এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: ছাই দিয়ে কি আর আগুন চাপা দেওয়া যায়! একটু উস্কে দিলে, আগুন নিজের তেজেই জ্বলে ওঠে। মেধার যদি তুলনা টানা যায়, তা হলে একমাত্র আগুনের সঙ্গেই। দারিদ্র্যের কোনও ছাইভস্মেই 'মেধা' চাপা পড়ে না। ঠিকই ভাস্মর হয়ে জ্বলে ওঠে।
ডা. বিজয়লক্ষ্মী একটা সময় বাজারে বসে সবজি বেচেছেন। তখনও কি কেউ জানত তিনি ভবিষ্যতের ডাক্তার। তিনি শুধু ডাক্তারই নন, বরং দেশের নামী সার্জেনদের একজন এবং একই সঙ্গে ক্যানসার এক্সপার্ট। শুধু তাই নয়, তিনি ভারতের কর্নাটক ক্যানসার সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট।
অনগ্রসর শ্রেণির একজন। বস্তির আর পাঁচ জনের মতো একই পরিবেশে বেড়ে ওঠা। তো কী? ওই যে ছাই-চাপা আগুন, তা তো আর সবার মধ্যে থাকে না। তাই একই পরিবেশে বড় হয়ে সবাই বিজয়লক্ষ্মী হতে পারেন না। বাজারে সবজি বেচেছেন। বাড়ি ফিরে সংসার কাজ করেছেন। তার মধ্যেই বই নিয়ে পড়েছেন। শত অভাবও বইয়ের সঙ্গে তাঁর বিচ্ছেদ ঘটাতে দেয়নি।
আজকাল ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আমআদমির গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ। কেউ বলেন, ওরা টাকার কাঙাল। রোগী বাঁচল না মরল, তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। গাদা টাকা ফি নেয়। কারও কথায়, মেডিক্যাল ওয়ার্ল্ডটাই এখন একটা ইন্ডাস্ট্রি। ভুঁইফোঁড়ের মতো গুচ্ছের হাসপাতাল গজাচ্ছে। সবটাই বেসরকারি উদ্যোগ। এই ফ্যালো কড়ি মাখো তেলের জমানায় আক্ষরিক অর্থেই ব্যতিক্রম ডাক্তার বিজয়লক্ষ্মী। হয়তো দুনিয়াটাকে হাতের তালুর মতো কাছ থেকে দেখেছেন বলেই, তিনি অন্যরকম।
নিন্দুকেরা (পড়ুন অন্য ডাক্তাররা) বলবেন, বিজয়লক্ষ্মী বেমানান। কারণ, তাঁদের মতো কর্পোরেট কালচার রপ্ত করে উঠতে পারেননি। কিন্তু, এসব সমালোচনা গায়ে মাখার লোক নন এই মহিলা ডাক্তার। জীবনের অনেক কিছুই দেখে ফেলেছেন। চিকিত্সক হিসেবে পেয়েছেন স্বীকৃতি। খ্যাতি। পেয়েছেন অজস্র পুরস্কারও।
বিজয়লক্ষ্মীর কথায়, পিছড়েবর্গের প্রতিনিধি হিসেবে আমার আসা। যে মানুষগুলো জুতো সেলাই ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারে না। আমার বাবা, বাবুরাও স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে প্রাণিত হয়ে, মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে ভেবেছেন। বাবার প্রথাগত শিক্ষা ছিল না। তাতে কী। বাবা সেই বাঁধনটা ছিঁড়ে দিয়েছেন। যে কারণে, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন লালন করতে পেরেছি। বাবাও নিজের চেষ্টায় অক্ষর চিনেছেন। স্কুলে না পড়েও চিঠি লিখতে পারতেন। কন্নড়, মারাঠি, হিন্দি এবং ইংরেজি- সবই লিখতে ও পড়তে পারতেন।
১৯৫৫-য় জন্ম। এক ভাই, সাত বোন। মা-বাবাকে নিয়ে ১০ জনের সংসার। বিশিষ্ট এই অঙ্কোলজিস্টের কথায়, বস্তির মধ্যে ছোট্ট একখানি ঘর। সেখানেই কোনওক্রমে মাথাগুঁজে আমরা কাটিয়েছি। রোজ একবেলাই খেয়েছি। জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ ছিল কষ্টকল্পনা। পেটের টানে বাবা কখনও কাঠ বিক্রি করেছে, কখনও সেলাইফোঁড়াই, কখনও মুটে। কোনও নির্দিষ্ট কাজ ছিল না। তবে, পরের দিকে মিলে একটা কাজ পান। তাঁর এই গুণের জন্য লোকজন তাঁকে দেশমান্য বলে ডাকতে শুরু করেন।
আর তাঁর নাম বিজয়লক্ষ্মী কেন? বললেন, পণ্ডিত নেহরুর বোন বিজয়লক্ষ্মীর নামেই আমার নাম রেখেছিলেন বাবা। আর তাঁর 'দেশমানে' যোগ হয়েছে বাবার 'দেশমান্য' থেকে।
বিজয়লক্ষ্মী বলছিলেন, 'বাবা স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে ডাক্তার হবে। গরিবদের সেবা করবে। বস্তিতে থেকে আমাকে নিয়ে বাবার এই স্বপ্ন আমাকে বিস্মিত করেছে।'
বাবার স্বপ্ন পূরণই শুধু নয়, দেশের প্রথমসারির ডাক্তার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দীর্ঘ দিন দায়িত্ব সামলে এ বছর অবসর নিয়েছেন বিজয়লক্ষ্মী। তাঁর কথায়, 'আমার যা করার ছিল, তার অর্ধেকই করতে পেরেছি। তাই কাজ করে যেতে চাই।'
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
২৫ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ