজ্ঞানী।

মঙ্গলবার সান দিয়েগোয়, আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বৈঠকে এই আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি বিজ্ঞান জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ ছাপা হবে জুলাইয়ে।

এই নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে কী বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা?

মুম্বইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর)-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানী দেবেন্দ্র ওঝা জানাচ্ছেন, ‘‘এই ভিন গ্রহটির ভর ও ব্যাসার্দ্ধ একেবারে আমাদের বৃহস্পতির মতোই। এই গ্রহটি বৃহস্পতির মতোই বড়। আর তার পুরোটাই গ্যাসে ভরা। পৃথিবীর মতো পাথুরে গ্রহ এটা নয়। দু’টি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা ভিন গ্রহগুলিকে বলা হয় ‘সারকাম-বাইনারি প্ল্যানেট’। তবে এই গ্রহটি তাদের সূর্যের চেয়ে রয়েছে অনেকটা দূরে। যাকে বলা হয় ‘হ্যাবিটেব্‌ল জোন’। যদিও এই গ্রহটিতে প্রাণের সম্ভাবনা কম, সেটি গ্যাসে ভরা বলে। তবে এই গ্রহের যদি বড় কোনও চাঁদ থাকে, যদি তার হদিশ মেলে কোনও দিন, তা হলে সেই চাঁদে প্রাণের সম্ভাবনা থাকতে পারে। দুই সূর্যকে পাক মারে বলে এই গ্রহে সূর্যাস্ত হয় না।’’

এই গ্রহটি যখন চেহারায় এত বড়, তখন তার অস্তিত্বের প্রমাণ পেতে এত দেরি হল কেন?

অধ্যাপক ওঝা বলছেন, ‘‘এর কারণ হল, গ্রহটি তার দু’টি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে অনেক বেশি সময় নেয়। আর এদের কক্ষপথও খুব জটিল। তাই সহজে এদের হদিশ মেলে না। তবে এই আবিষ্কারের অভিনবত্বটা হল এখানেই যে, সূর্যকে এত দীর্ঘ কক্ষপথে প্রদক্ষিণ (লঙ্গেস্ট অরবিটাল পিরিয়ড) করা কোনও ভিন গ্রহের হদিশ মিলল এই প্রথম। এত বড় ভিন গ্রহ এর আগে পাওয়া যায়নি। এই গ্রহটির আবিষ্কার হয়েছে কিলোডিগ্রি এক্সট্রিমলি লিট্‌ল টেলিস্কোপের(কেইএলটি) মাধ্যমে। তার দু’টি অংশ রয়েছে। একটি- আমেরিকার আরিজোনায়। অন্যটি- দক্ষিণ আফ্রিকায়।’’-আনন্দবাজার
১৬জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এআর/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে