জমির বেগ, ফেনী থেকে : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় দেড় বছর বাকি থাকলেও নির্বাচন সামনে রেখে ফেনীর তিনটি সংসদীয় (২৬৭, ২৬৮, ২৬৯) আসনে শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। বিএনপির ঘাঁটি বলে খ্যাত ফেনীতে এখন আওয়ামী লীগের আধিপত্য।
শুধু সংসদ নির্বাচনেই নয়, স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এ জেলা থেকে নির্বাচন করে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তাই বিএনপির উৎসাহ একটু বেশিই। তবে আওয়ামী লীগও এ জেলায় শক্ত ঘাঁটি করতে মরিয়া। এরই মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ সংসদীয় এলাকায় ধর্মীয়সহ সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নিজেদের একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন।
বিশেষ করে বিগত রমজান ও ঈদুল ফিতর ঘিরে ছিল নানামুখী তৎপরতা। অনেকেই কোরবানি ঈদ ঘিরেও আগাম শুভেচ্ছাবার্তা দিয়ে পোস্টার সাঁটিয়েছেন। ব্যানার, পোস্টারসহ নানাভাবে চলছে প্রচারণা। সাম্প্রতিক সময়ে বন্যাকে ঘিরেও প্রার্থীদের দেখা যায় উপদ্রুত এলাকায়। প্রধান দুই দলেই রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। ভোটাররা বলছেন, এ জেলায় কার্যত লড়াই হবে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের।
ফেনী-১ (পরশুরাম-ফুলগাজী-ছাগলনাইয়া) এ আসন থেকে নির্বাচন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি প্রধানের পক্ষে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নানা দিবসকে ঘিরে বেগম জিয়ার শুভেচ্ছাবার্তাও সাঁটানো হয়। কোনো কারণে খালেদা জিয়া নির্বাচন না করলে পরশুরাম পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র আবু তালেব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
অবশ্য নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা বেগম জিয়াই এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম আসবেন? দলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তাব তাকে ঘিরে। জেলা আওয়ামী লীগ ফেনী-১ ও ২ আসনের যে কোনো একটিতে তাকে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিলেও গতবার তিনি সম্মত হননি। ২০১৪ সালে তিনি নির্বাচন করেননি।
তবে এবার তিনি নির্বাচন না করলে কে প্রার্থী হবেন—তা নির্ভর করছে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সমর্থনের ওপর। বর্তমানে এ আসনের এমপি জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল বাশার তপন ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাটের নামও শোনা যাচ্ছে।
ফেনী ২ (সদর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। দলের নেতা-কর্মীদের কাছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। এরই মধ্যে তিনি নির্বাচনের মাঠ গুছিয়ে একাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। স্থানীয় দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশা, একাদশেও দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পাবেন নিজাম হাজারী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি জয়নাল আবেদিন হাজারী, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাহেদ রেজা শিমুলও মনোনয়ন চাইবেন।
অন্যদিকে বিএনপি থেকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন (ভিপি) মনোনয়ন চাইবেন। দলের প্রার্থী তালিকায় শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সাবেক এমপি রেহানা আক্তার রানুও। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন মিস্টার ও জেলা যুবদলের সভাপতি গাজী হাবিব উল্যাহ মানিকের নামও শোনা যাচ্ছে।
ফেনী-৩ (সোনাগাজী ও দাগনভূঞা) : এ আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এ নিয়ে কেন্দ্র ও তৃণমূলে ব্যাপক প্রচারণা রয়েছে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন।
এছাড়াও আসেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শিল্পপতি আকরাম হোসেন হুমায়ুন, সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম শাহীন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, সাংস্কৃতিক কর্মী রোকেয়া প্রাচী এবং দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন।
বর্তমান ‘স্বতন্ত্র’ সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্যাহও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু নির্বাচন করবেন বলেই এলাকায় নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। তবে তিনি কোনো কারণে নির্বাচন না করলে প্রার্থী হতে পারেন তার ছেলে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আউয়াল।
এ ছাড়াও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ জনি, মাবরুল হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) নাসির উদ্দিন, সোলেমান ভূঞার নামও শোনা যাচ্ছে। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে মাঠে রয়েছেন। বিডি প্রতিদিন
এমটিনিউজ/এসবি