এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাংলাদেশে নাম্বার ওয়ান নায়ক যেমন শাকিব খান, তেমনি নাম্বার ওয়ান ভিলেন কিন্তু মিশা সওদাগর। পর্দায় এই মিশা সওদাগর একজন বদ চরিত্রে মানুষ। যাকে পর্দায় দেখে অনেকে খিস্তি দিয়ে থাকেন। তবে কি পর্দার মত বাস্তবেও তিনি এতটা বদ?
না। বাস্তব জীবনের মিশা সওদাগর আর পর্দার মিশা সওদাগরের সাথে রাত আর দিন পার্থক্য। পর্দায় তিনি নোংরা চরিত্রে হলেও বাস্তবে তিনি অত্যন্ত ধার্মিক ও বন্ধুবৎসল একজন মানুষ। ধর্মের প্রতি তার রয়েছে অগাধ দুর্বলতা।
এই খল অভিনেতার কাছের জনদের মতে, আট-দশজন সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপনে অভ্যস্ত মিশা সওদাগর। তিনি ঘরোয়া আড্ডা কিংবা দূরে কোথাও বেড়াতে গেলেও কখনো ড্রিঙ্ক কিংবা সিগারেট স্পর্শ করেন না।
এফডিসি আয়োজিত নতুন মুখ কার্যক্রমে নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৬ সালে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন মিশা সওদাগর। ১৯৯০ সালে ছটকু আহমেদ পরিচালিত ‘চেতনা’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেছিলেন নায়ক হিসেবে। এর কিছুদিনের মধ্যেই ‘অমরসঙ্গী’ ছবিতে দ্বিতীয়বারের মতো নায়ক হিসাবে অভিনয় করেন। পরপর মুক্তিপ্রাপ্ত দুটি ছবিই ফ্লপ হয়।
এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন ধারা পরিবর্তনের। যে ভাবা সে কাজ। তমিজ উদ্দিন রিজভীর ‘আশা ভালোবাসা’ ছবিতে তিনি অভিনয় করেন খল চরিত্রে। এখানে তার অভিনয় প্রশংসিত হয় চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের কাছে। তারপর আর পিছনের তাকাতে হয়নি এই অভিনেতাকে। এখন পর্যন্ত ৮০০ এর বেশি ঢাকাই সিনেমাতে অভিনয় করেছেন। বিনিময়ে ঢাকাই সিনেমার নাম্বার ওয়ান ভিলেনের তকমাটি উঠেছে তার ললাটে। বলা হয়ে থাকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী এখনও তৈরি হয়নি ঢাকাই সিনেমাঙ্গনে। আগামীতে হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ।
যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, মিশা সওদাগর নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। ধর্মের প্রতি রয়েছে তার ভীষণ রকম দুর্বলতা। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে খুব বিশ্বাস করি। আমার ধারা কি হবে, আর কি হবে না তা আগে থেকেই ধারণা করতে পারি। ধর্মের প্রতি আমার দুর্বলতা ছোটবেলা থেকেই। কাজের যত ব্যস্ততাই থাকুক আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি।’
এদিকে ২০১৪ সালে সপরিবার নিয়ে তিনি পবিত্র হজ পালন করতে গিয়েছিলেন মক্কা নগরীতে। এর আগে ২০০৭ সালে প্রথমবার হজ পালন করেছিলেন ঢাকাই সিনেমার এই খল-অভিনেতা।
হজ পালনের আগে এবং পরের জীবনের মধ্যে কোন পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন কিনা? মিশা সওদাগরের কাছে এমন একটি প্রশ্ন রেখেছিল একটি দৈনিক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই অনেক পার্থক্য খুঁজে পেয়েছি। হজ করার আগে আমি স্বপ্ন দেখতাম আল্লাহ আমাকে যদি সামর্থ্য দেন, আমি মানুষের উপকার করব, পাশাপাশি ইসলামের দায়িত্ব হিসেবে হজ পালন করবো। আর হজ পালনের পর আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক কিছুকে এখন ভাবি ভিন্নভাবে।’
তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি, আগে ধর্মের অনেক বিষয়কে হাল্কা মনে হতো। চিন্তা করতাম একটি অন্যায় হয়ে গেছে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব। কিন্তু এখন ভাবি, অন্যায়টা করার আগে আমি কেন চিন্তা করলাম না, আমি তো বোধসম্পন্ন মানুষ। তা সত্ত্বেও আমার দ্বারা কিভাবে এই ধরনের হীন কাজ করা সম্ভব হলো। এই প্রশ্নগুলো আমাকে সব সময় সচেতন থাকতে সহযোগিতা করে।’
মিশা বলেন, আমি চলচ্চিত্রে অভিনয় করি, এবং খল চরিত্রে। এই নিয়ে ইতিবাচক, নেতিবাচক দুই ধরনের মন্তব্য শোনতে হয় আমাকে। এটাকে আমি কাজের সার্থকতা হিসাবে দেখি। যারা নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তারা আমার পর্দার জীবনের সাথে মিশে যান বলেই ওই ধরনের মন্তব্য করেন। আর যার ইতিবাচক মন্তব্য করেন তারা আমার অভিনয়টাকে ভালোবাসেন। এটা সত্যিই অনেক বড় পাওয়া।’
১৭ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসপি/এমএন