এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ক্যান্সার নিঃসন্দেহে এক মারণ রোগ। এই রোগের যন্ত্রণাও অসহনীয়। কিন্তু যারা নিজেরা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কিংবা আক্রান্ত হতে দেখেছেন কোনো নিকটজনকে তারা জানেন, এই রোগের চিকিৎসাপদ্ধতিটিও কম যন্ত্রণাদায়ক নয়। বিশেষত কেমোথেরাপি নামে ক্যান্সারের যে চিকিৎসাপদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে, তা ক্যান্সার আক্রান্তকে দীর্ঘ মেয়াদি আরাম দেয় ঠিকই, কিন্তু চিকিৎসা যতদিন চলে ততদিন কেমোথেরাপির ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কষ্ট সহ্য করতে হয় রোগীকে। প্রচন্ড বমি-ভাব, শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা কিংবা অপরিসীম ক্লান্তি সেরকমই কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
কিন্তু ক্যান্সারের কারণে কেমোথেরাপি প্রাপ্ত হন যারা তাদের মধ্যে এই চিকিৎসার সবচেয়ে কমন যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াটি দেখা দেয় তা হলো, মাথার চুল ঝরে যাওয়া। এই সমস্যায় যাদের পড়তে হয় তারা স্বভাবতই হীনমন্যতায় ভোগেন। ফলে সারা পৃথিবীতে যত জন পরচুলো বা উইগ কেনেন তাদের অধিকাংশই যে ক্যানসার রোগী তাতে আর আশ্চর্য কী!
এই ব্যাপারটাই ভাবিয়েছিল ব্যাঙ্গালোর অধিবাসী তরুণী শ্বেতা এলিসাকে। ক্যান্সারের যন্ত্রণা তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন কাছ থেকে। কয়েক বছর আগেই এলিসার এক নিকট বন্ধুর মৃত্যু হয়েছিল ক্যান্সারে। তাছাড়া এক বন্ধুর মা-ও ক্যান্সারে মারা যান গত বছর। রোগে জীর্ণ মানুষগুলো শারীরিক ক্ষয়ের কারণে কীভাবে আত্মপরিচয়হীনতায় ভুগছেন, তা উপলব্ধি করেছিলেন শ্বেতা। পরিণামে তিনি এক সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজের মাথা কামিয়ে একেবারে ন্যাড়া হয়ে যান। নিজের মাথার কেটে ফেলা চুল তিনি দান করে দেন ক্যান্সার রোগীদের জন্য পরচুলো বা উইগ বানানোর উদ্দেশ্যে।
কাজটা সহজ ছিল না। কারণ শুধু ভারত নয়, কমবেশি সারা পৃথিবীতেই মাথার চুলকে নারীর সৌন্দর্য ও তার আত্মপরিচয়ের অন্যতম উপাদান হিসেবে দেখা হয়। পেশায় চিত্রশিল্পী শ্বেতা এই গতানুগতিক চিন্তাভাবনাকেই বদলে ফেলতে চান। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লেখেন, ‘কোনো শিশু আমার চুলের মাধ্যমে তার হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে, এই আশাই আমাকে আমার সমস্ত চুল কেটে ফেলার প্রেরণা জোগায়।’ পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, ‘আমি চাই, যারা ক্যানসারে ভুগছেন, তারা আরো বলিষ্ঠভাবে তাদের লড়াইটা লড়়ুন। আমি গোটা দুনিয়াকে বদলাতে পারি না নিশ্চয়ই, কিন্তু কোনো মানুষের সামাজিক পরিচয়টুকু তো বদলাতে পারি। আমার কাছে সেটা অনেক বেশি মূল্যবান।’
আর শ্বেতার পারিবারিক সদস্যরা? তারা কী বলছেন মেয়ের এহেন সিদ্ধান্তে। সংবাদমাধ্যমকে শ্বেতা জানান, তার পরিবারের পুরো সমর্থন রয়েছে শ্বেতার প্রতি। ‘তারা আমার জন্য গর্বিত। মূলত তাদের কথা ভেবেই আমি আমার নেড়া মাথার ছবি ইন্টারনেটে শেয়ার করেছি, যাতে তারা নিজেদের বন্ধুদের আমার ছবি দেখাতে পারেন’, বলেন শ্বেতা।
কিন্তু অন্যদের হারানো পরিচয় ফিরিয়ে দিতে গিয়ে কোনোভাবে কি হারিয়ে যাচ্ছে না শ্বেতার নিজের পরিচয়? শ্বেতা বলছেন, ‘না, কারণ আমার কাছে আমায় নিয়ে লোকে কী ভাবছে সেটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমি জানি, একজন ক্যান্সার রোগীর যন্ত্রণা আমার এই সামান্য কষ্টের তুলনায় অনেক বেশি।’
সত্যিই সাহসী মেয়ে শ্বেতা। প্রথা ভাঙার সাহস তার রয়েছে। ক্যান্সার রোগীদের জন্য সমবেদনা তো বোধ করি আমরা অনেকেই, কিন্তু তাদের জন্য এতখানি স্বার্থত্যাগ করতে পারেন ক’জন!-এবেলা
২৭ জুলাই, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই