এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ১ হাজার ৫০ টাকা দিয়ে কখনো কি এক খিলি পান খেয়েছেন? না খেলেও খেতে পাবেন রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ঈদ মেলায় বাঘা দরগা শরিফের গেটের সামনে সিদ্দিক কবিরাজের পানের দোকানে।
এক খিলি পান খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট, যা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত।
কেউ চাচ্ছেন নবাব পান, জমিদার পান, নাটোরের বনলতা পান, আয়ুর্বেদিক পান, বিয়াই-বিয়ান পান, শালি-দুলাভাই পান, হাসি-খুশি পান, নতুন বাবুর হাতের পান, ভালোবাসার পান, বন্ধু-বান্ধবীর পান, জনতার পান, খয়ের জর্দ্দা আবার কেউবা মিষ্টি পান।
সিদ্দিক কবিরাজ (৪৫) নাটোরের লালপুর উপজেলার জয়রামপুর-বেড়িলাবাড়ি গ্রামের মৃত গরিবউল্লার ছেলে। হরেক রকম জর্দ্দা আর মসলা দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন স্বাদের পান।
বাহারি এ পান খেতে দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে। তিনি ২৬ বছর ধরে ব্যবসা করে আসলেও ঐতিহ্যবাহী ঈদ মেলায় ১৭ বছর ধরে খিলি পানের ব্যবসা করে আসছেন।
বড় ধরনের ব্যবসা করতে মোটা অংকের পুঁজির প্রয়োজন। তার সাধ থাকলেও সাধ্যের বাইরে ছিল সে স্বপ্ন। ১৯৮৭ সালে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করেন খিলি পান বিক্রি। দীর্ঘ ২৬ বছর পানের দোকানদারি করে সিদ্দিক কবিরাজ এখন স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।
সিদ্দিক কবিরাজ জানান, এ মাসে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকার পান বিক্রি হয়েছে। গত চারদিনেই প্রায় ৩০ হাজার টাকার খিলি পান বিক্রি করেছেন তিনি।
এক খিলি নাটোরের বনলতা পান বিক্রি করছেন ৪২০ টাকা মূল্যে। বিভিন্ন পণ্যের দামসহ যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে তার ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়।
সিদ্দিক কবিরাজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পানের খিলি ব্যবসায়ী। তিনি তার দোকানের সাইন বোর্ডে লিখেছেন- ‘আপনজনের জন্য নিয়ে যাবেন, ভালো লাগলে দাম দেবেন, না লাগলে দেবেন না।’
সিদ্দিক কবিরাজ জানান, মেয়ে শিখা খাতুন স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণি ও ছেলে শান্ত হোসেন দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে খুব বেশি লেখাপড়া হয়নি।
তবে টাকার অভাবে যাতে ছেলের পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায় সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন রয়েছেন তিনি। ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন এই পান ব্যবসায়ী।
সিদ্দিক কবিরাজের দোকানে পানের মূল্যের মধ্যে নবাব পান ১০৫০ টাকা, জমিদার পান ৫১০ টাকা, নাটোরের বনলতা পান ৪২০ টাকা, আয়ুর্বেদিক পান ২৫০ টাকা, বিয়াই-বিয়ান পান ২১০ টাকা, শালি-দুলাভাই পান ১৭০ টাকা, হাসি-খুশি পান ১১০ টাকা, নতুন বাবুর হাতের পান ৯৫ টাকা, ভালোবাসার পান ৪৫ টাকা, বন্ধু-বান্ধবীর পান ২৫ টাকা ও জনতার পান ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় মেলায় ঘুরতে আসা আশরাফুল আলম নামের এক শিক্ষক বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে এ মেলায় পান বিক্রি করে আসছেন তিনি। তার পান খাওয়ার জন্য মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। বিক্রিও ভালো হয়।
সিদ্দিক কবিরাজ বলেন, আমি দেশের বিভিন্ন জেলায় পান বিক্রি করে বেড়াই। স্থানীভাবে ব্যবসা করি না। ভ্রাম্যমাণ হিসেবে এ ব্যবসা করে আসছি। যেখানে বড় বড় মেলা বা অনুষ্ঠান হয় সেখানে যাই। এভাবে দীর্ঘ ২৬ বছর চলছে।
সাত ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় সিদ্দিক কবিরাজ। বাবা তিন বছর আগে মারা গেছেন। বর্তমানে বৃদ্ধ মাসহ ৫ সদস্যের পরিবার পরিচালনা করছেন তিনি।
১৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম