শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০১৬, ০৭:৫৭:৫৬

বাবা কোটিপতি, ছেলে ঘুরে পথে পথে!

 বাবা কোটিপতি, ছেলে ঘুরে পথে পথে!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : বাবা কোটিপতি আর ছেলে ঘুরে পথে পথে! এ যেন কল্পকাহিনী, কিন্তু বাস্তব।  আর বাস্তবতা শেখাতে ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন জীবনের কঠিন যুদ্ধে বাবা।  

এ কাজটিই করেছেন ভারতের গুজরাটের এক ধনী ব্যবসায়ী। জীবন যে কত কঠিন তা বোঝাতে সাধারণ জীবনযাপনের আদেশ দিয়ে কেরালায় পাঠিয়েছিলেন ছেলেকে।  ছেলেকে অভিনব শিক্ষা নিতেই এ উদ্যোগ নেন বিত্তশালী এই বাবা।

গুজরাটের হীরা ব্যবসায়ী সাবজি ঢোলাকিয়ার অনেক অর্থ সম্পদের মালিক।  সুরাটের এই ধনীর রয়েছে ৬ হাজার কোটি রুপির ব্যবসা।

এজন্য তাকে কম শ্রম দিতে হয়নি।  তবে সন্তান কি সেই শিক্ষা পেয়েছে- এমনটা উপলব্ধি করে ছেলে দ্রাভিয়া ঢোলাকিয়া নামের ২১ বছরের আদরের সন্তানকে পাঠিয়ে দেন কেরালায়।

লক্ষ্য এক মাস সেখানে সাধারণ মানুষের কাতারে কাজ করবে সে।  এজন্যে ছেলেকে পরার জন্য মাত্র তিনটি কাপড় এবং পকেটে মাত্র ৭ হাজার রূপি দিয়ে জীবনযুদ্ধে পাঠান তিনি।

শর্ত ছিল- এক মাস প্রয়োজন না হলে সেই অর্থও খরচ করতে পারবে না ছেলে।  এ সময়টুকু তাকে নিজের উপার্জনেই চলতে হবে।  তাই ২১ জুন কেরালায় পৌঁছেই ছেলে কাজ খোঁজা শুরু করে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএ করা দ্রাভিয়া ছুটিতে ভারতে আসে। বাবার আদেশে ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানতে পারে জীবনের কঠিন দিকগুলো।  

সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মালেই যে দুনিয়ার সব জয় করা যায় না, এমন বাস্তবতায় শিক্ষা পাওয়া বাবা তার ছেলেকে সেই শিক্ষাটাই দেন।  অবশ্য বিষয়টি গোপন রাখা হলেও তারই এক ঘনিষ্ঠের মাধ্যমে তা প্রকাশ হয়ে যায়।

ছেলেকে এমন শিক্ষাদানের বিষয়ে টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে সাবজি ঢোলাকিয়া জানান, তাকে আমি তিনটি শর্ত দিই।  এক. এই সময়টিতে তাকেই উপার্জন করে চলতে হবে।  তবে এক সপ্তাহের বেশি কোথাও কাজ করতে পারবে না।  

দুই. আমার পরিচয় কারো কাছে প্রকাশ করতে পারবে না।  এজন্যে কারো সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগও করতে পারবে না।  

তিন. এই এক মাস বিপদে না পড়লে আমার দেয়া সেই ৭ হাজার রূপিও সে খরচ করতে পারবে না।

শর্তারোপের বিষয়ে ঢোলাকিয়া বলেন, এর মাধ্যমে আমি ছেলেকে শেখাতে চেয়েছি যে গরিব ও ভাগ্যবঞ্চিতরা কত কষ্ট আর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে চাকরি করে ও উপার্জন করে থাকে।

দু'বছর আগেও অর্থাৎ ২০১৪ সালে ব্যতিক্রমী উদ্যোগের জন্য খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন ধনাঢ্য এই  হীরা ব্যবসায়ী।  কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাদের গাড়ি, ফ্ল্যাট এবং হীরা উপহার দিয়ে আলোচিত হন ‘হরে কৃষ্ণ ডায়মন্ড এক্সপোর্ট’-এর স্বত্বাধিকারী।

সে সময় প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ২শ’ ৬৮ জন কর্মচারীকে উপহারস্বরূপ গাড়ি, ফ্ল্যাট ও হীরা বেছে নিতে পরামর্শ দেন।  কর্মচারীদের কেউ তখন গাড়ি, কেউ ফ্ল্যাট আবার কেউ হীরা উপহার হিসেবে বেছে নেন।

সেবার তিনি কর্মচারীদের পছন্দমতো ৫ শতাধিক গাড়ি, ২ শতাধিক ফ্ল্যাট এবং হীরা বণ্টন করে দেন। এসময় তাদের বেতন বোনাসও বাড়িয়ে দেন ঢোলাকিয়া।

এদিকে পরীক্ষায় পাঠানো ছেলে দ্রাভিয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেন।  ভাষা ও স্থানের দিক থেকে তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় কোচিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।  ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে সংগ্রামী সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনাও দেন দ্রাভিয়া।

জানায়, প্রথম ৫ দিন কোচিতে কোনো কাজ জোটেনি। কেউ তাকে চিনতে না পারায় অন্তত ৬০টি জায়গায় ঘুরলেও কাজ মেলেনি।  বাধ্য হয়ে মিথ্যা পরিচয় দিতে হয়েছে।  

বলতে হয়েছে, তিনি গুজরাটের এক গরিব পরিবারের সন্তান।  যে কিনা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে।

এ ক'দিনের শিক্ষায় দ্রাভিয়া জেনেছে, প্রতিযোগিতার যুগে চাকরি পাওয়া যে কত কঠিন। আবার সাক্ষাৎকারের পর চাকরি না হলে কেমন কষ্ট হয়।

তবে চাকরি অবশ্য ঠিকই জোটে তার।  সবশেষ একটি বেকারিতে কাজ করে দ্রাভিয়া।  এর আগে একটি কল সেন্টারে, পরে জুতার দোকানে, এরপর ম্যাকডোনাল্ডে কাজ করেন তিনি।  

কষ্টের দিনগুলোতে খাবারে প্রতিদিন তার খরচ হয়েছে ৪০ রুপি।  থাকার জন্য রাত প্রতি আড়াইশ’ রুপি।  তবে এত কষ্টের পরও অভিজ্ঞতা জীবনের জন্য অনেক বড় করে দেখছেন দ্রাভিয়া।         
২২ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে