শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৩৬:১৪

সূয্যিমামা, একটু আলো দাও না...

সূয্যিমামা, একটু আলো দাও না...

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : শীতের সকালে সোনারাঙা রোদে বসে আমরা চা-মুড়ি খাই। রোদ পোহাই। কতই না মজা লাগে! স্রষ্টার অপার কৃপায় আমাদের আকাশে সূয্যিমামার উপস্থিতি সারবছরই প্রায় সমান। কিন্তু বিশ্বের এমন এমন জায়গা আছে, যেখানে ছয় মাসেও সূয্যিমামার দেখা নেই! একটু আলোর জন্য কতই না কসরত করতে হয় তাদের।

এমনই একটি দেশ নরওয়ে। সেখানের একটি শহরের বাসিন্দারা বছরের ছয় মাস রোদের আলোর ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত থাকে। অবশ্য এ থেকে উত্তরণে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে তাদের। অভিনব এক উপায় বের করে সে সমস্যার মোটামুটি সমাধানও করেছেন তারা।

নরওয়ের রাজধানী অসলো থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট শহর রুকন। মাত্র সাড়ে তিন হাজার মানুষের বসবাস সেখানে। চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা থাকায় শীতকালে সেখানে রোদ পৌঁছতে পারে না। ফলে বছরের অর্ধেকটা সময় (সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ) সেখানকার অধিবাসীরা রোদের দেখা পান না।

প্রায় একশো বছর আগে রুকনের বাসিন্দাদের জন্য আলোর ব্যবস্থা করতে স্যাম আয়ডে নামের এক ব্যবসায়ী একটি অভিনব পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু প্রযুক্তির অভাবে সেটার বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। তাই বিকল্প হিসেবে, বছরের ওই সময়টা অধিবাসীরা যেন রোদ পান, তাই তাদের কেবল কার-এ করে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

 


স্থানীয় মার্টিন অ্যান্ডারসেন ২০০৫ সালে শত বছর আগের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। এর আওতায় সমতল থেকে প্রায় সাড়ে চারশ মিটার উপরে পাহাড়ের গায়ে তিনটি বড় আয়না স্থাপন করা হয়। শীতকালে রোদ সেই আয়নাগুলোতে প্রতিফলিত হয়ে শহরের গায়ে ঢলে পড়ে।

একটি কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে আয়নাগুলো সূর্যের পথ বুঝে এদিক-সেদিক নড়াচড়াও করে। এভাবে রুকন শহরের প্রায় ৬০০ বর্গমিটার এলাকায় রোদ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এজন্য খরচ হয়েছে ছয় লাখ ২০ হাজার ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ছয় কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

রুকনের আগে আলপ্সের কাছে ইতালির একটি গ্রামে ২০০৬ সালে এই আয়নাটি বসানো হয়। এর ফলে ভিগানেলা গ্রামে শীতকালে রোদের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।

জার্মানির দক্ষিণের ভিল্ডগুটাখের ছোট্ট এক গ্রামের একটি পরিবার এতোদিন মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য ফেব্র“য়ারি পর্যন্তরোদের দেখা পেত না। সে সমস্যার সমাধানে তারা ২০১০ সালে ছোট্ট এই আয়নার ব্যবহার শুরু করে। নরওয়ের রুকনের মতো এতো বেশি আলো না পেলেও জার্মানির ওই পরিবারটি যে আলো পাচ্ছে তাতেই তারা সন্তুষ্ট।

একটুখানি আলোর জন্য কত কত চেষ্টা। সূয্যিমামার কাছে ওইসব বাসিন্দাদের কী ভীষণ আকুতি! ‘সূয্যিমামা, একটু আলো দাও না’। কত বিচিত্র এই পৃথিবী!

২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে