শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১১:৩৭:৪৭

পাথরের নগরী পেট্রা

পাথরের নগরী পেট্রা

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : প্রাচীন কালে মানুষ পাহাড়ের গুহায় এবং গাছের ওপরে বাস করতো। পরে ঘরবাড়ি তৈরি করতে শিখলো। জর্ডানের পেট্রা অনেকটা তার মাঝামাঝি একটা জায়গা, যেখানে মানুষ আর প্রকৃতি একে অপরের হাত ধরে টিকে ছিলো যুগ যুগ ধরে।

পাথর কুঁদে পাহাড়ের মাঝে মানুষ তৈরি করে অলঙ্কৃত গুহা আর সেখানেই গড়ে তোলে সভ্যতা। প্রাচীন স্থাপত্যবিদ্যার মধ্যে পাথরের নগরী পেট্রার চাইতে উৎকর্ষ নিদর্শন আর দেখা যায় না। পেট্রা লাতিন শব্দ। এটির বাংলা অর্র্থ পাথর।
 
জর্ডানের পেট্রা হচ্ছে প্রাচীন এক পাথুরে নগরীর ধ্বংসাবশেষ। মৃত সাগর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত প্রাচীন এই নগরী সত্যি এক পাথরের শহর। পাহাড়ের পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছিল এই শহর।

ধারণা করা হয়ে থাকে প্রায় তিন হাজার বছর আগে আরব সেমিটিক জাতিগোষ্ঠী ন্যাবসীয়দের রাজধানী ছিল এই নগর। জ্ঞান, লিখনশৈলী, বস্ত্র শিল্প ও ধাতব শিল্পের জন্য তারা বিখ্যাত ছিলেন। শুধু তাই নয় এই পাথরের নগরীটি আরও দুটি কারণে বিখ্যাত। তা হলো  বাণিজ্য আর উন্নয়ন জলপ্রকৌশল।

খ্রিস্টপূর্ব ৩৬৩ সালে এক ভূমিকম্পে নগরীটির ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং সেই সঙ্গে নগরীর জল সরবরাহের অবকাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। আর আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে শুরু করে পেট্রার গৌরবের ইতিহাস।

খ্রিস্টীয় ১৮১২ সালে বিখ্যাত সুইস পর্যটক জোহান ল্যুডবিগ বার্কহার্ড প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে পেট্রা পুনরাবিষ্কার করেন।

আরব্য যাযাবর নাবাতিয়ান জাতির তৈরি করা পেট্রা নগরীতে রয়েছে মন্দির, সমাধি, হল, বেদি অ্যাকুয়াডাক্ট।

জানা যায়, ২০ হাজার নাবাতিয়ানের এই শহরে ছিলো পানির সংকট। এ কারণেই তারা পাথর কেটে তৈরি করে পানি সরবরাহের এই প্রক্রিয়া অ্যাকুয়াডাক্ট। প্রাচ্যের মশলা বাণিজ্যের চলাচলের অন্যতম পথ ছিলো পেট্রর মধ্য দিয়ে। এখনও এই শহরের দেয়ালে লেগে আছে সেই সভ্যতার নিশ্বাস ।

১৮০০ এর শুরুর দিকে এক সুইস অভিযাত্রী আবিষ্কার করে এই প্রাচীন নগরী। ডেড সি এবং রেড সি এর মাঝে এই নগরীকে অনেক সময় রোজ সিটিও বলা হয়, কারণ যে পাথর থেকে এই শহর কেটে তৈরি করা হয়েছিলো, তার রংটাও লালচে।

পবিত্র বাইবেলে এই নগরীর বর্ণনা আছে। সেখানে একে উল্লেখ করা হয় পাথরের মাঝে ফাটল বলে। শহরের প্রবেশমুখ হলো দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী একটি ফাটল যাকে সিক বলে ডাকা হয় এখন। পেট্রার সবচাইতে উল্লেখযোগ্য স্থাপনা হলো ফারাওর গুপ্তধন। যা একটি স্মৃতিসৌধ।

জানা যায়, এই অঞ্চলে ৩৬৩ সালে একটি বড় ধরণের ভূমিকম্প হয়। ভূমিকম্পে পেট্রার স্থাপনাগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে লুটেরাদের আক্রমণে এর অনেক মূল্যবান ধনসম্পদ হারিয়ে যায়।

আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এই নগরীর মাত্র ১৫ শতাংশ এখন পর্যন্ত এসেছে প্রতœতাত্বিকদের গবেষণার আওতায়। বাকিটা রয়ে গেছে অজানা। পেট্রার ভূগর্ভের অনেক নিদর্শন এখন আছে মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। হয়তো সেগুলোই পেট্রার ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে একদিন।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে