শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৩:৫৫:২৭

বাঘের বন্ধু টিপু সুলতান !

বাঘের বন্ধু টিপু সুলতান !

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক:টিপু সুলতানের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। তবে কোনো একসময় টেলিভিশনে যারা টিপু সুলতান ড্রামাসিরিজটি দেখেছেন তারা অনেকেই স্বপ্নে টিপুর ভূমিকায় নিজেকে দেখতেন। কেউবা মনে মনে ভাবতেন, ইশ.. যদি আমি টিপু সুলতান হতে পারতাম। সেই মহাবীর টিপু সুলতানকে নিয়েই কিছু তথ্য দেয়া হল, যা হয়তো অনেকেরই অজানা।

১৭৫০ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন টিপু সুলতান । হায়দার আলীর ২য় স্ত্রী ফকির-উন-নিসার গর্ভে জন্ম নেন টিপু । কথিত আছে যে, তার বাবা হায়দার আলী টিপু নামের এক ফকিরের দোয়ায় পুত্র সন্তান লাভ করেন। এজন্য তিনি অতি আনন্দচিত্তে ওই ফকিরের নামেই ছেলের নাম রাখেন।

প্রথমত দক্ষিণ ভারতের মহীশূর রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন হায়দার আলী । টিপুর যখন কিশোর বয়স তখন তার বাবা হায়দার আলী মহীশূরের ক্ষমতা দখল করেন এবং পিতার মৃত্যুর পর টিপু ৩২ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন।

টিপু ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা । ইংরেজদের বিরুদ্ধে বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করায় 'শের-ই-মহীশূর' (মহীশূরের বাঘ) নামেও পরিচিতি ছিল তার। তবে এই বাঘ (শের) হয়ে ওঠার পেছনে বেশকিছু কারণও ছিল বটে ।

এর মূল কারণ ছিলো তার অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, দক্ষতা আর কৌশলপূর্ণ রাজ্য পরিচালনা । তবে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই বাঘের গল্প শুনতে ভালোবাসতেন টিপু। বাবাও তাকে বাঘের গল্প শোনাতেন। একসময় টিপুর  ইচ্ছে জাগলো বাঘ পুষতে । আর সেই কিশোর বয়স থেকেই তিনি বাঘ পুষতে শুরু করেন।

বাবার মৃত্যুর পর তিনি যখন সিংহাসনে আরোহণ করলেন, তখন পুরনো সিংহাসনটি সরিয়ে দিয়ে তৎকালীন শ্রেষ্ঠ কারিগর দিয়ে একটি নতুন সিংহাসন বানিয়ে নিলেন । কাঠের তৈরি ফ্রেমের সেই সিংহাসনটির উপর সোনার পাত বসিয়ে তার উপর মণিমুক্তা ও রত্নখচিত করা হয়েছিল।

আট কোণা ওই আসনটির ঠিক মাঝখানে ছিল একটি বাঘের মূর্তি। ৮ ফুট চওড়া আসনটির রেলিংয়ের মাথায় বসানো ছিল সম্পূর্ণ স্বর্ণের তৈরি দশটি বাঘের মাথা। আর উপরে উঠার জন্য দুপাশে ছিল রূপার তৈরি সিঁড়ি।

তার পুরো সিংহাসনটি বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা থাকায় সেটির নামকরণ করা হয়েছিল ব্যাঘ্রাসন (Tiger throne)।  কিশোর বয়সের মতো তখনও তার বাঘ পোষার অভ্যাস ছিল তার। তাই রাজবাড়িতে বেশ কয়েকটি পোষা বাঘ ঘরের দরজার সামনে বাঁধা থাকতো সবসময়।

টিপুর সমস্ত পরিধেয় পোশাক ছিল হলুদ-কালো রঙে ছাপানো আর বাঘের শরীরের মতো ডোরাকাটা। তিনি যে তলোয়ার ব্যবহার করতেন, তার গায়েও ছিলো ডোরা দাগ এবং হাতলে ছিলো খোদাই করা বাঘের মূর্তি।

তার ব্যবহৃত রুমালটিও ছিল বাঘের মতো ডোরাকাটা। তার রাজ্যের সমস্ত সৈনিকের পোশাকে থাকতো বাঘের ছবি। সৈন্যদের ব্যবহার্য তলোয়ার, বল্লম, বন্দুকগুলোর নল, কুদো, হ্যামারেও আঁকা থাকতো বিভিন্ন আকারের বাঘের প্রতিরূপ কিংবা মূর্তি।

তিনি তার রাজ্যের প্রধান প্রধান সড়কের পাশে, বাড়ির মালিকদেরকে বাড়ির দেয়ালে বাঘের ছবি আঁকার নির্দেশ জারি করেছিলেন।

এমনকি টিপু সুলতানের রাজ্যের প্রতীকও ছিল বাঘ। আর এই বাঘই ছিল তার অনুপ্রেরণার পথ। তিনি সিংহাসনে বসে মাঝে মাঝেই বলতেন, 'ভেড়া বা শিয়ালের মতো দু'শ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দু'দিন বেঁচে থাকাও ভালো'।

১৭৮১ সালে ব্রিটিশ সেনাপতি হেক্টর মুনরো ২য় মহীশূরের যুদ্ধে টিপু সুলতানের রাজ্যকে চরম বিপর্যস্ত করে ফেলেন। এই যুদ্ধে টিপু বাহিনীর বহু সৈন্য নিহত হয়, ক্ষয়ক্ষতি হয় অপূরণীয়।

ওদিকে ব্রিটিশ সেনাপতি মুনরোর একমাত্র ছেলে সুন্দরবনে বাঘ শিকার করতে গিয়ে বাঘের হাতে মারা যায়। এ ঘটনার পর কেউ কেউ মনে করতেন বাঘের বন্ধুই টিপু সুলতান। তৎক্ষণাৎ টিপু সুলতানের মাথায় দারুণ বুদ্ধি খেলে যায়।

তিনি ফরাসি প্রকৌশলীদের মাধ্যমে একটি খেলনা নির্মাণ করেন। যা Tipu's Tiger নামে দুনিয়াজুড়ে খ্যাতি পায়। খেলনাতে একজন ইংরেজ সেনার উপর বাঘের আক্রমণের দৃশ্য দেখা যায়। দম দিয়ে ছেড়ে দিলে বাঘটি মাথা নাড়তো এবং ইংরেজটি দুহাত দিয়ে বাঘের মাথাকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করত।

খেলনাটিতে অর্গান ব্যবহৃত হয়েছিল। যার ভেতর থেকে বাঘের গর্জন, ইংরেজের কান্নার শব্দ এবং ব্যকগ্রাউন্ডে টিপুর প্রিয় গজলের শব্দ ভেসে আসতো।

অনেকের মতে, টিপু সুলতান একজন ধার্মিক ব্যক্তি। আবার কেউ কেউ বলেন তিনি ছিলেন স্বৈরাচার। তবে বাস্তবপক্ষে তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। রাজ্য জয় করার জন্য তার ছিল অসীম সাহসিকতা । ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে সেনাপতি মীর সাদিকের বিশ্বাসঘাতকতায় নিহত হন এই শের-ই-মহীশূর টিপু সুলতান।
২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে