এক্সক্লুসিভ ডেস্ক: এক হাসপাতাল থেকে বেরনোর সময়ে যিনি ৮৩ বছরের বৃদ্ধ ছিলেন, অন্য হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে তিনিই হয়ে গেলেন ৩৮ বছরের যুবক! ঘটনাটি এখানেই শেষ হয়নি, বদলে গিয়েছে সেই ব্যক্তির পদবিও। বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে।
এমনটি ঘটেছে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৮৩ বছরের কালু মাঝি-র উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পৌঁছে ৩৮ বছরের কালু নাথ হয়ে যাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি অব্যাহত। তা আরও বেড়েছে কালু নাথ নিঁখোজ হওয়ার পরে।
যে হাসপাতালে তিনি ভর্তি ছিলেন, সেই শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, তাঁরা বৃদ্ধকেই পাঠিয়েছিলেন। আর যে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল সেই মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, তাঁরা এক যুবককে পেয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে সেই যুবকই পরের দিন পালিয়ে যান। ফলে, সেই যুবককে পাওয়া যায়নি। আর বৃদ্ধ তো মাঝপথেই ‘যুবক’ হয়ে গিয়েছেন!
ঠিক কী হয়েছিল ঘটনাটি?
গত ৫ এপ্রিল নিউ জলপাইগুড়ির স্টেশনের কাছে একটি নালায় পড়ে থাকতে দেখা যায় বৃদ্ধকে। ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ একপাল যুবক নামহীন, গৃহহীন ওই বৃদ্ধকে ভর্তি করেন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে। জানা যায়, বৃদ্ধের বাঁ হাতটি ভাঙা। ওই যুবকদের এক জন শিলিগুড়ির বাসিন্দা অমিত সরকার জানান, সামান্য সুস্থ হয়ে সেই বৃদ্ধ নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন ‘কালু মাঝি’ বলে। জানিয়েছিলেন, বিহারের বক্তিয়ারপুরে বাড়ি। বয়স প্রায় ৮৩ বছর। অমিতবাবুর কথায়, ‘‘আমরা বিহারে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু, বৃদ্ধের বলে দেওয়া ঠিকানায় কাউকে পাওয়া যায়নি।’’
ওই যুবকদের দাবি, শিলিগুড়ির জেলা হাসপাতালে ভালই ছিলেন বৃদ্ধ। আস্তে আস্তে খেতে শুরু করেন। দুর্বল শরীরে জোর আসতে শুরু করে। ঠিক হয় বাঁ হাতে অস্ত্রোপচার করা হবে। সে কারণে তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করার কথাও হয়। যুবকদের এক জন, প্রমল বণিক, যিনি নিজের নাম-ঠিকানা দিয়ে ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে ভর্তি করান, ১৫ এপ্রিল শিলিগুড়ি হাসপাতালে বৃদ্ধকে দেখতে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁকে ১১ এপ্রিল স্থানান্তরিত করা হয়েছে মেডিক্যাল কলেজে। প্রমলরা ছোটেন সেখানে। সেই হাসপাতালে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না বৃদ্ধ কালু মাঝিকে। খোঁজখবর করার পরে জানা যায়, যুবক কালু নাথ ১১ তারিখ শিলিগুড়ির হাসপাতাল থেকে এসে ভর্তি হন এবং ১২ তারিখের পর থেকে তিনি বেপাত্তা। এই কালু নাথের ঠিকানা ও অভিভাবকের জায়গায় প্রমলেরই নাম লেখা।
কী করে এমনটা হল?
শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা যাঁকে স্থানান্তরিত করেছিলাম তাঁর নাম ছিল কালু মাঝি। বয়স ৮৩ বছর। এই সংক্রান্ত নথি আমাদের কাছে আছে।’’ মেডিক্যাল কলেজের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, ‘‘কালু মাঝি নামে কেউ আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হননি। কালু নাথ বলে একজন ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর বয়স, ৩৮ বছর।’’ এমন তো হতেই পারে ভুল বশত, বয়স ও পদবি ভুল লেখা হয়েছে? প্রশ্ন শুনে সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে যাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল তিনি আদপেই বৃদ্ধ নন। এক জন যুবক। এটুকু বোঝার ক্ষমতা আমার কর্মীদের রয়েছে।
অমিতবাবুরা এখন এই প্রশ্নটাই তুলছেন যে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে আধ ঘণ্টার দূরের মেডিক্যাল কলেজে যাওয়ার পথে কী করে এক ব্যক্তির নাম ও বয়স দু’টোই আচমকা বদলে গেল? এক জন বৃদ্ধ আধ ঘণ্টার রাস্তা পেরনোর সময়ে কী করে আচমকা যুবক হয়ে গেলেন? পুলিশ, প্রশাসন, হাসপাতাল ঘুরেও বৃদ্ধের নিরুদ্দেশের পিছনে কোনও গ্রহণযোগ্য কারণ খুঁজে না পেয়ে এই সেপ্টেম্বরে তাঁরা দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের। পুলিশকে বলে ওই বৃদ্ধকে খুঁজে বার দেওয়ার জন্য আদালতকে অনুরোধ করেছেন (হেবিয়াস কর্পাস করে) তাঁরা।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘শিলিগুড়ির ওই হাসপাতাল থেকে ওই বৃদ্ধকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ। কিছু তথ্য জোগাড়ের প্রক্রিয়া চলছে।’’
গোটা ঘটনার মধ্যে অন্য এক রহস্যেরও গন্ধ পেয়েছেন অমিতবাবুরা। শিলিগুড়ি থানায় কালু মাঝির নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ করার সময়ে তাঁরা তাই, মানবদেহের অঙ্গ নিয়ে ব্যবসা-চক্রের কথাও উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই এরকম অজ্ঞাতকুলশীল মানুষ এসে শিলিগুড়ির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। আর কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর নাম নিখোঁজের তালিকায় ঢুকে পড়েন। সব্যসাচীবাবু জানিয়েছেন, প্রতি মাসে গড়ে ২-৩ জন তো নিঁখোজ হয়ে যান হাসপাতাল থেকে।- সূত্র আনন্দ বাজার
২৯ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটি নিউজ২৪/আল-আমিন/এএস