শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬, ০৪:৪৯:২৩

যেসব কারণে ইন্টারনেটের গতি কমে যায়

যেসব কারণে ইন্টারনেটের গতি কমে যায়

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের ধীরগতির কারণে অনেকেই নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। শেষপর্যন্ত বিরক্ত হয়ে আবার তারের জগতে ফিরে যাওয়ার নজিরও রয়েছে অনেক। কিন্তু কী কারণে ওয়াইফাইয়ের নেটওয়ার্কের ধীরগতি? সম্প্রতি বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এর অন্যতম কারণ রাউটার। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে সিনেট।

তারহীন নেটওয়ার্ক সর্বদা তারের নেটওয়ার্কের তুলনায় কম গতির। তবে তা যে মাঝে মাঝে এত কম গতির হয়ে দাঁড়ায় এ বিষয়টি অনেকেই কল্পনা করতে পারেন না। আপনি যদি বাসায় কিংবা কর্মক্ষেত্রে দ্রুতগতির নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে চান তাহলে নানা প্রতিবন্ধকতায় তার গতি কমে যায়। এক্ষেত্রে অন্যতম দায়ী হলো আপনার ব্যবহৃত রাউটার।

বিশ্লেষকরা সম্প্রতি বাজারে প্রচলিত নানা রাউটার পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, এগুলো মূলত যে গতির কথা জানায়, সে গতিতে চলে না। এ কারণে ব্যবহারকারীরা কাঙ্ক্ষিত গতি পান না।

সিলিং স্পিড বনাম বাস্তব গতি:
সিলিং স্পিড নামে একটি গতির কথা উল্লেখ থাকে বহু রাউটারেই। এটি হলো সর্বোচ্চ গতি, যা সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতে রাউটারটির তথ্য আদান-প্রদান করার ক্ষেত্রে আসতে পারে। যদিও বাস্তবে কখনোই এ সর্বোচ্চ গতি পাওয়া যায় না।

ইথারনেট সংযোগের ক্ষেত্রে প্রায়ই এ সর্বোচ্চ গতি পাওয়া যায়। তবে ওয়াইফাই সংযোগের ক্ষেত্রে এটি কখনোই মেলে না।

ওয়াইফাইয়ের সর্বোচ্চ গতি না পাওয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে তুলে ধরেন বিশ্লেষকরা। এগুলো হলো :

- দূরত্ব : ওয়াইফাই রাউটার ও ডিভাইসের দূরত্ব।

- বাধা : ওয়াইফাই রাউটারের সঙ্গে ডিভাইসের মাঝামাঝি স্থানে থাকা দেয়াল ও অন্যান্য জিনিসের বাধা।

- ইন্টারফেরেন্স : বিভিন্ন ডিভাইস রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে। এগুলো ওয়াইফাই সিগন্যালকে বাধা দেয় এবং তথ্য আদানপ্রদান ধীর করে দেয়।

- কমপ্যাটিবিলিটি : একটি ওয়াইফাই রাউটারের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ডিভাইস সংযুক্ত থাকতে পারে। এগুলো সঠিকভাবে চালানোর জন্য প্রায়ই গতি সীমিত করে দেওয়া হয়, যা পারফর্মেন্সে প্রভাব বিস্তার করে।

বাজারে প্রচলিত কয়েকটি রাউটার ও ইথারনেটের গতির তুলনা
ডিভাইসের নাম - দাবিকৃত গতি (এমবিপিএস) - সিলিং স্পিড (এমবিপিএস) - বাস্তব গতি (এমবিপিএস)
তারযুক্ত গিগাবিট ইথারনেট --- ১,০০০ --- ১০০০---১০০০
লিংকসিস EA9500 --- --- ৫৪০০  --- --- ২১৬৭  --- --- ৬৮৫.২
আসুস RT-AC88U --- --- ৩১০০ --- --- ২১৬৭ --- --- ৬৪৩.৬
লিংকসিস EA8500 --- --- ২৫৩৩ --- --- ১৭৩৩ --- --- ৪৩৭.৮
আসুস RT-AC87U --- --- ২৪০০ --- --- ১৭৩৩ --- --- ৫০৪.৪
আসুস RT-AC68U --- --- ১৯০০ --- --- ১৩০০ --- --- ৫২১.৪
ডিলিংক DIR-890L/R --- --- ৩২০০ --- --- ১৩০০ --- --- ৬০১.৭
নেটগিয়ার R8000 --- --- ৩২০০ --- --- ১৩০০ --- --- ৪৮২.২
নেটগিয়ার R7500 --- --- ২৩৫০ --- --- ১৭৩৩ --- --- ৩৮১.৭
লিংকসিস WRT1900 --- --- ১৯০০ --- --- ১৩০০ --- --- ৫২০
আসুস RT-N66U --- --- ৯০০ --- --- ৪৫০ --- --- ১৩১.৯

গতি বাড়ানোর উপায়:

কয়েকটি উপায়ে ওয়াইফাই ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো যায়। এগুলো হলো :

১. ভালো মানের রাউটার ব্যবহার

২. রাউটারের অবস্থান বাড়ির মাঝামাঝি স্থানে রাখা। বাড়িতে বহু ভারী ফার্নিচার থাকলে সেগুলোর আড়ালে নয় বরং সেগুলোর উপরে রাউটার বসান।

৩. আপনার রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সি অন্য যন্ত্রপাতির ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে কনফ্লিক্ট করছে কি না, তা জেনে রাখুন। আপনার রাউটার যদি ২.৪ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে তাহলে তা কর্ডলেস ফোন, মাইক্রোওয়েভ, ব্লুটুথ, সিসিটিভি ইত্যাদির সঙ্গে কনফ্লিক্টের সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে ৫ গিগাহার্জ কিংবা ভিন্ন কোনো ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।

৪. ধাতব দরজা, অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো, ওয়াল ইনসুলেশন, পানির ট্যাংক বা অ্যাকুরিয়াম, আয়না, হ্যালোজেন লাইট, গ্লাস ও কংক্রিট ইত্যাদি রাউটারের তথ্য আদান-প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে। এ ধরনের বাধাগুলো যেখানে সবচেয়ে কম সেখানেই প্রয়োজনীয় যন্ত্র বা রাউটার স্থাপন করুন।

৫. রাউটার ও ইন্টারনেট সরবরাহের কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সফটওয়্যার নিয়মিত আপগ্রেড হয়। একটু খেয়াল রেখে রাউটার ও মোবাইল ডিভাইস বা পিসির সফটওয়্যার আপডেট করে নিলে ইন্টারনেটের ভালো গতি পাওয়া যেতে পারে।

৬. নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য এক্সটেন্ডার পাওয়া যায়। আপনার ওয়াইফাই রাউটার থেকে দূরে কোথাও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলে এক্সটেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন।

৭. আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ কোনো প্রতিবেশী ব্যবহার করলে এতে আপনার ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে। তাই প্রতিবেশীদের থেকে সাবধান। অবশ্য কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে একটি গতিশীল ইন্টারনেট নিয়ে তা শেয়ার করে ব্যবহার করাও একটি ভালো বুদ্ধি।

৮. ওয়াইফাই ইন্টারনেটের জন্য WEP বাদ দিয়ে কিছুটা নিরাপদ WPA/WPA2 ব্যবহার করুন। এটি ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়া নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তনও প্রয়োজনীয়।

৯. ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে আপনার নাম ও ডিভাইসের বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তার বদলে সাংকেতিক নাম ও অত্যন্ত গোপনীয় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।-কালের কণ্ঠ
২৫ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে