এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : মানুষ সৌখিন বটে! আর সেই সৌখিনতা তাকে সৃষ্টি করতে শেখায় ভিন্নতা। খাবার ও আনন্দ বিনোদনকে বৈচিত্রময় ও বৈশিষ্টমত করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অদ্ভূত কিছু রেস্তোরাঁ গড়ে তুলেছেন সৌখিন কিছু মানুষ।
আর এসব অদ্ভূত রেস্তোরাঁতে পাওয়া যায় নানা রকমের সুযোগ সুবিধা। ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে নানা সাজে সজ্জিত করে অদ্ভূত পরিবেশে সৃষ্টি করা হয়েছে সেসব রেস্তোরাঁগুলোতে।
তেমনি কিছু অদ্ভূত রেস্তোরাঁর কথা জানা-অজানা থাকতেই পারে। খাবার পরিবেশন এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক আপনাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করবে।
ব্যাংক ভল্ট রেস্তোরাঁ :
এই রেস্তোরাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের প্রাচীন ডেনভার ন্যাশনাল ব্যাংক ভবনে অবস্থিত। এখানে খদ্দেররা খাবার গ্রহণ করতে পারেন চিরি কাঠে নির্মিত প্রাইভেট বুথে বসে।
এই বুথগুলো একসময় ব্যাংকের গ্রাহকরা ব্যবহার করতেন। এতে বসে তাদের নিরাপত্তা ডিপোজিট বক্সগুলো ঠিকঠাক আছে কিনা তা পরীক্ষা করতেন।
১০০ বছরের পুরনো ব্যাংক ভল্টের ভেতরে খদ্দেররা ব্যক্তিগত খাবার গ্রহণের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এখানে এসে। রেস্তোরাঁর ওয়াই সেলারটি ৩৫ ফুট মাটির নিচে মূল ক্যাশ ভোল্টে অবস্থিত।
কেইভ রেস্তোরাঁ :
আফ্রিকার দক্ষিণ মোম্বাসার ডায়ানি সমুদ্র সৈকতে আলী বাবার গুহা রেস্তোরাঁ নামের এই রেস্তোরাঁটির অবস্থান। এই গুহাটি ৫ লক্ষাধিক বছর আগে প্রবাল চুনাপাথরে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি।
সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে এর আকার আকৃতি গঠিত। অবশ্য এটাকে ব্যবহারের উপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট ভূমির মালিক জর্জ বারবোঁরও কিছু ভূমিকা রয়েছে। গুহা রেস্তোরাঁ কমপ্লেক্সের এন্ট্রেন্স বা প্রবেশ পথ একটি মাকুতি পাম গাছের শাখায় তৈরি ছাদে আবৃত যা একটি গাম ট্রি ধরে রেখেছে।
‘ভিলা এস্কুডেরো’ওয়াটার ফল রেস্তোরাঁ :
ফিলিপাইনের ওয়াটার ফল রেস্তোরাঁ বা জলপ্রপাত রেস্টেুরেন্ট ‘ডিলা এস্কুডেরো দেশটির কুইজন প্রদেশে অবস্থিত। রেস্তোরাঁটি লামাসন নামক জলপ্রপাতের পাদদেশে অবস্থিত।
যদিও এই রেস্তোরাঁয় উষ্ণ ও আরামদায়ক কক্ষ রয়েছে তবুও পর্যটকরা রেস্তোরাঁর বাইরে চেয়ার টেবিলে বসে জুতো মোজা খুলে জলপ্রপাতের পানিতে পা ভিজিয়ে নানা প্রকার ফিলিপিনো খাবার গ্রহণই পছন্দ করেন।
জলপ্রপাতের পানির ধারা তাদের পায়ের পাতা ও গোড়ালি ভিজিয়ে প্রবাহিত হয়। এভাবে জলপ্রপাতের ঠিক নীচে অবস্থান করা বিপজ্জনক হলেও পর্যটকরা তা উপভোগ করেন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হিসেবেই।
ভাসমান রেস্তোরাঁ :
সুইডেনের ভাসমান রেস্তোরাঁ ‘দ্য সল্ট এন্ড স্টিল’ একটি ২৩ কক্ষের বার্জ। এখানে সেরা সামুদ্রিক খাবার বিশেষ ভাবে হেরিং ও তাজা স্থানীয় খাবার সরবরাহ করা হয়।
প্রতিটি কক্ষের রয়েছে আলাদা আউটডোর বসার জায়গা। তবে এর মূল সুইটের একটি আলাদা সুবিধা রয়েছে।
সেটা হচ্ছে ছাদের উপরিভাগে জাকুজ্জি। রেস্তোরাঁটি একটি লেইক বা হ্রদে অবস্থিত-এর ধারে কাছের উপকূলে থাকার আর কোন বাড়িঘর বা কক্ষ নেই।
মাইন শ্যাফট্ রেস্তোরাঁ :
‘পপ-ডাউন’ খনির ভেতরে অবস্থিত ফিনল্যান্ডের অদ্ভূত রেস্তোরাঁ। লোহজা শহরে ১২৪ ফুট মাটির গভীরে এর অবস্থান। ১১৫ বছরের প্রাচীন এই খনি থেকে এখনো চুনা পাথর উত্তোলন করা হয়।
কিন্তু খদ্দেররা এসবের প্রতি কোন তোয়াক্কা না করেই নিয়মিত খাবার গ্রহণ করেন। এই রেস্তোরাঁটি খদ্দেরদের কাছে এতোই জনপ্রিয় যে এর ৬৪ টি আসন সব সময়ই বুকড্ থাকে।
এয়ারপ্লেন রেস্তোরাঁ :
বিমানে একটি ছোট্ট প্লাস্টিক ট্রেতে সাধারণত যে খাবার সরবরাহ করা হয় তা নিয়ে অনেকের অনেক অভিযোগ ও অনুযোগ রয়েছে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম যুক্তরাজ্যের কভেন্ট্রি এয়ারপোর্টে একটি ডগলাস ডিসি ৬ বিমানের ভেতরে পরিচালিত রেস্তোরাঁটি।
এখানে খদ্দেররা তাদের প্রত্যাশিত সব ধরনের খাবারই পাবেন। এর পরিচালনায় রয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী বাবুর্চি টনি কৌন্স। ব্রিটেনে এটাই এ ধরনের প্রথম রেস্তোরাঁ। এখানে রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ বার।
১৫ পাউন্ডে খেতে পারেন একটি ফিল্লেট স্টিক। এই রেস্তোরাঁতে ৪০টি আসন রয়েছে। এখানে বিমান পরিবহন মেন্যুর সাথে সংগতি রেখে ৮ ওজেড র্যাপাইড, ভ্যাম্পায়ার গ্যামন স্টিক, বোম্বার টি-বোন স্টিক ও মেটিওর ম্যারিনেইড ফিল্লেট সরবরাহ করা হয়। এখানে ওয়েটারদের ডাকতে হলে বিমানের মতোই কল বাটন টিপতে হয়। এতে স্টুয়ার্ডেসের মতো ওয়েটাররা তাৎক্ষণিক এসে হাজির হয়।
বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রেস্তোরাঁ :
ইতালীর বিশ্বের সবচেয়ে ছোট রেস্তোরাঁটির নাম ‘সলো পার ডিউ’ অর্থাৎ ‘ঠিক দু’জনার জন্য’। এটি ইতালীতেই অবস্থিত। এখানে একবারে মাত্র দু’জন মানুষ বসে খেতে পারেন।
এখানে রয়েছে একটি মাত্র টেবিল এবং দু’জনের বসার আসন। খদ্দেররা এখানে বসে নানা রকম ইতালীয় খাবার উপভোগ করতে পারেন। এখানে বসে বেল টিপলেই ওয়েটার এসে হাজির হবে।
চাইলে ওয়েটাররা তাদের জন্য একটি ব্যক্তিগত অগ্নিকুণ্ড জ্বেলে দেবে, শোফায় সার্ভিসও দেবে। তবে খাবারের জন্য জনপ্রতি খরচ করতে হবে ৩২৫ ডলার অর্থাৎ প্রায় ২৪ হাজার টাকা। দু’জন হলে অর্ধলাখ টাকার কাছাকাছি।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস