ভোটের আগেই ৩৩ কাউন্সিলর!
ফেনী : ভোটের আগেই ৩৩ জন কাউন্সিলর হয়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন জমার শেষ দিন পর্যন্ত ফেনীর তিনটি পৌরসভার সাধারণ ও সংরক্ষিত মিলে ৪৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৩ ওয়ার্ডে মাত্র একজন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এজন্য কমিশনের যাচাই-বাছাই পর্বে তাদের কেউ বাদ না পড়লে ফেনী সদর, পরশুরাম ও দাগনভূঞা পৌরসভার ওই ৩৩টি ওয়ার্ডে তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এদের প্রায় সবাই ক্ষমাতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী।
এ অবস্থার জন্য সরকারি দলকে দায়ী করে ফেনী জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু তাহের বলেন, বিএনপি-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের হুমকি ও ভয়ভীতির মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
এ কারণে ওই ৩৩টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তবে বিএনপির এই অভিযোগকে নাকচ করে দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান, ‘বিএপির নেতাকর্মীররা কেন মনোনয়নপত্র জমা দেননি, সেটি তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
তিনি জানান, যেসব ওয়ার্ডে একক প্রার্থী রয়েছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং দল-সমর্থিত প্রার্থী।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাওয়া ৩৩ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ২৫ জন সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ৮ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর।
এর মধ্যে ফেনী পৌরসভায় ২৪টি কাউন্সিলর পদের মধ্যে ১৬টিতে, পরশুরাম পৌরসভায় ১২টির মধ্যে ১০টিতে এবং দাগনভূঞা পৌরসভায় ১২টির মধ্যে সাতটিতে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ফেনী পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, ফেনী পৌরসভার ১৮টি সাধারণ কাউন্সিলর পদের মধ্যে ১২টিতে এবং ছয়টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের মধ্যে চারটিতে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বলেন, ‘একটি পৌরসভার ১৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার মানে, এরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হবেন। এটি অবিশ্বাস্য। এ বিষয়ে আজ নির্বাচন কমিশনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ফেনী পৌরসভার ১৬টি ওয়ার্ডে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ডে আশ্রাফুল আলম, ২ নম্বর ওয়ার্ডে লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কোহিনুর আলম, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে মজিবুর রহমান ভূঞা, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে জয়নাল আবদীন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাহার মিয়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিরাজুল ইসলাম, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ মাহতাব উদ্দিন, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে গোলাম মেহেদী আলম চৌধুরী, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে মো. নজরুল ইসলাম, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবু ইউসুফ ভূঞা, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে মো. মানিক।
এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলর পদে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সাহেদা আক্তার চাপা; ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে জেসমিন আক্তার; ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সেলিনা চৌধুরী এবং ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আমেনা মজুমদার।
এদিকে, দাগনভূঞা পৌরসভায় নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডের চারটিতে এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের মধ্যে তিনটিতেই একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
তারা হলেন- ২ নম্বর ওয়ার্ডে সাইফুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মনিরুজ্জমান সবুজ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মোহাম্মদ হানিফ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মহিউদ্দিন জুয়েল।
আর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মারজাহান হোসেন, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সাহনাজ আক্তার এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জাহানারা বেগম।
পরশুরাম পৌরসভায় ১২টি কাউন্সিলর পদের মধ্যে নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডের প্রতিটিতে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- ১ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আবদুল মান্নান, ২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নেতা খোরশেদ আলম, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু তাহের, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক কামাল উদ্দিন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাসুল আহাম্মদ মজুমদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু সাহাদাত চৌধুরী।
এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে একটি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
৪ ডিসেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ