সোমবার, ১১ জুলাই, ২০১৬, ১২:১৪:৩০

এখনও পানির স্রোত বয়ে চলেছে মঙ্গল গ্রহে!

এখনও পানির স্রোত বয়ে চলেছে মঙ্গল গ্রহে!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : এখনও পানি বইছে ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলে? আর সেই পানির স্রোত কি মৌসুমী বায়ুর মতো শুধুই মৌশুমি? মানে, মঙ্গলে যাকে বলে ‘গরম কাল’, সেই গা পুড়ে যাওয়া ‘লাল গ্রহে’র নিরক্ষরেখার (ইকুয়েটর) কাছে কি বয়ে চলে এখনও পানির স্রোত? আর ‘গ্রীষ্ম’ চলে গিয়ে মঙ্গলে ‘শীত কাল’ এলে কি সেই পানির ধারা শুকিয়ে যায়? তখন ‘লাল গ্রহে’র গা থেকে মুছে যায় ‘পানির রেখা’?

সদ্য প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে নাসা-র তরফে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ; প্ল্যানেট্স’-এ। মূল গবেষক টাক্সনে, আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি ল্যাবরেটরির বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী ম্যাথু শোজনাকি তাঁর গবেষণাপত্রে বলেছেন, ‘‘মঙ্গলের নিরক্ষরেখার কাছে ‘ভ্যালেস মারিনারিজ’ নামে যে সুবিশাল গিরিখাত রয়েছে, সেখানে ‘গরম কালে’ আমরা এমন কয়েক হাজার কালো রেখা দেখতে পেয়েছি। দুটি মার্কিন ‘রোভার’ মহাকাশযান- ‘কিউরিওসিটি’ ও ‘অপরচ্যুনিটি’র পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করেই ওই কালো রেখা বা দাগগুলোর হদিশ মিলেছে।

ওই গিরিখাতই আপাতত এই সৌরমণ্ডলের অন্য গ্রহগুলোতে হদিশ মেলা গিরিখাতগুলোর মধ্যে বৃহত্তম। মঙ্গলে ওই সুবিশাল গিরিখাত এলাকার প্রাকৃতিক গঠন পরীক্ষা করে আমাদের কখনওই মনে হয়নি, নীচ থেকে পানি সরাসরি ওপরে উঠে আসার ফলেই ওই কালো দাগ বা রেখাগুলোর জন্ম হয়েছে। তা হলে নীচ থেকে জল ওপরে উঠে আসার চিহ্ন মিলত ‘লাল গ্রহে’র পিঠে (সারফেস)। এমনকি মঙ্গলের পিঠের নীচের স্তরে থাকা পাতলা বরফ-স্তর ‘লাল গ্রহে’র ‘গ্রীষ্মে’র তাপমাত্রায় গলে গিয়ে পানি হয়ে যাচ্ছে আর সেই পানির স্রোতের জন্যই মঙ্গলের পিঠে ওই কালো রেখা বা দাগগুলোর জন্ম হচ্ছে, এটাও কোনও বিশ্বাসযোগ্য কারণ হতে পারে না। যেহেতু যে সংখ্যায় ওই কালো রেখা বা দাগগুলো দেখা যাচ্ছে, তার তুলনায় মঙ্গলের পিঠের নীচে থাকা বরফ-স্তর একেবারেই পাতলা।’’


তা হলে কী ভাবে ওই ‘পানির রেখা’র সৃষ্টি হচ্ছে মঙ্গলের পিঠে, এখনও? সহযোগী গবেষক মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, ‘‘মঙ্গলের পিঠে প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে রয়েছে লবণ। নানা রকমের নুন। ক্লোরাইড, ক্লোরেট, পারক্লোরেট, ফ্লোরাইড, কার্বনেট, বাই-কার্বনেট- হরেক রকমের লবণ। কোনও লবণের তালকে খোলা অবস্থায় রাখলে আমরা কিছুক্ষণ পর দেখি, তার গা’টা ভিজে গিয়েছে। তার গা বেয়ে জল গড়াচ্ছে। কেন? কারণ, বাতাসে যে জলীয় বাষ্প থাকে, নুন তা টেনে নিয়ে ভিজে যায়। একই রকম ভাবে মঙ্গলের পিঠে ছড়িয়ে থাকা হরেক রকমের প্রচুর লবণও ‘লাল গ্রহে’র বায়ুমণ্ডল থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নেয়, নিচ্ছে। তার ফলে ওই পানির স্রোতের (কালো রেখা) সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমরা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। আরও একটু সময় লাগবে।’’

মঙ্গলের পিঠে ওই সুবিশাল গিরিখাত এলাকা ‘ভ্যালেস মারিনারিজ’-এর ক’টি জায়গায় ওই পানির স্রোত বয়ে চলার ‘চিহ্ন’ মিলেছে?

জ্যোতির্ময় বলছেন, ‘‘ভ্যালেস মারিনারিজ’ গিরিখাত এলাকার মধ্য ও পূর্ব ভাগে এমন ‘পানির দাগ’ (যাকে বলে ‘রেকারিং স্লোপ লাইনি’ বা ‘আরএসএল’) থাকা অন্তত ৪৫টি এলাকার সন্ধান মিলেছে। আর প্রত্যেকটি এলাকায় মিলেছে কম করে এক হাজার ‘পানির স্রোতে’র দাগ। ‘আরএসএলে’র এতটা ঘনত্ব এই সৌরমণ্ডলের আর কোনও গ্রহে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। আরও মজার কথা, বেশ কয়েকটি ‘আরএসএল’-এ কালো রেখা বা দাগগুলোর আশপাশটা বালির মতো খুব চিকচিক করতে দেখা গিয়েছে। হয়তো সেগুলো হচ্ছে পড়ে থাকা লবণের জন্যই। ‘গরম কাল’ ফুরিয়ে যাওয়ার পর যখন কালো রেখাগুলো আর দেখা যায় না মঙ্গলের ওই বৃহত্তম গিরিখাত এলাকায় (মানে, জল যখন শুকিয়ে যায়), তখনই এলাকাটিকে বেশি চিকচিক করতে দেখা গিয়েছে। আমাদের অনুমান, পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর ওই লবণগুলো থেকে যাচ্ছে, যার জন্যই এলাকাটিকে বেশি চিকচিক করতে দেখা যাচ্ছে। আবার ‘গরম কাল’ এলে সেই চিকচিকানি কমে যাচ্ছে বা একেবারেই থাকছে না, কারণ, সেই সময় পড়ে থাকা লবণ ফের বাতাস থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নিয়ে ‘জলের স্রোতে’র জন্ম দিচ্ছে মঙ্গলের পিঠে, এখনও।’’

মঙ্গলের গিরিখাত এলাকায় সেই কালো দাগ। আলো বা জীবনেরও নয় কি?  তবে ওই সুবিস্তীর্ণ গিরিখাত এলাকায় যতগুলো কালো দাগ মিলেছে, সেগুলো যদি পানির স্রোতের জন্যই হয়, তা হলে সেই পানি হওয়ার জন্য কি পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প রয়েছে ওই গিরিখাত এলাকা ‘ভ্যালেস মারিনারিজ’-এর বায়ুমণ্ডলে?

জ্যোতির্ময়ের কথায়, ‘‘যে সংখ্যায় আর যতটা লম্বা কালো রেখার হদিশ মিলেছে ওই গিরিখাত এলাকার দুটি অঞ্চলে (মধ্য ও পূর্বাঞ্চল), তা যদি জলের স্রোত হয়, তা হলে তার জন্য এমন পানি লাগবে, যা দিয়ে অলিম্পিকের সাইজের অন্তত ৪০টি সুইমিং পুল ভরিয়ে দেওয়া যাবে, অনায়াসে। পরিমাণে যা প্রায় এক লক্ষ বর্গ মিটার জল। ‘ভ্যালেস মারিনারিজ’ নামে গোটা গিরিখাত এলাকার বায়ুমণ্ডলে যতটা জলীয় বাষ্প রয়েছে, আমরা সেটাও মেপে দেখেছি। তাতে দেখেছি, এক লক্ষ বর্গমিটারের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি জলীয় বাষ্প রয়েছে সেই বায়ুমণ্ডলে। তার মানে, প্রয়োজনীয় পানির স্রোতের জন্য লবণকে সেই বায়ুমণ্ডল থেকে যতটা জলীয় বাষ্প টানতে হবে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি জলীয় বাষ্প রয়েছে গোটা গিরিখাত এলাকার বায়ুমণ্ডলে। মানে, আমরা যেটা অনুমান করছি, সেটা সম্ভব। কিন্তু, সেই প্রক্রিয়াটা কতটা কার্যকর হচ্ছে ওই গিরিখাত এলাকায়, তা আমরা এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি।’’

মঙ্গলের পিঠে সেই কালো দাগ, যা নীচেও নামছে! যেন পানির ধারা! তবে ওই সুবিস্তীর্ণ গিরিখাত এলাকায় যতগুলো কালো দাগ মিলেছে, সেগুলো যদি ‘পানির স্রোতে’র জন্যই হয়, তা হলে সেই জল হওয়ার জন্য কি পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প রয়েছে ওই গিরিখাত এলাকা ‘ভ্যালেস মারিনারিজ’-এর বায়ুমণ্ডলে?

জ্যোতির্ময়ের কথায়, ‘‘যে সংখ্যায় আর যতটা লম্বা কালো রেখার হদিশ মিলেছে ওই গিরিখাত এলাকার দু’টি অঞ্চলে (মধ্য ও পূর্বাঞ্চল), তা যদি জলের স্রোত হয়, তা হলে তার জন্য এমন জল লাগবে, যা দিয়ে অলিম্পিকের সাইজের অন্তত ৪০টি সুইমিং পুল ভরিয়ে দেওয়া যাবে, অনায়াসে। পরিমাণে যা প্রায় এক লক্ষ বর্গ মিটার জল। ‘ভ্যালেস মারিনারিজ’ নামে গোটা গিরিখাত এলাকার বায়ুমণ্ডলে যতটা জলীয় বাষ্প রয়েছে, আমরা সেটাও মেপে দেখেছি। তাতে দেখেছি, এক লক্ষ বর্গ মিটারের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি জলীয় বাষ্প রয়েছে সেই বায়ুমণ্ডলে। তার মানে, প্রয়োজনীয় জলের স্রোতের জন্য লবণকে সেই বায়ুমণ্ডল থেকে যতটা জলীয় বাষ্প টানতে হবে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি জলীয় বাষ্প রয়েছে গোটা গিরিখাত এলাকার বায়ুমণ্ডলে। মানে, আমরা যেটা অনুমান করছি, সেটা সম্ভব। কিন্তু, সেই প্রক্রিয়াটা কতটা কার্যকর হচ্ছে ওই গিরিখাত এলাকায়, তা আমরা এখনও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি।’’

গবেষণাপত্রটির একেবারে উপসংহারে লেখা হয়েছে, ‘‘কালেক্টিভলি, রেজাল্টস প্রোভাইড অ্যাডিশনাল সাপোর্ট ফর দ্য নোশন দ্যাট সিগনিফিকে‌ন্ট অ্যামাউন্টস অফ নিয়ার-সারফেস ওয়াটার ক্যান বি ফাউন্ড অন মার্স টুডে অ্যান্ড সাজেস্ট দ্যাট আ ওয়াইডস্প্রেড মেকানিজম, পসিব্লি রিলেটেড টু দ্য অ্যাটমসফিয়ার, ইজ রিচার্জিং আরএসএল সোর্সেস।’’ -আনন্দবাজার
১১ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে