শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬, ০৫:২৯:০৭

৪০০০ বছর আগে মরে যাওয়া নদী ফের বেঁচে উঠছে!

৪০০০ বছর আগে মরে যাওয়া নদী ফের বেঁচে উঠছে!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী— এই তিন নদীকে ভারতীয় হিন্দুদের পবিত্র ধারা বলে মনে করা হয়। উত্তরপ্রদেশের এলাহাবাদের কাছে মিলিত হতে গঙ্গা ও যমুনার দেখা মিললেও, সরস্বতীকে দেখা যায় না। মনে করা হয়, অদৃশ্য হয়েও সরস্বতী নদী এই স্থানে এসে মিশেছে। যদিও, ইতিহাস বলছে ৪ হাজার বছর আগে মৃত্যু হয়েছে সরস্বতী নদীর।

সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামী ৩০ জুলাই ফের জীবন ফিরে পাচ্ছে ভারতে হারিয়ে যাওয়া নদী সরস্বতী। ভারতের হরিয়ানা সরকার মরে যাওয়া সরস্বতী নদীর বুকে জল পাঠিয়ে তাকে পুনর্জন্ম দিতে চলেছে।
 
৪ হাজার বছর আগে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যু হয়েছিল সরস্বতী নদীর। লক্ষাধিক বছরের পুরানো বেদ-এ এই নদীর উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কোনওদিনই দেখা মেলেনি সরস্বতী নদীর। ইতিহাসবিদদের মতে, ভারতীয় সভ্যতার বিকাশে সরস্বতী নদীর ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। এই নদীর তীরে বসবাসকারীরা মূলত ছিলেন লিঙ্গোপাসক। তাই পরে এদের ‘হিন্দু ধর্মালম্বী’ বলেই গণ্য করা হয়েছে। মহাভারত-এও উল্লেখ মেলে এই সরস্বতী নদীর। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধস্থলের কাছ দিয়েই নাকি প্রবাহিত ছিল সরস্বতী নদী।

তবে, সরস্বতী নদীর উৎসস্থল নিয়ে আজও ধোঁয়াশা আছে। একদল ইতিহাসবিদদের দাবি, সিন্ধু নদ ছিল এর উৎস। কিন্তু, আবার একদল ইতিহাসবিদদের দাবি, বর্তমানে হরিয়ানার আদি বদরিতে নাকি এর উৎস। চার হাজার বছর আগে সরস্বতী নদী নাকি হরিয়ানার যমুনানগর জেলার ৪১টি গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হত।

এমনকী, কুরুক্ষেত্রও নাকি ছিল সরস্বতী নদীর তীরে অবস্থিত। হর্ষবর্ধনের রাজধানী থানেশ্বরও নাকি ছিল সরস্বতী নদীর তীরবর্তী শহর। হরিয়ানা থেকে রাজস্থান হয়ে গুজরাটে নাকি শেষ হয়েছিল সরস্বতীর প্রবাহ।

ভারতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর জামানায় সরস্বতী নদীর গতিপথ খুঁজে বের করতে একটি কমিটি তৈরি হয়। কিন্তু, ইউপিএ সরকারের জামানায় এই প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসতেই ফের এই প্রকল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার কাজ শুরু হয়। প্রাচীন মরে যাওয়া সরস্বতী নদীর গতিপথ খুঁজে পাওয়াটা সহজ ছিল না।

ইসরো-র সাহায্যে উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে হরিয়ানার তিন জেলায় সরস্বতী নদীর সম্ভাব্য গতিপথকে চিহ্নিত করা হয়। এর পরেই সেখানে ড্রেজিং শুরু হয়। আদি বদরী নামক স্থানে মাটি খুঁড়তেই গলগল করে পানি বেরিয়ে আসতে থাকে। আপাতত ঠিক হয়েছে কুরুক্ষেত্র, যমুনানগর এবং কৈথাল জেলায় সরস্বতী নদীর যে গতিপথ উপগ্রহের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাকে পুনরুজ্জীবীত করা হবে। এর জন্য ৩০ জুলাই সরস্বতী নদীর ওই গতিপথে পানি ঢোকাবে হরিয়ানা সরকার।  

আশা করা হচ্ছে, বর্ষা থাকায় এই পানি আপাতত শুকোবে না। তবে, দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে দাদুপুর ফিডার ক্যানেলে একটি বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে। সেখান থেকে পানি নিয়ে আসা হবে এই সরস্বতী নদীতে।
 
আইআইটি’র শিক্ষক-ছাত্র থেকে শুরু করে ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরস্বতী নদীর পুনরুজ্জীবনে কাজ করছে। পরবর্তীকালে পুনর্জন্ম পাওয়া সরস্বতী নদীর তীর ধরে সৌন্দর্যায়নেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
যদিও, ৪ হাজার বছর আগে লুপ্ত হয়ে যাওয়া সরস্বতী নদীর পুনরুজ্জীবন প্রকল্পকে মোদি সরকার যেভাবে মান্যতা দিচ্ছে, তাতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

বলা হচ্ছে গঙ্গা-যমুনা এবং সরস্বতী নদীকে যেহেতু হিন্দু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ত্রিধারা হিসাবে ধরা হয়, তাই হিন্দুত্বের জিগিরকে জাগিয়ে তুলতেই কি সরস্বতী নদীর এই পুনরুজ্জীবন প্রকল্প— এই নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কারণ, খরা প্রবণতার মোকাবিলা বা মরুরাজ্য রাজস্থানের কোণে কোণে জল পৌঁছে দেওয়া যেখানে মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত, সেখানে প্রাকৃতিক কারণে হারিয়ে যাওয়া সরস্বতী নদীর পুনরুজ্জীবন প্রকল্প দেশের অর্থনীতিতে কতটা সহায়ক হবে, তাতে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

২২ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে