স্পন্দিত হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম হার্ট
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : জীবন-মরণ সবই সৃষ্টিকর্তার হাতে। যে কোন মানুষের কাছেই তার নিজ প্রাণের মায়া অনেক বেশি। তাইতো সে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যায়, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য। তবে বেঁচে থাকার এই সংগ্রামে অনেকসময় সঙ্গ ছেড়ে দেয় তার বিভিন্ন অঙ্গগুলি।
ঠিক তখন হয়তোবা কোনো যন্ত্র বা অন্য কোনো ব্যক্তির অঙ্গ নিজ দেহে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তার জীবনের দীর্ঘায়ন করা হয়। কিন্তু সর্বদা অন্যের অঙ্গ দেহে প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় না। সবই হচ্ছে আল্লাহর দান, তিনি চাইলে সবই সম্ভব।
এই বিশ্বাস ধরে রেখে চিকিৎসকরা দিন দিন নতুন নতুন আবিষ্কার করে যাচ্ছেন। অসম্ভব কাজকে সম্ভব করার জন্য তারা প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
এরকমই একটি কাজের ফল হিসেবে সম্প্রতি ৭৫ বছর বয়সী এক ফরাসি বৃদ্ধকে চিকিৎসকরা সফলভাবে বিপ্লবী কৃত্রিম হৃদয় প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে জীবনের উপহার দিয়েছেন।
কিছুদিন আগে প্যারিসের জর্জ পাম্পিদ ইউরোপিয়ান হাসপাতালে রোগীটির (এ পর্যন্ত নাম জানা যায়নি) ১০ঘন্টা দীর্ঘ অপারেশন সম্পন্ন হয় এবং রিপোর্ট করা হয় যে তিনি এখন ক্রমশ সুস্থ আছেন। সাধারণত একজন দাতা সনাক্ত করা পর্যন্ত রোগীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়। তাদের এ প্রক্রিয়ায় একজন ব্যক্তির সুস্থ করে তুলতে সক্ষম এই ‘কারমেট’ (Carmat) হৃদয় একটানা পাঁচ বছরের জন্য কাজ করবে বলে আশা করছেন।
দুই পাউন্ড ভরের এ যান্ত্রিক অঙ্গের ভেতরে সেন্সর এবং মাইক্রোপ্রসেসর একটি জটিল সিস্টেম তৈরি করে যা দেহের প্রয়োজনীয় রক্তপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এটা ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে যে, রক্ত প্রবাহ দ্রুত নাকি নিম্ন গতি সম্পন্ন হবে। কৃত্রিম অঙ্গের জটিলতার সম্ভাবনা (যেমন: রক্ত জমাট বাঁধা) কমাতে বাইরের দিকের পৃষ্ঠটি আংশিকভাবে গরু টিস্যু দিয়ে তৈরি হয়, এই বানানো উপকরণ রক্তের সংস্পর্শে আসতে দেখা যায়।
কৃত্রিম হৃদয় প্রতিস্থাপন প্রাপ্ত রোগীকে সাধারণত যেমন ঝুঁকি কমানোর জন্য রক্ত জমাটে বাঁধাবিরোধী ঔষধ সেবন করতে হয়।
প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে রাসায়নিক দ্রবণে পশুর কলা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে কৃত্রিম হৃদয়ের ভালভ থেকে আকৃতি নিয়ে উন্নয়ন সম্ভব হয়ে উঠে । তবে এ উন্নতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৫ বছর।
অতঃপর মানব পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর ফ্রান্স, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষ থেকে ২০১৪ সালের শেষ পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে। যদি সব ঠিক হয়, অর্থাৎ রোগীরা যদি ‘কারমেট’ (Carmat) সিস্টেমের সাথে কমপক্ষে একটি মাস বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে তাদের প্রাপ্তিসাধ্য নিয়ন্ত্রক অনুমোদন চাওয়ার উপায় থাকবে।
কিন্তু এ প্রযুক্তির মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এই হৃদয় কি কয়েক বছর টিকে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে।
বার্নি ক্লার্ক (বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম হৃদয়ের ইমপ্লান্ট রোগী), ১৯৮২ সালে মনুষ্যসৃষ্ট Jarvik-7 হৃদয়ের সঙ্গে যার দুর্বল হৃদয়ের প্রতিস্থাপন করা হয়। এই মাইলফলক পদ্ধতি অনুসরণ করে তিনি মাত্র ১১২ দিন বেঁচে ছিলেন। 'SynCardia' সম্পূর্ণ-কৃত্রিম হৃদয় যা এফডিএ অনুমোদিত একমাত্র হৃদয় প্রতিস্থাপনের বিকল্প। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীরা অধিক সময় বেঁচে থাকতে পারেন তবে তাদের বুকেরবায়ু নল এবং বাইরে ঠিকমতো সংকোচন ঘটানোর জন্য রোগীকে কমপ্রেসর বহন করতে হয়।
'কারমেট' কৃত্রিম হৃদয়ের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সেন্সর এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং শরীরের চাহিদার উপর নির্ভর করে রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
'কারমেট' ডিভাইসটি লিথিয়াম আয়ন রিচার্জেবল ব্যাটারীদ্বারা চালিত এবং বাইরের দিকে জীর্ণ, একটি মানুষের হৃদয়ের চেয়ে প্রায় তিনগুণ ভারী, যা পুরুষদের ক্ষেত্রে ৮৬শতাংশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ সামঞ্জস্যতা সীমিত করে। তবে, ছোট দৈহিক উচ্চতার মহিলাদের জন্য ছোট ভার্সন পরিকল্পনা করে হচ্ছে।
'কারমেট' কৃত্রিম হৃদয়ের জন্য আপনাকে খরচ গুনতে হবে ১৪০,০০০ থেকে ১৮০,০০০ ইউরো, ১৯১,০০০ থেকে ২৪৬,০০০ ডলার এবং ১,৪৮,৪০,৭০০ থেকে ১,৯১,১৪,২০০ টাকা।
২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস