রবিবার, ০৭ আগস্ট, ২০১৬, ১১:০৬:৩২

টানা ২৫ বছর অলিগলিতে, বিয়ের আগে পাত্রীর সঙ্গে চুক্তিপত্র!

টানা ২৫ বছর অলিগলিতে, বিয়ের আগে পাত্রীর সঙ্গে চুক্তিপত্র!

এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : জীবনে ২৫ বছর ধরে শহরের অলিগলি ঘুরে কুকুর ও বিড়ালদের সেবা করে নজির স্থাপন করেছেন মালদহের এক পশুপ্রেমী ব্যক্তি।  শহরের আনাচে কানাচে কান পাতলেই শোনা যায় তার নাম।  

পশুপ্রেমী হিসেবে মালদহ শহরে তার যথেষ্ট নাম ডাক রয়েছে।  রাস্তার কুকুর-বিড়ালদের রুটিন করে তিনি রোজ তিনবেলা খাওয়ানোসহ সেবা যত্ন করার জন্য জীবনের সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়েছেন।

পশুপ্রেমে ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য কোম্পানির ‘প্রমোশন’ পর্যন্ত নেননি। পশু সেবায় স্ত্রী যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারেন সে কারণে রীতিমতো চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে তবেই বিয়ে করেছেন ইনি।

এমন পশুপ্রেমী মানুষ আধুনিক ফেসবুক-টুইটারে খুঁজে পাওয়াও দুস্কর৷ তার এই মহানুভবতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে জেলার আপামর বাসিন্দা।

তার নাম রাজা মজুমদার।  বয়স ৪৫ বছর।  তিনি মালদহের ইংরেজবাজার শহরের দু-নম্বর গভ. কলোনির বাসিন্দা।  পেশায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ।  

স্ত্রীর নাম মৌসুমী মজুমদার।  তাদের একমাত্র মেয়ে দীপিকাকে দুবছর আগে বিয়ে দিয়েছেন।  এখন স্বামী ও স্ত্রী দুজনে মিলে থাকেন।  কিন্তু রাজাবাবু মানতে নারাজ যে, তারা এখন পরিবারে দুজন।

তার কথায় কুকুর-বিড়ালদের নিয়ে তার পরিবারের সদস্য প্রচুর।  রাজা বাবু প্রতিদিন রুটিন করে দু-নম্বর গভ. কলোনিসহ গৌররোড এলাকার সমস্ত কুকুর বিড়ালদের তিনবেলা খাওয়ার দেন ঘুরে ঘুরে।

কখনো হাতে বড় বালতি আবার কখনো বড় হাড়ি করে খাওয়ার নিয়ে প্রতিদিন তিনবেলা ঘুরতে দেখা যায়।  সকালে ব্রেকফাস্টে বিস্কুট আর জল।  

দুপুরে ভাতসহ তরি-তরকারি।  রাতে থাকে মাছের ঝোল আর ভাত।  সপ্তাহে একদিন রোববার থাকে মাংস-ভাত।  সপ্তাহে একদিন ডিম ভাত।

আলাদা  করে এদের জন্য খাবার তৈরি হয় না৷ বাড়িতে নিজেদের রান্নার সঙ্গেই এদের রান্না করা হয়৷ শীত, গ্রীস্ম, বর্ষা একদিনও বাদ যায় না তার সেবা।  

সময়টাও অদ্ভুত ব্রেকফাস্ট সকাল ১০টা, লাঞ্চ দুপুর ৩ টা ও ডিনার রাত দেড়টা।  এটাই রাজবাবুর কুকুর-বিড়ালদের সেবা করতে বেড়ানোর সময়।

বাড়িতে কোনো সুখবর এলে মিষ্টি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন এই পশুপ্রেমী ব্যক্তি।  শুধু এটাই নয় বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসব দুর্গাপূজা।  এ পূজার চারদিন রাস্তার কুকুর-বিড়ালদের জন্য বরাদ্দ থাকে খাসির মাংস ভাত।  

কখনো স্ত্রী আবার কখনো নিজেই রান্না সেরে ফেলেন। এসবের মাঝেই রাজা বাবু ব্যক্তিগত কাজ সারেন। তার এ ব্যাপারে কোনও ক্লান্তি কিংবা ঘৃণা নেই।  রাস্তার জীবজন্তুর সেবা করেই মনের শান্তি পান তিনি।

খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কুকুর-বিড়ালদের জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে প্রতিনিয়ত গর্ভনিরোধক পিলও খাওয়ান।  পশুদের অসুখ বা আঘাত পেলে নিজেই চিকিৎসা করেন৷

নিজের খরচেই ২৫ বছর ধরে এ মহান কাজ করে চলেছেন রাজা মজুমদার।  প্রচারবিমুখ এ ব্যক্তি কোনোদিনই নিজের প্রচার চাননি।  বিয়ের পর মধু চন্দ্রিমাতেও কোথাও যাননি।  
 
তার কারণ বিল্টু, ভুবলা, লম্বু, নেংরু, ভুচকু, আদরি, ফুলু, সুন্দরীরাও খেতে পাবে না।  এলাকার কোনো কুকুর-বিড়ালের মৃত্যু হলে শোকের ছায়া নেমে আসে মজুমদার পরিবারে।

লালু নামে এক কুকুরের মৃত্যু হওয়ায় দুদিন অভুক্ত ছিলেন রাজা বাবু ও তার স্ত্রী।  আত্মীয়-স্বজনের অনুরোধে উপোস ভাঙেন।

এমন পশুপ্রেমী মানুষ আজকালকার দিনে প্রায় চোখেই পড়েনা।  যে যুগে প্রায় সবাই নিজের ঘর গোছাতে তৎপর।  সেই জায়গায় রাজা মজুমদারের মতো পশুপ্রেমী মানুষ এ মহানুভবতার কারণে যথেষ্ট প্রশংসার দাবি রাখে।।

লাজুক প্রকৃতির রাজা বাবু বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আমি রাস্তার ছেলেমেয়েদের খাওয়াই।  তাদের সেবা সুশ্রুষা করি।  এরাই আমার ছেলেমেয়ে।  খরচের কথা ভাবি না।  

যতদিন বাঁচবো এটা চালিয়ে যাব।।  আমি প্রচার চাই না।  নিঃশব্দে তাদের সেবা করতে চাই, যাদের কথা কেউ ভাবে না।  আমার এ উদ্যোগে আমার স্ত্রী যথেষ্ট সহযোগিতা করে।  সে আমার সঙ্গে থেকে আমার মতোই সেবা করে।
৭ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে