রহস্যময় জলদানব 'নেসি' !
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: স্কটল্যান্ডের লক নেস হ্রদের একটি রহস্যময় প্রাণী 'নেসি'। আবার অনেকের কাছে জলদানব নামেও পরিচিতি যার। রহস্যময় এই জলদানবটি স্বচক্ষে দেখতে প্রতিবছরই হাজার হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন স্কটল্যান্ডের ওই হ্রদটিতে।
এমনকি নেসিকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন সিনেমা, কার্টুন এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামও। কিন্তু যাকে নিয়ে এতো আয়োজন, সে যেন এতো সহজে ধরা পড়ে না।
ধারণা করা হয়, নেসির বাসস্থান এই হ্রদটিতে। তবে লক নেস হ্রদে সত্যিই কি 'নেসি'কে দেখা যায়, নাকি এটা শুধুই মানুষের কল্পনা মাত্র! তবে তার আগে জেনে আসা যাক, ইতিহাস কি বলে।
১৯৩৩ সালের এপ্রিলের কোনো এক সময় হ্রদের পাড় ঘেঁষে রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন দুইজন ভদ্রলোক। হঠাৎ করেই হ্রদটিতে চোখ পড়তেই তারা বিশাল একটি প্রাণী দেখতে পান। তাদের দাবি অনুসারে প্রাণীটা ছিল প্রায় ৩০ ফুটের মতো লম্বা। মাথার শুরু এবং দেহের শেষটাও দেখতে অনেকটা সাপের মতো এবং দেহের ঠিক মাঝামাঝি পেটের কাছে রয়েছে দুটো পাখনা। দেখামাত্র মুহূর্তের মধ্যেই প্রাণীটা চলে যায় আবারও জলের তলায়।
পরের বছরই একজন ছাত্র মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় হ্রদের পাশের রাস্তায় কোন একটা বিশাল প্রাণীর সাথে প্রায় ধাক্কা খায়। ছেলেটার বর্ণনা অনুসারে প্রাণীটি সরীসৃপ গোছের বিশালাকৃতির, যার মাথা অনেকটা সাপের মতো। আগের বর্ণনার সাথে ছেলের দেয়া বর্ণনাও অনেকটা মিলে যায় ।
নেসির খবর মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। তারপরই শুরু হয় রহস্যের প্রেক্ষাপট। অনেক অনেক ক্যামেরা বসানো হলো নেসিকে দেখার জন্য। বেশ কয়েকটা ছবিও তোলা হলো বটে, কিন্তু তাতে পরিষ্কারভাবে কিছুই যেন ধরা পড়লো না। জলের আলোড়নের ছবি উঠলো, সাথে কিছু ভি আকৃতির ফেনার ছবি। তাতে বুঝা বড় দায় যে, এটাই নেসি কিনা!
তবে ১৯৩৪ সালে লন্ডনের একজন ডাক্তার নেসির মাথা তুলা অবস্থায় একটি সুস্পষ্ট ছবি প্রকাশ করেন, যা অনেক আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু বছর কয়েক পর প্রমানিত হলো, ছবিটি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা।
নেসিকে সেভাবে ক্যামেরাবন্দি করতে না পারলেও এর দর্শন নিয়ে প্রায় ৩০০০ এরও বেশি ঘটনা আছে। তবে পুরোপুরি ধরা না পরে চিরকালই মানুষকে ফাঁকি দিয়ে গেছে নেসি।
সাম্প্রতিক সময়েও নেসি দর্শনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। ১৯৬৩ সালের জুলাই মাসে নেসিকে দেখতে পান এক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা। তারা হ্রদটির পাশ দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় দেখলেন ডাঙায় শুয়ে রোদ পোহাচ্ছে কোন একটা বিশাল আকৃতির প্রাণী। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়েই প্রাণীটি সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে গেল। তাদের মতানুসারে প্রাণীটি ছিল প্রায় ৪০ ফুট।
তাই এতো এতো রহস্যের মধ্যে গা গুটিয়ে বসে থাকতে পারলেন না বিজ্ঞানীরা। নেসিকে খুঁজতে ১৯৭০ সালে প্রথম বৈজ্ঞানিক অভিযান শুরু হয়। তারা নেসিকে খুঁজতে আণ্ডারওয়াটার ক্যামেরা থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক সব যন্ত্র নিয়ে নিমে পড়েন হ্রদটিতে। অভিযানের একপর্যায়ে একটি ছবি তোলা হয় পানির নিচ থেকে, যাকে দেখলে ২০ ফুটের মতো লম্বা একটা প্রাণী বলেই মনে হয়। পরে নিশ্চিত হওয়া গেল যে, এটা একটা গাছ ছাড়া কিছুই না। এ অভিযানেও বিজ্ঞানীরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
সাম্প্রতিককালে ইকো ব্যবহার করে লক নেসের তলদেশে বিশাল এক গুহা বা খাদ আছে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। অনেকের মতে, ১৫০০ বছর আগের কোনো এক প্রাণীর উত্তরসূরি হলো আজকের নেসি। তবে এটি শুধু গবেষকদের ধারণা কিংবা মতামত। আধুনিক এই বিজ্ঞানের যুগেও পৃথিবীর বুকে এক অপার রহস্য হয়ে আছে জলদানব নেসি।
২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস